রাজশাহী: আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর কখনও বিএনপি ক্ষমতায় আসবে না। বরং বিএনপি নামের দলটিই এক সময় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কটূক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে রাজশাহীতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) বিকেলে রাজশাহী মহানগরীর বাটার মোড় এলাকায় জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, যাদের জন্ম খুনের মধ্য দিয়ে, রক্তের মধ্যে দিয়ে, যাদের চেতনার মধ্যে রক্ত, তারাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। জিয়াউর রহমান শুধু বঙ্গবন্ধু খুনের সঙ্গেই নয়, কারাগারের অভ্যন্তরে জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা দেশের যে উন্নয়ন করেছেন, তা দেখে এখন দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পক্ষে। আর এই কারণে বিএনপির মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আর এসব দেখে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি বিষেদাগার করছেন। তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।
স্বপন বলেন, শেখ হাসিনাকে এর আগে ২১ বার হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা তাকে রক্ষা করেছেন। তাই আমরা শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকিকে বিচলিত নই। বিএনপি পূর্বের ন্যায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা করছে। কিন্তু জনগণ আমাদের পাশে আছেন। বিএনপির এসব অপতৎপরতার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়ত জোট সারাদেশে কী করেছে তা দেশের জনগণ জানেন। আপনারা সারাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। আপনার (মিনু) দলের নেতাকর্মীরা সে সময় সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছে। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়েছেন। কিন্তু আপনারা সফল হননি।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
লিটন বলেন, বিএনপি সমাবেশ করতে চেয়েছিল। সরকার মনে করেছে কথা বলার অধিকার আছে, সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু আমরা দেখলাম কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয় না। ছেড়ে দিলেই কয়েল হয়ে যায়। আর কয়লা ধুলে ময়লা যায় না। বিএনপি আসলে কোন দলই না। রাজনৈতিক শিষ্টাচার থাকলে তারা এভাবে কথা বলতে পারতেন না। বিএনপি নেতা মিনুকে উদ্দেশ্য করে লিটন বলেন, ‘আপনি প্রধানমন্ত্রীকে ‘তুমি’ করে কথা বলেন। ভাগ্য ভাল আপনার জিহ্বাটা ছিঁড়ে ফেলা হয়নি। আমরা সেটা পারি। ’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার সমাবেশ পরিচালনা করেন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন এমপি, লায়েব উদ্দিন লাবলু, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শাহীন আক্তার রেনী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল, অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, সাংগঠনিক সম্পাদক আসলাম সরকার, মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমন প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
এর আগে গত ২ মার্চ বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে আরেকটি ১৫ আগস্ট ঘটানোর ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। এই বক্তব্যের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগ মিনুকে ক্ষমা চাইতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। নইলে মামলা করারও ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। আল্টিমেটামের ৭২ ঘণ্টা পর মিনু গণমাধ্যমে ই-মেইল বার্তায় একটি বিবৃতি পাঠিয়ে নিজের বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে সাবেক এই মেয়র ক্ষমা চাননি। ক্ষমা না চাওয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মিনুসহ চার নেতার বিরুদ্ধে আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া বিকেলে এই প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলো।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২১
এসএস/এমআরএ