ঢাকা, সোমবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০০ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

নারী কমিশনের কঠোর সমালোচনায় মামুনুল হক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ৬:০১ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
নারী কমিশনের কঠোর সমালোচনায় মামুনুল হক বক্তব্য দিচ্ছেন মাওলানা মামুনুল হক

অন্তর্বর্তী সরকারের নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার কঠোর সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক।  

তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রস্তাবনায় ধর্মীয় উত্তরাধিকার ও পারিবারিক আইনকে বৈষম্যের কারণ বলা হয়েছে, যা সরাসরি কোরআন ও ইসলাম অবমাননার শামিল।

রোববার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সিরাজগঞ্জ শহরের মাসুমপুর খেলার মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস জেলা শাখার গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বলেছে, ‘ধর্মীয় উত্তরাধিকার আইন বৈষম্যের কারণ। ’ অথচ আল্লাহর কোরআন বৈষম্য দূর করে ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য নাজিল হয়েছে। কমিশনের ওই মন্তব্য কেবল কোরআন নয়, পুরো ইসলামের অবমাননা। তারা বাংলাদেশে ধর্মীয় বিধানের পরিবর্তে অভিন্ন পারিবারিক আইন চালু করে আন্তধর্মীয় বিবাহের পথ সুগম করতে চায়।

মামুনুল হক বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনে যারা এমন প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তারা তসলিমা নাসরিনের (ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা) দোসর। এ ধরনের কটাক্ষের অপরাধে তাদের বিচার করতে হবে। যদি অবিলম্বে কমিশন বাতিল করা না হয়, তাহলে আল-কোরআনের সৈনিকরা রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সংবিধান সংস্কার নিয়ে সতর্কবার্তা
গণসমাবেশে সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গেও মামুনুল হক বলেন, বর্তমানে সংবিধান সংস্কারের নামে বহুত্ববাদ প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশ বহুত্ববাদী রাষ্ট্র হতে পারে না। এ দেশ হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.)-এর বাংলাদেশ। এখানে সংবিধানে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।

তিনি অভিযোগ করেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান ভারতের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তৈরি হয়েছিল।  

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিল্লি গিয়ে ইন্দিরা গান্ধীর (ভারতের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনায় সংবিধান রচনা করেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারতের চরণে সমর্পণ করা হয়—বলেও মন্তব্য করেন মামুনুল হক।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে হুঁশিয়ারি
আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অতীতের পাঁচটি গণহত্যার অভিযোগ এনে মামুনুল হক বলেন, প্রায় ৩ হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের রাজনীতিতে পুনর্বাসনের সুযোগ দেওয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বিএনপি ও জামায়াতের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি দলীয় স্বার্থে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করেন, তবে দলমত নির্বিশেষে আপনাদের বিরুদ্ধেও গণঐক্য গড়ে তোলা হবে।  

অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন ও সতর্কতা
মামুনুল হক বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত ভালো কাজ করছে, তবে কোরআন ও ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে নিজেরাই আত্মঘাতী হবে।  

তিনি বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় যেসব ভয়ংকর ধারা উপস্থাপিত হয়েছে, তা কোনো ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়েও দেখা যায়নি। ইসলাম ও ধর্মীয় বিধানের প্রতি যে আঘাত এসেছে—তা মেনে নেওয়া হবে না।

গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন— বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি শরাফত হুসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা এবং কেন্দ্রীয় বায়তুল মাল সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান।  

সভায় সভাপতিত্ব করেন সিরাজগঞ্জ জেলা সভাপতি মুফতি আব্দুর রউফ এবং সঞ্চালনা করেন জেলা সাধারণ সম্পাদক মুফতি আহমাদুল্লাহ সিরাজী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এসআরএস

বাংলাদেশ সময়: ৬:০১ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ /

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।