ঢাকা, শনিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৭ সফর ১৪৪৭

প্রবাসে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ ‘নিরাপদ’ দেশ নয়, অভিবাসন ইস্যুতে ইইউ আদালত

সাগর আনোয়ার, জার্মানি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৮, আগস্ট ২, ২০২৫
বাংলাদেশ ‘নিরাপদ’ দেশ নয়, অভিবাসন ইস্যুতে ইইউ আদালত ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিস

ইতালিতে চালু হতে যাওয়া নতুন শরণার্থী নীতি ইউরোপীয় আদালতের রায়ে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়েছে। রায়ে বাংলাদেশ সম্পূর্ণ ‘নিরাপদ দেশ’ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইউরোপে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া শরণার্থীদের মধ্যে যারা ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে এসেছেন, তাদের আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। কিন্তু কোনো পরিস্থিতিতে একটি দেশকে নিরাপদ হিসেবে ঘোষণা করা যায়, এ বিষয়ে শুক্রবার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে ইউরোপীয় ন্যায়বিচার আদালত (ইসিজে)। যা এখন পুরো ইউরোপে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

প্রসঙ্গত, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির আলোচিত অভিবাসী প্রকল্প ‘আলবেনিয়া মডেল’। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া চেয়েছিলেন রাজনৈতিক আশ্রয় প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রিত ও কঠোর করতে। এজন্য আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীদের ইতালির পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশ আলবেনিয়ার আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়। এজন্য মিলিয়ন ইউরো খরচ করে আলবেনিয়ার শেংজিন ও গ্যাদার বন্দরে তৈরি হয় আশ্রয় প্রকল্প। সেখান থেকেই ২৮ দিনের মধ্যে দ্রুত প্রক্রিয়ায় আশ্রয় আবেদন নিষ্পত্তির কথা ছিল। যাদের আবেদন গ্রহণ করা হবে তারা ইতালিতে আসবে আর যাদের আবেদন প্রত্যাখাত হবে তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

ইতালির দাবি ছিল বাংলাদেশ ‘নিরাপদ দেশ’

ইউরোপের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইতালির এই প্রকল্পের ভিত্তি ছিল, যেসব শরণার্থী ‘নিরাপদ দেশ’ থেকে ইতালিতে আসেন, তারা সাধারণত আশ্রয়ের যোগ্য নন। তাই দ্রুত প্রক্রিয়ায় তাদের আবেদন নিষ্পত্তি আইনসঙ্গত।  এর আওতায় ইতালি প্রথমেই বাংলাদেশ ও মিশরকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করে। এবং এই দুই দেশ থেকে আগত পুরুষদের আশ্রয় আবেদন দ্রুত খারিজ করে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতালির দুই বাংলাদেশি শরণার্থী আদালতে মামলা করেন। রোমের আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন এবং বলেন, বাংলাদেশ ও মিশরকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা সঠিক নয়। ইতালির সরকার আপিল করলে, এরপর আদালত বিষয়টি ইউরোপীয় বিচার আদালতে পাঠায়।

ইউরোপীয় বিচার আদালতের রায়

শুক্রবার (১ আগস্ট) ইউরোপীয় বিচার আদালতের মতে, একটি দেশকে ‘নিরাপদ’ বলা যাবে না, যদি সেখানে কিছু নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী—যেমন সমকামী, নারী, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী নির্যাতনের মুখোমুখি হয়। সব নাগরিকের সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে দেশটিকে নিরাপদ বলা যাবে না। রায়ে আরও জানানো হয়, সদস্য রাষ্ট্রগুলো চাইলে তাদের নিজস্ব নিরাপদ দেশের তালিকা করতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে কোন তথ্যসূত্রের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ করতে হবে। এতে আবেদনকারীরা আপত্তি জানাতে পারে এবং জাতীয় আদালতও এই সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে পারে।

ইতালি ও জার্মানির প্রতিক্রিয়া

প্রধানমন্ত্রী মেলোনি ইউরোপীয় আদালতের রায়ের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, আদালত তার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছেন। তিনি জানান, ইইউ-এর নতুন রাজনৈতিক আশ্রয় ও অভিবাসন নীতি সংস্কার বাস্তবায়নের আগেই ইতালি বিকল্প আইনি ও প্রযুক্তিগত পথ খুঁজবে। এদিকে, ইউরোপের অন্য দেশগুলোও ইতালির মডেল অনুসরণে আগ্রহী ছিল। জার্মানির চ্যান্সেলর  ফ্রিডরিখ মার্স এ বছরের মে মাসে এই উদ্যোগকে সমর্থন করেছিলেন।

বাংলাদেশিদের জন্য বার্তা

এই রায় বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোমের আদালতের পর্যবেক্ষণ এবং ইউরোপীয় আদালতের রায় স্পষ্ট করে দিয়েছে, বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ দেশ’ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। আদালত বলেছে, কোনো দেশ তখনই ‘নিরাপদ’ বলা যাবে, যদি সেখানে সব মানুষ সমানভাবে সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দেশে সমকামী, নারী, রাজনৈতিক বিরোধী বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ঝুঁকি রয়েছে। ফলে যারা বাংলাদেশ থেকে আশ্রয় প্রার্থী হিসেবে ইউরোপে আসছেন, তাদের জন্য আশার কিছু আলোর রেখা তৈরি হয়েছে।

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।