ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

কয়রায় এডিপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি!

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৪৭, জুলাই ৭, ২০২৫
কয়রায় এডিপি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি!

কয়রা: খুলনার কয়রা উপজেলায় বার্ষিক ও রাজস্ব উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়নের নামে বরাদ্দকৃত টাকা নয়-ছয় অনিয়ম ও দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই।

এসব প্রকল্পের মধ্যে কোনোটির অর্ধেক, আবার কোনোটির কাজ না করেই টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামেও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার , উপজেলা প্রকৌশলী ,প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কয়রা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কয়রা উপজেলা। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বার্ষিক ও রাজস্ব উন্নয়ন সহায়তা খাতের জন্য বরাদ্দ কৃত অর্থ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে (উপজেলা পরিষদের খাতভিত্তিক বিভাজন) বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লাখ টাকাসহ ৫৭ টি স্ক্রীমে ১ কোটি ৪৩ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৩৪টি প্রকল্পের ৯১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার কাজ দরপত্রের মাধ্যমে, ৪টি প্রকল্পের ২১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার কাজ কোটেশনের মাধ্যমে এবং ১৯টি প্রকল্পের ৩০ লাখ ১ হাজার টাকার কাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে করা হয়।

গৃহীত প্রকল্পের মেয়াদ ২৬ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও সিংহভাগ গৃহীত ( পিআইসি ) প্রকল্প বাস্তবে আলোর মুখ দেখেনি।

নারী উন্নয়ন কল্পে সেলাই মেশিন বিতরণে বরাদ্দ ৪ (চার) লক্ষ টাকা। কোটেশন এর মাধ্যমে প্রতিটি সেলাই মেশিন এর দাম ধরা হয়েছে ১৫৩৮৪ টাকা । ২৬টি সেলাই মেশিন (যার মডেল নং BUTTERFLY JA2-1 ) বিতরণ করেন। খুচরা বাজারে একাধিক দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ,প্রতিটির মেশিনের সর্বোচ্চ দাম ৬৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ হাজার টাকা । যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা।

উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণ (ব্যাগ) বিতরণের বরাদ্দ ৪ (চার) লক্ষ টাকা। কোটেশন এর মাধ্যমে যার প্রতিটির ব্যাগের দাম ধরা হয়েছে ১০০০ টাকা। খুচরা বাজারে একাধিক দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় প্রতিটি স্কুল ব্যাগের বাজার মূল্য ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ লক্ষ ২০ টাকা।

উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলার সামগ্রী ক্রিকেট সেট ৩০ টি ( যার মডেল নং- ভিশন ৮০০০ ) ,ফুটবল ৩০ টি (যার মডেল নং-DEER N532A ) ও ভলিবল ৩০ টি ( যার মডেল নং MIKASA Q2000 ) সামগ্রী বিতরণে বরাদ্দ ৪ (চার) লক্ষ টাকা। কোটেশন এর মাধ্যমে দাম ধরা হয়েছে ক্রিকেট সেট ৬৭৩৩ টাকা ,ফুটবল ২৬৪০ ও ভলিবল ২১১২ টাকা। একাধিক খুচরা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় একই মডেলের ক্রিকেট সেটের বাজার মূল্য ১২০০ টাকা ,ভলিবল প্রতি পিস ৯০০ থেকে ১০০০ ,ফুটবল প্রতি পিস ৬০০ থেকে ৭০০ সব মিলিয়ে যার আনুমানিক বাজার মূল্য ৮৭ হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে ,নারী উন্নয়ন কল্পে সেলাই মেশিন ,শিক্ষা উপকরণ (ব্যাগ) ও ক্রীড়া সামগ্রী ( ক্রিকেট সেট ,ফুটবল ও ভলিবল ) বিতরণ , এই তিনটি প্রকল্প কোটেশন এর মাধ্যমে মোট ১২ লক্ষ টাকার উপকরণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী তার ব্যক্তিগত লোক দ্বারা ক্রয় করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে ,২০২৪-২৫ অর্থ বছরের উপজেলা কমপ্লেক্সে অভ্যন্তরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাংলো ও সুরক্ষা প্রাচীর মেরামত এর জন্য বরাদ্দ ৭ লক্ষ টাকা ,উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরের পূর্ব পার্শ্বের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এর বরাদ্দ ১০ লক্ষ টাকা , উপজেলা পরিষদের হল রুম সংস্কার এর জন্য বরাদ্দ ৫ লক্ষ টাকা ,উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষ ও সংস্কার এর বরাদ্দ ৬ লক্ষ টাকা ,উপজেলা নির্বাহী অফিস কক্ষ সংস্কার ও উন্নয়ন এর বরাদ্দ ৭ লক্ষ টাকা , উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে অফিসার্স ক্লাব উন্নয়ন ( ২য় তলা ) এর বরাদ্দ ২ লক্ষ টাকা , উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে শিশু পার্ক উন্নয়ন এর বরাদ্দ ৩ লক্ষ টাকা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তার ব্যক্তিগত লোক দিয়ে বার্ষিক ও রাজস্ব উন্নয়ন সহায়তা খাতের জন্য বরাদ্দ কৃত অর্থ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে (উপজেলা পরিষদের খাতভিত্তিক বিভাজন) বিশেষ বরাদ্দের ৪০ লক্ষ টাকার কাজ নাম মাত্র মেরামত ও সংস্কার করে বাকী টাকাই আত্মসাৎ করেছেন। প্রতি বছর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও উপজেলার একাধিক ভবন সংষ্কার এর নামে প্রকল্প নিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

কয়রা সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্রের ভূমি উন্নয়ন এবং সংযোগ সড়ক ইটের সোলিং দ্বারা উন্নয়ন প্রকল্পে কোটেশন এর মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায় ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নাম মাত্র কিছু বালু ভরাট করে বাকী টাকা আত্মসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ।

সমাজ সেবক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম শাহাবুদ্দিন সাহেব বলেন ,প্রতিটি সরকারি দফতর যেন লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিনত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে যে ভাবে রাজস্বের টাকা বরাদ্দের নামে লুটপাট করে খাওয়া হতো সেই এক সিস্টেম রয়ে গেছে এর প্রতিকার হওয়া দরকার।

রাজস্বের টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়ে জানতে চাইলে,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলি বিশ্বাস দায় এড়িয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কাছে থেকে জেনে নিতে বলেন।

উপজেলা প্রকৌশলী সাফিন সোয়েব এর কাছে অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন ,সরকারি সব নিয়ম কানুন মেনেই প্রকল্পের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ,এখানে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ এর কোন সুযোগ নাই। তারপরেও আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো কোন অনিয়ম হয়েছে কি না।

 

এমআরএম

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।