ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২, ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৭ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন

সাতক্ষীরা-১ আসনে আলোচনায় যারা 

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:১৬, জুলাই ৩, ২০২৫
সাতক্ষীরা-১ আসনে আলোচনায় যারা 

সাতক্ষীরা: আগামী ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের রোডম্যাপ এখনো ঘোষণা না হলেও সাতক্ষীরায় শুরু হয়েছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা।

 

কোন কোন দল থেকে কে কে প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে। সেই সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও এলাকায় বাড়িয়েছেন যোগাযোগ।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন। এ আসনে দুটি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ভোটার সাড়ে চার লক্ষাধিক।

৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে বিএনপি কিংবা জামায়াত নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হলেও আত্মগোপনে রয়েছেন পতিত আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা। নীরব রয়েছেন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়া এ দলটির কর্মী-সমর্থকরা। সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টির মধ্যেও দেখা যাচ্ছে না তেমন চাঙ্গাভাব। অন্তরালে ১৪ দলের অন্যান্য শরিকরাও।

জানা গেছে, তালা ও কলারোয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দীদার বখত, ১৯৯১ সালে জামায়াতের আনসার আলী, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ১৯৯৬ সালের জুন মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৯৯ সালের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বি এম নজরুল ইসলাম, ২০০১ সালে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নৌকা নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ও ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এ আসনের একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-১ আসনে বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থীর রাজনৈতিক কর্মসূচি দেখা গেছে। এছাড়া অনেকেই রয়েছেন নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার অপেক্ষায়।

আলোচনা আছে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও দেখা যেতে পারে একাধিক ব্যক্তিকে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে জনগণকে সংগঠিত করতে শুরু করেছেন সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।

একই ভাবে সাংগঠনিক কর্মসূচি জোরদার করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। এ আসনে দলটির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ।

স্থানীয়রা বলছেন, পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখতও।

অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রাপ্তির প্রত্যাশায় কাজ শুরু করেছেন সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তারুজ্জামান।

একই ভাবে এলাকায় যোগাযোগ বাড়িয়েছেন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচক বিষয়ক সম্পাদক, দিনকালের সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইদুর রহমান।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, নির্বাচন নিয়ে এখনই কিছু বলতে পারব না। আগে তফসিল ঘোষণা হোক, তারপর...।  

সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ও সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে, তালা-কলারোয়ার মানুষের কাছ থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় ৭০ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তালা-কলারোয়ার মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছে, তা ভোলার নয়, তাদের পাশে থেকেই আজীবন সেবা করতে চাই। দল আমাকে আগেও জনগণকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছে, আমার পরীক্ষা নিয়েছে। আমি জনগণের সেবা করে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আগামীতেও জনগণকে সেবা করার সুযোগ পাব বলে আমি মনে করি, যদিও বিষয়টি দলের ওপরই নির্ভর করবে।    

সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরা-১ আসনে অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহকে মাঠে কাজ করতে বলা হয়েছে। এখনো নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি, তবে আমরা বিগত সময়েও সাতক্ষীরার মানুষের সঙ্গে, মাটির সঙ্গে মিশে ছিলাম। সে অনুযায়ী আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি এবং আমরা ভালো কিছু প্রত্যাশা করছি।

সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কলারোয়া পৌরসভার সাবেক মেয়র আক্তারুজ্জামান বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। শুধুমাত্র বিএনপি করার কারণে আমাকে একাধিক বার কারাবরণ করতে হয়েছে। তারপরও মানুষ আমাকে ভালোবেসে দুই বার মেয়র নির্বাচিত করেছে। দল চাইলে বিএনপির মনোনয়ন নিয়েই আগামীতে সাতক্ষীরা-১ আসনে প্রার্থী হবো।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা এবং দৈনিক ইত্তেফাকের রাজনীতি ও নির্বাচক বিষয়ক সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, আমি বিগত পাঁচ/সাত বছর ধরে সাতক্ষীরায় বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রমে জড়িত। জেলার তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। এখনো নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হয়নি, তারপরও দল চাইলে- দল যদি মনে করে তরুণ নেতৃত্ব এগিয়ে আসুক, তাহলেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেব।  

আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সাতক্ষীরা জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান বুলু বলেন, আমাদের নতুন দল। গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগছে। আসনভিত্তিক প্রার্থী নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কেবল সার্চ কমিটি করা হয়েছে।

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।