কোরবানির পশুর জন্য দেশি গরুর অন্যতম উৎস জেলা হিসেবে দেশের মানুষজনের কাছে পাবনা একটি সুপরিচিত নাম। এই অঞ্চলের পশু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সরবরাহ হয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর পাশাপাশি এই জেলায় এমন অনেক খামারি আছেন, যারা বড় আকৃতির বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালনে বিশেষভাবে মনোযোগী।
তেমনই একজন হলেন পাবনা জেলা সদরের এম আর অ্যাগ্রো ফার্মের উদ্যোক্তা রাজু। তরুণ এই উদ্যোক্তা ও খামারির খামারে এবার দুটি গরু কোরবানির বাজারে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
খামারি রাজু আদর করে গরু দুটির নাম রেখেছেন— ‘পাবনার রাজা’ ও ‘পাবনার পাঠান’। বিশাল আকৃতির এই কোরবানির পশু দুটি দেখতে স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে, আর প্রতিদিনই অনেকেই ভিড় করছেন রাজুর খামারে এই গরু দুটি এক নজর দেখতে।
পাবনা জেলা সদরের গয়েশপুর ইউনিয়নের জালালপুর মণ্ডলপাড়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা খামারি মো. রাজু আহম্মেদ। শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে নিজ উদ্যোগে পশু পালন শুরু করেন।
২০১০ সালে তিন লাখ টাকা ব্যয় করে চারটি ষাঁড় দিয়ে এই খামারের যাত্রা শুরু করেন মো. রাজু আহম্মেদ। এখন জেলার বড় আকৃতির ষাঁড় লালন পালনে অন্যতম খামার এম আর অ্যাগ্রো ফার্ম। এই বছরে কোরবানির ঈদের জন্য ২৫টি গরু প্রস্তুত করেছিলেন রাজু। খামারের নামে করা অনলাইন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ১৭টি গরু বিক্রি করেছেন তিনি। এর মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টিকারী পাবনার পাঠান ও পাবনার রাজা নামে এই গরু দুটিও রয়েছে। গরু দুটি ঢাকার দুইজন ব্যবসায়ী কোরবানির জন্য ক্রয় করেছেন।
হলস্টিন ফ্রিজিয়ান ক্রস জাতের পাবনার রাজা নামে এই কালো গরুটি উচ্চতায় ৬৯ ইঞ্চি, লম্বায় সারে ১০ ফুট। ওজনে ১২শ কেজি যা মণ হিসাবে ৩০ মণের কাছাকাছি হবে। বয়সে প্রায় তিন বছরের কাছাকাছি এই গরুটি দুই দাঁতের। এই গরুটি খামারি তিন মাস আগে খুলনা অঞ্চল থেকে এনেছিলেন। এটি বিক্রি হয়েছে ১১ লাখ টাকায়।
পাঠান নামের পাকিস্তানি শাহীয়াল ফ্রিজিয়ান হলস্টিন মিশ্রন জাতের বিশাল আকৃতির গরুটিও বিক্রি হয়েছে ১০ লাখ টাকায়। লাইভ ওয়েটে সাড়ে ১১শ কেজি ওজনের এই গরুটি উচ্চতায় ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি। লম্বায় ১০ ফুট। ৮ দাঁতের এই গরুটির বয়স সাড়ে চার বছর। এই গরুটিও ঢাকার এক ব্যবসায়ী ক্রয় করেছেন। এই গরু প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬শ টাকার সমপরিমাণ খাবার খেয়ে থাকে। যা বছর হিসাবে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়।
খামারি উদ্যোক্তা এম আর অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী মো. রাজু আহম্মেদ বলেন, শিক্ষা জীবন শেষ করে চাকরির পিছে না ছুটে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেছি। আমার বাবার অনুপ্রেরণায় নিজের জায়গাতে একটি মাছের খামার করি। এরই সঙ্গে ২০১০ সালে স্বল্প কিছু মূলধন নিয়ে চারটি ছোট ষাঁড় কিনে খামার করি। এর পরে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিবছরই ৫০ থেকে ৬০টি ষাঁড় গরু আমার খামারে লালন পালন করছি। সারা বছর দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে সেরা জাতের গরু সংগ্রহ করি। এরপরে খামারে নিয়ে এসে আমাদের মতো করে তাকে খাইয়ে যত্ন করে বড় করি। প্রতি বছরই আমার খামারে বড় গরু থাকে।
আমার অনলাইন পেজ থেকে গরুর ছবি-ভিডিও এবং বর্ণনা দেখে ক্রেতারা সরাসরি কথা বলে খামারে আসেন দেখতে। যদি সেটি তাদের পছন্দ হয় তবে বিক্রি হয়। আমার গরু হাটে নিতে হয় না। এই বছরে খামারে বেশিরভাগ গরুই বড় আকৃতির। ২৫টি গরু মধ্যে ১৭টি ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এর মধ্যে দেশসেরা দুটি বিশাল আকৃতির গরু ২১ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। এই বছরে ব্যবসা ভালো যাবে না। তাই ধরে না রেখে বিক্রি করে দিয়েছি।
এই বছরে পাবনার রাজা ও পাবনার পাঠান শুধু এই জেলায় নয় সারা বাংলাদেশের মধ্যে সেরা হবে এটা আমার ধারণা। জেলাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই দেখতে আসছেন গরু দুটি। আগামী বছরের জন্য আবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আগামী বছরের মধ্যে একটি গাভির খামারও করার ইচ্ছা আছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. এ কে এস এম মুশাররফ হোসেন বলেন, এই জেলার মাটি. বায়ু. খাবার অত্যন্ত পুষ্টিসম্পন্ন। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ গ্রাম অঞ্চলগুলোতে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কোনো না কোনো পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরুই বেশি। এই বছরে বেশ কিছু বড় গরু জেলার বিভিন্ন স্থানে খামারিদের কাছে আছে। এর মধ্যে জেলা সদরের রাজুর খামারে বেশিরভাগ গরুই আকৃতিতে বেশ বড়। আর দুটি গরু অনেক বড়। তবে সে দুটি বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। তবে এখনো তার খামারে অনেক বড় গরু রয়েছে যেগুলো বিক্রি হবে।
জেলাতে যে পরিমাণ গবাদি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে সেটি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে সরবরাহ হবে। দেশি ভালো শংকর জাতের গরু অনেক রয়েছে। তাই এই বছরে কোবানির পশুর কোনো ঘাটতি হবে না পাবনা অঞ্চলে।
তবে পাঠান ও রাজা নামে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কোরবানির পশুর পাশাপাশি রাজুর খামারে আরও বেশ কিছু বড় গরু রয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকান বাহমা, শাহীয়াল ক্রস নেপালি ও দেশি শংকর জাতের গরু। কাছ থেকে দেখে অনেকেই বিশ্বাসই করতে চাইবে না এত বড় আকৃতির হয়ে থাকে এই গরুগুলোর।
জেলাতে এই বছরে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মিলে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ লাখ পশুর চাহিদা রয়েছে স্থানীয়দের। বাকি সাড়ে ৩ লাখ পশু সরবরাহ হবে সারাদেশে। জেলাতে ছোট বড় মিলে প্রায় ২৮ হাজার খামারি রয়েছে।
আরএ