ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

আছিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:২৩, মে ১২, ২০২৫
আছিয়া ধর্ষণ-হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু

মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রথমদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে।  

সোমবার (১২ মে) সকাল ১০টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় শেষ হয়েছে।

সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামি পরীক্ষার শুনানি শেষ হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার আজকে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মামলার বিভিন্ন তথ্য ও প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আদালতে যুক্তি তুলে ধরেন। প্রথমদিন কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় আগামীকাল মঙ্গলবার (১৩ মে) আবারো যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়েছে।

এর আগে সকালেই মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিটু শেখসহ সব আসামিকে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে মাগুরায় আনা হয়।

চাঞ্চল্যকর আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মকুল বলেন, মাগুরার চাঞ্চল্যকর আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার যুক্তিতর্কের দিন ধার্য ছিল। আদালতে সকালে এই বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের উপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে।  

এই মামলায় মোট ২৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলাটিতে সাতটি জব্দ তালিকা ছিল। এই সাতটি জব্দ তালিকায় ১৬ জন সাক্ষী ছিল। যার মধ্যে ১২জন সাক্ষী হুজুরের আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণসহ সাক্ষ্য দিয়ে তাদের জব্দ তালিকাকে সত্যায়ন করেছেন।  এবং জব্দকৃত আলামতকে আদালতে সত্যায়ন করেছেন। এই মামলায় তিনটি মেডিকেল সার্টিফিকেট ছিল। পাঁচ ডাক্তার মেডিকেল সার্টিফিকেটে স্বাক্ষর করেছিলেন। তারা ইতোমধ্যে হুজুরের আদালতে সাক্ষী দিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেটকে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। এবং মেডিকেল সার্টিফিকেটে তারা তাদের স্বাক্ষর শনাক্ত করেছেন।

এই মামলায় একটি সুরতহাল রিপোর্ট ছিল। সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী এসআই আঞ্জুমান আরা এবং সুরতহালের তিন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন। সুরতহালে তাদের স্বাক্ষর তারা শনাক্ত করেছিলেন। এই মামলায় একটি পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছিল। যে রিপোর্টটিতে দুইজন ডাক্তার স্বাক্ষর করেছিলেন ঢাকা মেডিকেল ফরেনসিক বিভাগের, তারা হুজুরের আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সুরতহাল রিপোর্টকে সমর্থন করে হুবহু সমর্থন করে বক্তব্য দিয়ে তাদের সাক্ষীকে তারা সেখানে শনাক্ত করেছিলেন।

এই মামলায় রেকর্ডিং কর্মকর্তা, তদন্তকারী কর্মকর্তা, এই মামলার আসামি হিটু শেখের জবানবন্দি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা এবং একজন সাক্ষীর ১৬৪ ধারার লিপিবদ্ধ করে ম্যাজিস্ট্রেট বাবু সব্যসাচী রায়। তিনি  হুজুরের আদালতে ১৬৪ ধারাকে সমর্থন করেছেন। এছাড়া ১৬৪ ধারার সমস্ত স্বাক্ষরকে সমর্থন  করেছেন।

সর্বোপরি এ মামলায় ২৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়ে হুজুরের আদালতে  আসামি হিটু শেখের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত আইন ২০০৩ এর ৯ এর দুই ধারাকে  সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ রূপে সক্ষম হয়েছেন।

সাক্ষী হামিদাকে এতথ্য ফাঁস করলে খুন করা হবে বলে হুমকি দেন আসামি সজীব এবং রাতুল। সুনির্দিষ্টভাবে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিয়ে ৫০৬ এর দ্বিতীয় অংশের অপরাধকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ রূপে সক্ষম হয়েছেন।

এ মামলার আসামি জাহেদা যিনি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন করেছেন,  আছিয়াকে নির্যাতন করা হয়েছে সে কথা জানার পরও তিনি সেই কথাটি গোপন রেখে একটি নাটক সাজিয়ে আছিয়াকে জিনে ধরেছে তাকে হুজুরের কাছে নিতে হবে বলেছেন। তেল পানি পড়া দিতে হবে এই জন্য তিনি তাকে হুজুরের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। হুজুরকে তেল, পানি পড়া দিতে অনুরোধ করেছিলেন। সেটি বুমেরাং হয়েছে।  

দেলোয়ার  হুজুর তাকে বলেছেন এটা এখানে চিকিৎসা করার বিষয় নয় আপনি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। আসামি জাহেদা এই মামলার তথ্য গোপন করে দণ্ডবিধির ২০১ ধারা অপরাধকে সংঘঠন করেছেন। সাক্ষীরা সেই সংগঠিত অপরাধের সাক্ষ্য দিয়েছেন আদালতে।  

সাক্ষীরা এই মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ রূপে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন বিধায় আমরা হিটু শেখকে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধিত ২০০৩ এর ৯ এর দুই ধারা সর্বশেষ সাজা মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছি। আসামি সজীব ও রাতুল তাদের বিরুদ্ধে ৫০৬ এর দ্বিতীয় অংশের অভিযোগ সম্পূর্ণ রূপে প্রমাণিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ধরার সর্বোচ্চ সাজা আদালতে আমরা প্রার্থনা করেছি।

রমজানের ছুটিতে শহরের নিজনান্দুয়ালী এলাকায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত ৫ মার্চ রাতে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। বোনের শ্বশুর হিটু শেখ মেয়েটিকে শুধু ধর্ষণই করেননি, হত্যারও চেষ্টা চালিয়েছেন। এ ঘটনায় হিটু শেখকে প্রধান আসামি করে মামলা করেন মেয়েটির মা।

ঘটনার পর শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ফদিরপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে পাঠানো হয় ঢাকায়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৩ মার্চ সে মারা যায়।  

এ মামলায় আদালতে পুলিশের দাখিল করা চার্জশিটে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় হিটু শেখকে প্রধান অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শিশুটির বোনের স্বামী সজীব শেখ ও তার ভাই রাতুল শেখকে ভয়ভীতি দেখানো এবং বোনের শাশুড়ি জাহেদা বেগমকে তথ্য গোপনের অভিযোগে অভিভুক্ত করা হয়েছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।