ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

জুলাই যোদ্ধার অনুদান পেলেন যুবলীগ নেতা, তদন্ত কমিটি গঠন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:১৫, মে ১৯, ২০২৫
জুলাই যোদ্ধার অনুদান পেলেন যুবলীগ নেতা, তদন্ত কমিটি গঠন

খুলনা: খুলনায় মিনারুল ইসলাম নামের এক যুবলীগ নেতা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে অনুদান পেয়েছেন। গত ১৪ মে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ‘সি ক্যাটাগরিতে’ এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন তিনি।

তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে আহত হন তিনি। তার চেকপ্রাপ্তির ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় উঠে। এনিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা অনেকেই ক্ষোভ ঝাড়ছেন।

জানা যায়, গত বছরের (২০২৪) ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে নগরীর শহীদ হাদিস পার্ক এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে আহত হন মিনারুল ইসলাম। ওই সময় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা ও নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন গণপিটুনির শিকার হন। পরে তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হলে সরকার পরিবর্তনের পর কোনো এক রাতে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের সহায়তায় ‘মরদেহ’ বলে বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো হদিস মেলেনি।

এদিকে, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্র-জনতার হাত থেকে রক্ষায় লাফিয়ে পড়ে আহত হন ওই যুবলীগ নেতা।

খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সূত্র বলছে, আহত জুলাই যোদ্ধা সি ক্যাটাগরিতে খুলনায় ৬৩ জনের নামে চেক এসেছে। তাদের মধ্যে ৫০ জন এক লাখ টাকা করে চেক নিয়েছেন। গত ১৪ মে খুলনার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন মিনারুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মন্ডল বলেন, উপজেলা পর্যায়ে আবেদন করলে পুলিশ, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি, হাসপাতালসহ বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। পরে জেলা কমিটির সভায় আরেক দফা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মিনারুল নামের ব্যক্তি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তার আবেদন যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করে চেক খুলনায় পাঠানো হয়েছে। এ জন্য তার আবেদনের বিষয়ে খুলনায় কোনো তথ্য নেই।

এদিকে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে আহত তেরখাদার যুবলীগ নেতা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে এক লাখ টাকা অনুদান পাওয়ার ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমারকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার (১৮ মে) রাতে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।  

তিনি বলেন, শিগগরিই অনুদান ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমিটির সদস্যরা হলেন, পুলিশ সুপার ও  সিভিল সার্জন, খুলনার প্রতিনিধি, তেরখাদার ইউএনও, দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা)। সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, গত বছর ২৩ অক্টোবর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত ছাত্র-জনতা যাচা -বাছাই সংক্রান্ত জেলা কমিটিতে বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ হতে প্রাপ্ত ২০৯ জনের তালিকা উপস্থাপিত হয়। উক্ত তালিকার ১৩ নং ক্রমিকে মিনারুল ইসলাম (২৪) আন্দোলন চলাকালীন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন মর্মে উল্লেখ পাওয়া যায়। খুলনা মেডিকেল কর্তৃপক্ষও চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে। পরে সংশ্লিষ্ট  মন্ত্রণালয় থেকে আহতদের নামে প্রাপ্ত চেক যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অন্যান্যদের সঙ্গে মিনারুল ইসলামকেও প্রদান করা হয়।

এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।