ঢাকা: দলীয় নেতাদের দাবির এক সপ্তাহের মধ্যে আইনি সহায়তা সেল গঠন করেছে বিএনপি। দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারকে এই সেলের প্রধান করা হয়েছে।
জানা গেছে, সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আইনজীবী নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদার বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তায় জানানো হয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের মিডিয়া কাভারেজ হবে না। সেজন্য সাংবাদিকদের সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়।
তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২১, ২২, ২৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে তারেক রহমান যে বৈঠক করেছেন, সেই বৈঠকে দল সমর্থক আইনজীবীদের বিরুদ্ধে কেউ কেউ বক্তব্য দেন। তাদের মতে বিগত দিনে যেসব নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়েছেন তাদের আইনি সহায়তা দেয়নি দলীয় আইনজীবীরা। আবার কেউ কেউ সহায়তা দিলেও তাদের কাছ থেকে সম্মানী নিয়েছেন। মূলত এই বক্তব্যের পরই আইনজীবীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করলেন তারেক রহমান। যদিও আইনজীবীরা দলীয় নেতাদের ওই বক্তব্যের বিরোধীতা করেছেন। তারা বলেছেন, ১২ বছর ধরে দল ক্ষমতার বাইরে। এ সময় হাজার হাজার মামলায় তারা দলীয় নেতাকর্মীদের পক্ষে বিনা পয়সায় লড়েছেন।
সূত্র জানায়, গত ২০১৩ ও ২০১৫ সালে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে অন্তত ৪০টি মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় চলতি মাস থেকেই পর্যায়ক্রমে রায় ঘোষণাও হতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি নেতারা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে নির্বাচন প্রতিরোধে সর্বাত্মক আন্দোলন করে বিএনপি। এর এক বছর পর ২০১৫ সালে সরকারের বছরপূর্তিতে বিএনপি লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলন চলাকালে নানা ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বিস্ফোরণ ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়। দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্যমতে গত ১২ বছরে লক্ষাধিক মামলায় দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সামনে সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের নেতাদের অযোগ্য করতে নেতাকর্মীদের সাজা দিতে চায় সরকার। এ উদ্দেশে নির্বাচনের দুই বছর আগে থেকে সরকার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তৎপর হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আইনজীবীদের মতামত ও করণীয় ঠিক করতে সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা বার শাখার নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকীর নেতৃত্বে এ বৈঠকে আইনজীবীরা অংশ নেন।
এছাড়াও ঢাকা বারের আইনজীবীদের মধ্যে বৈঠকে আরও অংশ নেন মহসিন মিয়া, খোরশেদ আলম মিয়া, ইকবাল হোসেন, খোরশেদ আলম, গোলাম মোস্তফা, জিল্লুর রহমান, হোসেন আলী খান হাসান, এম হেলাল উদ্দিন, আব্দুল খালেক মিলন, আবুল কালাম, নুরুজ্জামান তপন, নজরুল ইসলাম, খোন্দকার মো. হযরত আলী, দেলোয়ার জাহান রুমী, আজিজুল ইসলাম খান বাচ্চু, জহির রায়হান জসীম, আমিরুল ইসলাম আমির, খন্দকার ইকবাল হোসেন সেলিম, মাহমুদউল্লাহ জুয়েল, আবুল কালাম, জিয়া উদ্দিন জিয়া,নাজমুল হকসহ ৪০ জন আইনজীবী।
সন্ধ্যা ৭টায় পরিচয় পর্বের মধ্যদিয়ে এই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া আইনজীবীরা জানান, বৈঠকে মূলত নিম্ন আদালতে রাজনৈতিক উদ্দেশে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা যেসব মামলায় ট্রায়াল চলছে অথবা চার্জশিট হয়েছে সেসব মামলা সুচারুভাবে পরিচালনা করতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃত্বে একটি আইনি সহায়তা সেল গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের কাছ থেকে মামলার আদ্যোপান্ত সংগ্রহ করে সেলের কাছে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা বারের আইনজীবী ফোরামের প্রধান মাসুদ আহম্মেদ তালুকদারকে আগামী চারদিনের মধ্যে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। দলীয় ফোরামে বিচার বিশ্লেষণ করে কোন মামলায় কোন সিনিয়র আইনজীবীকে কাজে লাগানো যায় তা নির্ধারণ করে দেবে দল। দলীয় নেতাদের এসব মামলা আইনজীবী নেতারা বিনা পয়সায় লড়বেন বলে দলের কাছে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বাংলানিউজকে বলেন, বৈঠক হয়েছে তবে মিডিয়ায় জানানোর বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১২১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১
এমএইচ/এমআরএ