ঢাকা, শনিবার, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩ মহররম ১৪৪৭

প্রবাসে বাংলাদেশ

জার্মানিতে দক্ষ কর্মী সংকট, ভাষা জানলে সুযোগ আছে বাংলাদেশিদেরও

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৩, জুলাই ১৮, ২০২৫
জার্মানিতে দক্ষ কর্মী সংকট, ভাষা জানলে সুযোগ আছে বাংলাদেশিদেরও জার্মানিতে দক্ষ কর্মী সংকট, ছবি: সংগৃহীত

জার্মানির শ্রমবাজারে আগামী বছরগুলোতে দক্ষ জনশক্তির মারাত্মক সংকট দেখা দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছে দেশটির প্রভাবশালী গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইভি (ইনস্টিটিউট অব জার্মান ইকোনমি)।

সংস্থাটির জুলাই মাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৮ সালের মধ্যে পুরো জার্মানিতে প্রায় ৭ লাখ ৬৮ হাজারটি পদে পর্যাপ্ত যোগ্য কর্মী সংকট দেখা দিতে পারে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় বেশি।

গত বছর জার্মানিতে গড়ে ৪ লাখ ৮৭ হাজারটি পদ শূন্য ছিল।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সংকটের প্রধান কারণ জনসংখ্যার বার্ধক্যজনিত প্রভাব। গবেষণা দলের সদস্য ইউরিক টাইডেমান বলেন, ‘দেশের নির্দিষ্ট কিছু পেশার চাকরিজীবীদের একটি বড় অংশ দ্রুত অবসরে যাবেন। যদি আমরা এখনই এসব শূন্যপদ পূরণ না করতে পারি, তবে তা ভবিষ্যতে জনজীবনে তীব্রভাবে প্রভাব ফেলবে। ’

জার্মানির এই কর্মী সংকটে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মীদেরও চাকরির সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন জার্মান একাডেমি, ঢাকার পরিচালক শরিফুল ইসলাম সজিব। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন সময় চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারক চক্র মানুষজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। আসলে জার্মানিতে প্রয়োজন দক্ষকর্মী যারা সাবলীলভাবে জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারেন। যারা দক্ষতার পাশাপাশি জার্মান ভাষাতেও সাবলীল তারাই কেবল এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।  

বেশি প্রয়োজন বিক্রয়কর্মী
গবেষণায় দেখা গেছে, জার্মানিতে বিক্রয়কর্মী, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষিকা, বয়স্কদের পরিচর্যাকারী, নার্স ও সমাজকর্মীসহ অনেক পেশায়ই কর্মী সংকট। তবে সবচেয়ে বড় ঘাটতি দেখা দিতে পারে বিক্রয়কর্মীদের পেশায়। এই পেশায় ২০২৪ সালে কর্মী ঘাটতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ হাজার ৯০০ জন, যা ২০২৮ সালে তা বেড়ে হতে পারে ৪০ হাজার ৪৭০ জন। কারণ তরুণদের মধ্যে বিক্রয় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ কমছে।

সংকটে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শিশুদের শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের ঘাটতি। প্রতিবেদনে ২০২৮ সালের মধ্যে ৩০ হাজার ৮০০টি শূন্য পদে কর্মী পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরপর রয়েছে সমাজকর্মী পেশাতে ২১ হাজার ১৫০ জন ও নার্সিং পেশাতে ২১ হাজার ৩৫০ জন।

আইটি খাতেও ঘাটতি থাকবে
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জার্মানিতে আইটি খাতে প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান বাড়লেও তা প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট হবে না। শিশু যত্ন ও শিক্ষা খাতে ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪০০ জন নতুন কর্মী নিয়োগ সম্ভব হলেও আইটি খাতের পূর্ণ চাহিদা মেটানো যাবে না। আইটি পেশায় ২৬ শতাংশ কর্মসংস্থান বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে ডিজিটাইজেশন, নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠা ও বৈশ্বিক বাজার সম্প্রসারণের কথা বলা হয়েছে।

ব্যাংক ও শিল্প শ্রমিক সংকট
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বড় কর্মীর সংকট দেখা দিতে পারে ধাতু সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানায়। ধাতু সংশ্লিষ্ট শিল্পকারখানায় ২০২৮ সালের মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার ২০০ জন দক্ষ কর্মী অবসরে যাবেন। এই শিল্পে তরুণদের আগ্রহ কম থাকায় নতুন প্রশিক্ষিত জনশক্তির অভাব রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতে প্রায় ৫৬ হাজার ৩০০ জন কর্মীর সংখ্যা কমে যেতে পারে।

গবেষক টিডেমান ব্যাংক খাতে অবসরজনিত সমস্যার চেয়ে অটোমেশনের কারণে ব্যাংকগুলোতে নিয়োগ কমে যাচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাত দ্রুত অটোমেশন হচ্ছে। শাখা অফিস বন্ধ হচ্ছে, কাউন্টার সার্ভিসও কমে আসছে। ফলে কর্মীর প্রয়োজনও কমে যাচ্ছে। ’

আইভির গবেষকরা এই সংকট মোকাবিলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পেশাভিত্তিক পড়াশোনার দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের জন্য ভিসা সহজতর করার কথা বলা হয়েছে। নারী ও বয়স্কদের শ্রমবাজারে দীর্ঘসময় অন্তর্ভুক্তিকরণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  নারীদের জন্য  শিশু ও বয়স্ক যত্নসেবার পেশাগুলোতে আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।  জার্মানির কর্মসংস্থান সংস্থার প্রধান আন্দ্রেয়া নাহলেস জানিয়েছেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে মাত্র ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারে। খণ্ডকালীন কর্মীদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা বাড়িয়ে দক্ষ কর্মী সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে।

অভিবাসন ও মানবাধিকারকর্মী আইনজীবী মাহবুব বিন মালেক বাংলানিউজকে বলেন, প্রায়ই জার্মানির কর্মী সংকটের কথা বলে প্রতারক চক্র বিভিন্ন জনকে জার্মানিতে পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়ে থাকে। জার্মানিতে ভাষা না জানা থাকলে চাকরি পাওয়া খুব কঠিন। ইংরেজিতে পড়াশোনা করা যায়, কিন্তু চাকরি পাওয়া অনেকটা ভাগ্য। তাই জার্মানির কর্মী সংকট মানেই যেনতেনভাবে দেশটিতে যাওয়া যাবে ব্যাপারটা এমন নয়, বরং ভাষা জানা থাকলে দেশটিতে অনেক বেশি সুযোগ রয়েছে।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।