ঢাকা: সরকারের বিরুদ্ধে একই কর্মসূচি নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে একমত হয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জাতীয় দল ও পিপলস লীগ।
রোববার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দল দুটির নেতাদের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠক করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান।
পরে সাংবাদিকদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে এবং গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। এ ক্ষমতা দখলের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে, রাজনীতিকে সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে এই সরকার বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে নির্বাসিত করেছে। আমরা মনে করি এই সরকারকে সরিয়ে দেওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আমরা জনতার একটা ঐক্য গড়ে তুলতে চাই। সেলক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। অনেকগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি। আরও বলবো। আমরা বিশ্বাস করি রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি সবার একটা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মধ্যে দিয়ে আমরা এই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পরাজিত করে সত্যিকার অর্থে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবো। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে (রোববার) দুটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা ছিল। একটি বাংলাদেশ জাতীয় দল যার চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা তার দল নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আর একটি দল পিপলস লীগ। তার প্রধান অ্যাডভোকেট গরীব নেওয়াজ তার দল নিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা কয়েকটা বিষয়ে একমত হয়েছি। বিষয়গুলো হলো এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তাদের মাধ্যমে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য সংসদ এবং সরকার গঠন করতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানসহ সব নেতাকর্মীর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যে একমত হয়ে যুগপৎভাবে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা বলেন, আমরা আজকে বিএনপির সঙ্গে চলমান সংলাপের অংশ হিসেবে আলোচনা করেছি। বিএনপির মহাসচিব যে কথাগুলো বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, সংসদ বিলুপ্ত, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন সর্বোপরি দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নির্বাসিত জীবন থেকে তাকে ফিরিয়ে আনা। এসব ব্যাপারে আমরা যুগপৎ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বাংলাদেশ জাতীয় দল সেই আন্দোলনে সর্বাত্মকভাবে শরিক থাকবে।
এ সময় জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম ও পিপলস লীগের মহাসচিব সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদসহ দলের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ মে শুরু করে এ নিয়ে ২০ দলীয় জোটের মোট ১২টি দল তথা ইসলামী ঐক্যজোট, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ইসলামিক পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), লেবার পার্টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ-ভাসানী, মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) এর সঙ্গে সংলাপ শেষ করলো বিএনপি।
অপর দিকে ২০ দলীয় জোটের বাইরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনের সঙ্গেও সংলাপ করেছে বিএনপি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২২
এমএইচ/আরআইএস