খুলনা: মানবসভ্যতার ধারাবাহিকতা রক্ষা, উৎকর্ষ ও সমৃদ্ধি অর্জনে ঐতিহ্য-স্থাপনার বহুমাত্রিক গুরুত্ব রয়েছে। পুরাকীর্তি নিছক কোনো অবকাঠামো নয়, এর মধ্যে রয়েছে শতশত বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির অমূল্য উপাদন যা শিক্ষা-গবেষণারও গুরুত্বপূর্ণ টুলস।
আন্তর্জাতিক উদ্যোগে উত্তরাধিকার সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে শনিবার (১৭ মে) পর্যন্ত খুলনার স্থানীয় অভিজাত হোটেলে ‘ঐতিহাসিক মসজিদ নগরী বাগেরহাটে জলবায়ু ঝুঁকি’ মূল্যায়ন বিষয়ক তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনার ও কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে অনলাইলে যুক্ত থেকে সভপতিত্ব করেন প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক ড. ভিক্টোরিয়া হারম্যান। প্রধান অতিথি হিসেবে তিনদিনব্যাপী এ আন্তর্জাতিক সেমিনার ও কর্মশালার উদ্বোধন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. নূরুন্নবী।
তিনি বলেন, এটা একটা ভালো উদ্যোগ যে জলবায়ুগত পরিবর্তনে সৃষ্ট হুমকি থেকে ঐতিহ্য-স্থপানা সংরক্ষণে সর্বশেষ উদ্যোগ নিয়ে প্রিজার্ভিং লিগাসিস প্রকল্প কাজ করছে এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,শিক্ষার্থীসহ আরও অনেকেই এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। এটি সময়োপযোগী ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। বাগেরহাটের ষাটগুম্বুজ মসজিদ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এবং তা সমানভাবে পর্যটকদের কাছে সমৃদ্ধ। আমাদের দেশে আরও এ রকম স্থাপনা রয়েছে যা সংরক্ষণ য পরিচিতি লাভ করলে পর্যটন খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তা ছাড়া এসব স্থাপনা ইতিহাসের অমূল্য উপাদান। তিনি এ টিমের নির্বাহী পরিচালকসহ সমন্বয়কারী ও অন্যান্য সদস্যদের তার নিজের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাগেরহাট, ইউনেস্কো ঘোষিত একটি বিশ্বঐতিহ্য স্থান, যার অনন্য স্থাপত্য, ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে, তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অতিবর্ষণ, ঘূর্ণিঝড়, জলাবদ্ধতা এবং লবণাক্ততার বিস্তার। এখানকার স্থাপনাগুলো বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকিতে রয়েছে। এছাড়া দেশে দেশে যুদ্ধ সংঘাত, আধিপত্য এবং স্বার্থন্বেষী মহলের কারণেও বিশ্বঐতিহ্য ধংস হচ্ছে। এসব নেতিবাচক প্রভাব থেকে কীভাবে তা সংরক্ষণ করা যায় তা নিয়ে কাজ করা খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. শেখ সিরাজুল হাকিম এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আঞ্চলিক পরিচঅলক লাভলী ইয়াসমীন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্পের বাগেরহাট সাইট টিমের সমন্বয়কারী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. খন্দকার মাহফুজ উদ দারাইন ।
তিনি প্রকেল্পর অভীষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরেন এবং এরই মধ্যে সম্পাদিত কার্যক্রম উল্লেখ করেন। এছাড়া প্রকল্পের অবশিষ্ট সময়ের কর্মসূচিও উল্লেখ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উত্তরাধিকার সংরক্ষণ প্রকল্প এবং এর সিআরএ পদ্ধতির বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়। স্থানীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, গবেষক, এনজিও প্রতিনিধি, পুরাকীর্তি সংরক্ষণবিদ, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
শনিবার (১৭ মে) বিকেল ৪টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে সুপারিশমালা উপস্থাপন এবং অংশগ্রহণকারীদের ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করা হবে।
তিন দিনব্যাপী এ আয়োজনে মূলত ঐতিহাসিক বাগেরহাট শহরের জলবায়ু সংবেদনশীলতা, এক্সপোজার (প্রকাশিত ঝুঁকি) এবং অভিযোজন ক্ষমতা বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি সামগ্রিক জলবায়ু ঝুঁকি মূল্যায়ন সম্পাদন করা হবে।
তিনদিনের এই ইভেন্টটি অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে জলবায়ু অভিযোজন এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতিনির্ধারণে সহায়ক সুপারিশ প্রদান করবে।
এছাড়া এ কর্মশালার মাধ্যমে উত্তরাধিকার সংরক্ষণ প্রকল্প বাগেরহাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো জলবায়ু অভিযোজনমূলক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
এমআরএম/জেএইচ