ঢাকা, রবিবার, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

হাসপাতালগুলোতে এন্টিভেনম নেই, সাপের ছোবলে ২ সপ্তাহে ৫ জনের মৃত্যু 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:২৪, আগস্ট ১০, ২০২৫
হাসপাতালগুলোতে এন্টিভেনম নেই, সাপের ছোবলে ২ সপ্তাহে ৫ জনের মৃত্যু  সাপে কাটা রোগী

ছেলেকে সাপে ছোবল দেওয়ার পর দুই জেলার চার হাসপাতালে নিয়েও বাঁচাতে পারেননি এক বাবা। হাসপাতাগুলোতে এন্টিভেনম না থাকায় ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যর্থ বাবার যেন দুঃখের শেষ নেই।

 

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত এলাকা বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামের ইসরাইল উদ্দীন। তার ছোট ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র সাকিবুল ইসলামকে শুক্রবার রাতে বিষধর সাপ কাটে। চিকিৎসার জন্য চার হাসপাতালে গিয়েও পাননি সাপের বিষমুক্ত করার ভ্যাকসিন। পরে দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায় তার ছেলে।  

শনিবার বিকেলে জানাজা শেষে ছেলেকে দাফন করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর শোকে অসুস্থ মা। দুইদিন ধরে চিকিৎসা চলছে তার। শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো গ্রামে।  

ইসরাইল উদ্দীন বলেন, চারটা হাসপাতালে নিয়ে গেছি ছেলেকে। বালিয়াডাঙ্গী হাসপাতাল থেকে হরিপুর, এরপরে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল। সেখানেও ভ্যাকসিন না পেয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ হাসপাতাল নিয়ে গেলাম রাত তখন ১০টা বাজে। সেখানেও ভ্যাকসিন নেই, দিনাজপুর মেডিকেলে নেওয়ার পথে আমার ছেলে কোলে মারা গেছে। বাবা হয়ে ছেলেকে বাঁচাতে পারিনি। আর যেন কোনো বাবার বুক খালি না হয়। হাসপাতালগুলোতে সাপে কাটা রোগীকে সুস্থ করার ওষুধের ব্যবস্থার করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেন তিনি।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলছাত্র সাকিবুলের মতো ঠাকুরগাঁও জেলায় বিষধর সাপের ছোবলে গত দুই সপ্তাহে পীরগঞ্জের ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্র তারেক, রাণীশংকৈলের কলেজছাত্র মোকসেদ আলী, হরিপুরে গৃহবধূ সম্পা রানীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।  

মৃতদের স্বজনরা বলছেন, জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোতে সাপের বিষমুক্ত করার ভ্যাকসিন এন্টিভেনম না থাকায় মরতে হচ্ছে এসব রোগীদের।  

সম্পা রাণীর স্বামী জিতেন জানান, সকালে সাপে কাটার পর হরিপুর, রাণীশংকৈল এবং সবশেষ ঠাকুরগাঁও হাসপাতালে নিয়ে গেছি। কিন্তু ভ্যাকসিন পায়নি। নিরুপায় হয়ে ওঝার কাছে নিয়ে গেছি। সবশেষ স্ত্রীকে বাঁচাতে পারিনি। দেড় বছরের একটা ছোট বাচ্চাকে নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।  

স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক আজমুল হক জানান, বর্ষার সময়ে প্রতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১০-১৫টি এন্টিভেনম ভ্যাকসিনের চাহিদা পাঠায়। এরপরে যখন ভ্যাকসিন হাসপাতালে এসে পৌঁছায়, তখন বর্ষা শেষ। স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত ইউনিয়ন-উপজেলা ও জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে বর্ষার আগেই ভ্যাকসিন মজুদ রাখার। বলাতো যায় না কখন কি হয়।  

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন  ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, চাহিদা পাঠানোর পরও এন্টিভেনম দেয়নি। পরে কথা বলে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারেও এন্টিভেনম সংকট। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ে আসার।  

সাপের ছোবলে মৃত্যুর এই ধারাবাহিক ঘটনায় আতঙ্কিত জেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষ। চিকিৎসক ও সচেতন মহলের দাবি, এন্টিভেনমের সংকট নিরসনে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে একটি প্রাণও এমনভাবে ঝরে না যায়।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।