ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কাজী জাফরুল্লাহ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
আ. লীগে শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কাজী জাফরুল্লাহ

ঢাকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাবশালী এবং দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করে জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি ফরিদপুরের (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর) স্থানীয় রাজনীতিতেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

কাজী জাফরুল্লাহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের (জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয় এই ফোরাম থেকে) একজন প্রভাশালী সদস্য। দীর্ঘদিন তিনি দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ফোরামেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এছাড়া দলের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি প্রভাবশালী নীতির্ধারকের ভূমিকা পালন করে থাকেন।

কাজী জাফরুল্লাহ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠ নেতাদের মধ্যে অন্যতম। দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও সভাপতি শেখ হাসিনা তার সঙ্গে পরামর্শ ও মতামত নিয়ে থাকেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ওপর সে আস্থা রাখেন। কাজী জাফরুল্লাহও রাজনৈতিক ও ব্যক্তি জীবনে তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সেই আস্থা অক্ষুণ্ন রেখে চলেছেন। সভাপতির দেওয়া দলের যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কাজ বিশ্বস্ততার সঙ্গে তিনি পালন করে চলেছেন।

জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি তিনি ফরিদপুর-৪ আসনে দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও নিয়মিত সক্রিয়। ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত এবং দলের স্থানীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।

কাজী জাফরউল্লাহ ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তৎকালীন ফরিদপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে এই আসনটিকে ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, চরভদ্রাসন ও সদরপুর) আসন করা হয়েছে। এই আসনে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কাজী জাফরুল্লাহ ন্ত্রী নিলুফার জাফরুল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।  

কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “আমিসহ এই আসনে আমার পরিবার থেকে ৭ বার এমপি হয়েছে। ”

এদিকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দশম ও একাদশ নির্বাচনেও কাজী জাফরুল্লাহ এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশ নেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে দুইবারই মজিবুর রাহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, এই আসনে নিক্সন চৌধুরী নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে একটা টানাপড়েন ও সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের অভিযোগ, নিক্সন চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী না হলেও তিনি বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য, এই প্রচারণা দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রভাবিত করছেন। এতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে অনেকেই গ্রুপিং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে। এটা শুধু ফরিদপুর-৪ আসনেই নয়, গোটা ফরিদপুর জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রভাব পড়েছে। দলের স্বাভাবিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে গত ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসনে উপজেলা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী)। তার সে বক্তব্য নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন বলে অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

মামলায় বলা হয়, ১০ অক্টোবর চরভদ্রাসন উপজেলা উপনির্বাচনের পরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তিনি আপত্তিজনক মন্তব্য করেন।  

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ, মামলা হয়েছে কেন, এসব আমি জানি না। আমি আমার অবস্থান থেকে দলের কাজ করে যাচ্ছি। এলাকার নেতাকর্মী, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। ”

কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, “আমাদের বিরোধিতা তিনি (নিক্সন চৌধুরী) সব সময় করে থাকেন। নিক্সন প্রচার করে বেড়ান যে তিনি বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার খালা। এ কারণে প্রশাসনের লোকজনও তাকে ভয় পায়। তিনি বলে বেড়ান, আমি যা করি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে করি। তাকে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, এটাও তিনি বলে বেড়ান। এখন ফরিদপুরের রাজনীতি তার দখলে। তার লোকজন বলে বেড়াচ্ছে, তাকে দলের বড় কোনো দায়িত্ব দেওয়া হবে বলে সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে (নিক্সনকে) জানিয়েছেন। ”

বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
এসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।