ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রোজিনা ইসলামকে কেন্দ্র করে শুনলাম সব সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এই ঐক্য কতক্ষণ টিকবে? সাগর-রুনির ব্যাপারেও দেখেছিলাম দু’পক্ষ এক হয়ে রাস্তায় নেমেছিল।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে বিএনপি আয়োজিত ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্র, শৃঙ্খলিত গণমাধ্যম: মুক্তির পথ কী’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, রোজিনা ইসলামের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সামগ্রিক বাংলাদেশের চেহারার একটি অংশ। তিনিই একমাত্র ভিকটিম নন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক সাংবাদিকদের ওপরে অত্যাচার নির্যাতন নেমে এসেছে। সংবাদপত্রের ওপর অত্যাচার নির্যাতন নেমে এসেছে। সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের বিদেশে চলে যেতে হয়েছে। এমনকি হত্যাও করা হয়েছে। রোজিনা ইসলামকে বাহবা জানাই তিনি অনেক ঝুঁকি নিয়ে অনেক তথ্য প্রকাশ করেছেন। আজকে তার ওপর নির্যাতনের পরও নতি স্বীকার করেননি, তিনি বলেছেন আমার ওপর অন্যায় করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। সেটি হলো এখানে এমন একটা সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের কোনো বক্তব্য থাকবে না। ভিন্নমত পোষণ করার উপায় থাকবে না। তথাকথিত উন্নয়নের নামে লুটপাট ডাকাতি চালিয়ে যেতে থাকবে। প্রথমেই তারা সংবিধান কেটে ছিঁড়ে তাদের মতো করে নিয়েছে। গণমাধ্যমে তাদের দুর্নীতিগুলো যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য গণমাধ্যমের ওপর আঘাত করেছে। আমরা দেখেছি, মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, রুহুল আমীন গাজী, সংগ্রামের সম্পাদককে কিভাবে নির্যাতিত কারারুদ্ধ করা হয়েছে। আজকে একদিকে যেমন সংবাদপত্রের ওপর আঘাত আসছে তেমনি যারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলে তাদের ওপরও আঘাত আসছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আওয়ামী লীগের মতো একটি দল যাদের একসময় জনগণের ভিত্তি ছিল, জনগণের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন, তাদের কাছে এখন জনগণ কেউ নয়। তারা জনগণের পাশেও নেই। তারা এখন কাজী জেবুন্নেসার মতো আমলা, অথবা পুলিশ র্যাব সম্প্রদায়কে নিয়ে তাদের টিকে থাকতে হচ্ছে। এটা একদিকে যেমন লজ্জার, আরেকদিকে ভীতিরও বটে। আজকে ফ্যাসিবাদ ভীতি ছড়িয়ে সমগ্র দেশকে অন্ধকারের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সেই ফ্যাসিবাদীদের পতন ঘটাতে হবে। আজ সংগ্রাম আন্দোলন এবং মুখোমুখি হওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প পথ নেই।
খালেদা জিয়া কখনও আপোস করেননি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরাতো কখনও সংবাদপত্রগুলোকে সোচ্চার হতে দেখিনি যে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। কেন হয়নি হয়তোবা ধরে নিয়েছেন আমার ওপরে এখনও আসেনি। এখন আপনাদের ওপরে এসেছে। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানও বাদ পড়েননি। হত্যা মামলা হয়েছে। মাহফুজ আনামের মতো সম্পাদককেও ১২৫টা মামলা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়। ফ্যাসিজম যখন আসে, কেউ রক্ষা পায় না। এটাই বাস্তবতা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আরও বক্তব্য দেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিউইউজের একাংশের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই সিকদার, ডিউইউজের একাংশের বর্তমান সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২১
এমএইচ/এমআরএ