ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৩ জুন ২০২৫, ০৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বনজীবীরা

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:২৬, জুন ১, ২০২৫
জীবন-জীবিকা নিয়ে দুশ্চিন্তায় বনজীবীরা নদীর পাড়ে নৌকায় জেলেরা।

সাতক্ষীরা: সুন্দরবনে প্রবেশে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে আজ থেকে রোববার (১ জুন)। বন বিভাগ জানিয়েছে, ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট সুন্দরবনের প্রাণী ও মাছের প্রজননকাল, এজন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ সুরক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধের পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশ ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকবে। দেওয়া হবে না কোনো পাস-পারমিট। ইতোমধ্যে বিষয়টি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন জনপদে মাইকে প্রচারের মাধ্যমে স্থানীয় বনজীবীদের অবগত করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞাকালীন কর্মহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় পড়েছেন বনজীবীরা। আগামী তিন মাস কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় তারা।

বনজীবীরা বলছেন, সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই তাদের সংসার চলে। তিন মাস সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় করা টাকাও নেই। বন্ধের দিনগুলোয় তাদের জন্য সরকারি যে সহায়তা দেওয়া হয়, তা চাহিদার তুলনায় সামান্য।

বনজীবীদের অভিযোগ, প্রকৃত বনজীবীরা সরকারি বরাদ্দ পায় না।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতায় বুড়িগোয়ালিনী, কদমতলা, কৈখালী ও কোবাদক স্টেশন রয়েছে। আর এসব স্টেশনের আওতায় দুই হাজার নয়শ’টি নৌকার সুন্দরবনে প্রবেশের বিএলসি (বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট) রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, শ্যামনগরে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২৩ হাজার ৯২৮ জন। নিষেধাজ্ঞার সময় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সরকারি সহায়তার চাল পাবে আট হাজার ৩২৪ জন। জেলেদের তিন মাসের জন্য দুই ধাপে ৭৭ কেজি চাল দেওয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সুন্দরবনে ওপর নির্ভরশীল পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি বনজীবী ও ট্রলারচালক বেকার হয়ে পড়বে। এ কারণে খাদ্য সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সুন্দরবনসংলগ্ন বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের নীলডুমুর এলাকার বনজীবী মাসুম বিল্লাহ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না। মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কোনমতে বেঁচে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না।  
বুড়িগোয়ালিনীর দাঁতিনাখালী গ্রামে জেলে খালেকুল গাজী বলেন, আমাদের বন্ধের ওই তিন মাস খুব কষ্টে কাটবে। আমরা মূলত সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করি। কেউ মধু সংগ্রহ করেন। বনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় সব ধরনের রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেল।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের ট্রলার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম জানান, জুন থেকে আগস্ট ট্রলারচালক, চালক সহযোগী ও পর্যটক গাইড সাবই বেকার হয়ে পড়ে। তাদের বিকল্প কোনো কাজ না থাকায় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়।

তিনি এই নিষেধাজ্ঞার সময় সুন্দরবনে কর্মরত জেলে ও বাওয়ালিসহ ট্রলারচালক, চালক সহযোগী ও পর্যটক গাইডদের খাদ্য সহযোগিতার দাবি জানান।

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের রেঞ্জ সহকারী এবিএম হাবিবুল ইসলাম জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন কেউ অনুপ্রবেশ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য নতুন করে কাউকে পাস (অনুমতি পত্র) দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে বন বিভাগের নিয়মিত স্মার্ট পেট্রোলিং টিম তাদের অভিযান অব্যাহত রাখবে।

আরও পড়ুন>> 

৩ মাসের জন্য বন্ধ সুন্দরবন, সজীবতা ফিরবে প্রাণ-প্রকৃতিতে

 এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।