ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৯ মহররম ১৪৪৭

প্রবাসে বাংলাদেশ

বার্লিন থেকে জাহিদুর রহমান

বিদেশি সতীনেও কষ্ট নেই, আছে সুখ!

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:০৭, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
বিদেশি সতীনেও কষ্ট নেই, আছে সুখ! ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বার্লিন (জার্মানি) থেকে: ইউরোপে বিশেষ করে জার্মানিতে যারা সপরিবারে থাকেন, তাদের অনেক গৃহবধূরই রয়েছে ভিনদেশি সতীন!

বাঙালি নারীদের ক্ষেত্রে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে- ‘স্বামীকে বাঘের মুখে দিতে পারে, তবে কোনো ক্রমেই সতীনের ঘরে নয়’!

তাহলে এমন সতীন নিয়ে প্রবাসে কেমন আছেন বাংলাদেশি নারীরা, সেই কৌতূহল থেকে বাংলানিউজ মুখোমুখি হয় ভিনদেশি সতীন থাকা প্রবাসী নারীদের।

তবে এসব গৃহবধূদের প্রতিক্রিয়া জেনে রীতিমতো ভিরমি খেতে হয়।


না, ভিনদেশি সতীন নিয়ে কষ্ট তো দূরের কথা। উল্টো নিজেদের আরো সুখী বললেন এসব নারী।

কিন্তু কিভাবে! বার্লিনে থাকেন আব্দুল গনি সরকার ও নাসিমা সরকার দম্পতি। দু’জনই নাগরিকত্ব পেয়েছেন জার্মানির। বাংলানিউজের কাছে অকপটে বললেন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা।

আব্দুল গনি সরকার বাংলানিউজকে জানান, জার্মানিতে নাগরিকত্ব পাওয়া, চাট্টিখানি কথা নয়! অনেককেই চুক্তিতে বয়সে বড় কিংবা ছোট কোনো জার্মান নাগরিককে বিয়ে করতে হয়।

চুক্তিতে বিয়ে করার পরে একসঙ্গে না থাকলেও, বছর পাঁচেক ওই নারীর যাবতীয় খরচ দিতে হয়। গুনতে হয় ১৫ থেকে ৪০, কখনও কখনও ৫০ হাজার ইউরো পর্যন্ত।

দেখা যায়, কয়েক বছরের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যায় এর পেছনে।
অনেকে আবার এক সাথে থাকেন। সেই সংসার নিয়েও দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, অভিজ্ঞতা সুখের হয় না।

যেমন বার্লিনের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী আকুল মিয়া। দীর্ঘদিন দাম্পত্য জীবনে ৫টি সন্তানের বাবা হলেও অভিজ্ঞতা সুখের হয়নি। তবে হওয়ার মধ্যে হয়েছে জার্মান পাসপোর্ট।

অনেকে আবার জার্মান পাসপোর্ট দিয়ে নতুন করে দেশ থেকে বিয়ে করে নিয়ে আসেন বাঙালি নারী। আব্দুল গনি সরকারও তাই করেছেন।

কুমিল্লা জেলার হোমনার হাজী তোতা মিয়া সরকারের ছেলে আব্দুল গনি সরকার ভাগ্য অন্বেষণে পাড়ি জমান জার্মানিতে। ১৯৯৬ সালে প্রথমে তিনি আসেন পর্যটক ভিসা নিয়ে। পরে রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ। নাগরিকত্ব পেতে জার্মান নাগরিককে বিয়ে করেন তিনি। আসলে বিয়ে বলতে ওইটুকুই। সবই কাগজে কলমে। মাঝে কেবল মোটা অংকের অর্থ খরচ।

তবে সরকারকে কেবল অর্থ দিয়েই নয়, টানা ৫টি বছর ওই নারীর ভরণ-পোষণ দিতে হয়েছে তাকে। সব পাকা করে ২০০২ সালে একই থানার রামকৃষ্ণপুরের মেয়ে নাসিমা সরকারকে বিয়ে করেন তিনি।
নানা আনুষ্ঠানিকতা ও কাগজপত্র তৈরি করে ২০০৫ সালে স্ত্রী নাসিমা সরকারকে নিয়ে আসেন জার্মানিতে। স্বামীর সুবাদে জার্মান পাসপোর্ট পেতে অসুবিধা হয়নি নাসিমার। তবে তাকে এদেশের নাগরিকত্ব পেতে শিখতে হয়েছে জার্মান ভাষা।

এই দম্পতির সন্তান নাদিয়া সরকার (৭) ও নিশাত সরকার (৫) জন্মসূত্রে জার্মান নাগরিক। পড়ে স্থানীয় স্কুলে। মুখে জার্মান ভাষা। তবে বাড়িতে শেখানো হচ্ছে বাবা-মায়ের মাতৃভাষা।

নাসিমা সরকার বাংলানিউজকে জানান, স্বামীর বিদেশি বউ ছিলো। বিষয়টি জেনে কষ্ট হয়নি, এমন নয়। তবে জার্মানিতে আসার পর দেখেছি, আসলে নাগরিকত্ব পেতেই অনেকে এভাবে বিয়ে করেন। বিদেশি সতীনের বিষয়টি এখানে কোনো কষ্টের নয়। বলতে পারেন সুখের। স্বামী-সন্তান নিয়ে স্বপ্নের দেশ ইউরোপে আছি। এটাই বা কম কি! অনেক ভালো আছি আমরা। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।

 

** ডিশ ওয়াশার থেকে ২ রেস্টুরেন্টের মালিক আকুল মিয়া
**জার্মানিতে বিয়ে বা দত্তক- এতে যায় কষ্টের বহু অর্থ
**পেট্রোলপাম্পেও নিজের কাজ নিজে করো নীতি

**সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে

**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’

** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!
** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি

** নিজেই মুমূর্ষু জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস


বাংলাদেশ সময়: ০১০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
এটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।