ভ্যান চালক বাবা ইউনুস আলীর দুই ছেলের মধ্যে আব্দুল আহাদ আলী ছোট। লেখাপড়া করত মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলা আমিনুর রহমান কলেজে প্রথম বর্ষে।
গেল বছর ৪ আগস্ট আন্দোলনরত অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে মাগুরা মহম্মপুর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় আহাদ। জুলাই আগস্টের এক বছর পার হয়ে গেলেও এখন বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আহাদের পরিবারের সদস্যরা।
শহীদ আহাদের বাবা ইউনুস আলী বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ আগস্ট আমার ছেলে মহম্মদপুর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। আজ একটা বছর পূর্ণ হয়েছে। এ পর্যন্ত কোনো কেসের সুরাহা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট কিছুই জানতে পারিনি। আমার ছেলে কীভাবে মারা গেল। কার গুলিতে মারা গেল। কেসের কোনো অগ্রগতি দেখতে পাচ্ছি না। বর্তমান অন্তর্বতী সরকারের কাছে জুলাই-আগস্টের সব নিহত ও আহতদের বিচারের দাবি করেন এই বাবা। তিনি দাবি করে বলেন, আমরা যেন আমাদের ছেলে হত্যার বিচার সঠিকভাবে পাই। এসময় শহীদ আহাদের জন্য দোয়া চান তিনি।
জুলাই-আগস্টে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা কেমন পেয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ইউনুস আলী বলেন, জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ টাকা। তাছাড়া সরকারিভাবে ১০ লাখ টাকার আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছি। ছেলে তো আমার একটা বছর মারা গেছে। তাহলে কি আমার ছেলের বিচার হবে না? আমাগের কেউ দেখবেও না? এখন তো আমরা তাই মনে করতেছি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার তো টাকার দরকার নেই। আমার ছেলেটা যদি আমার সামনে থাকত। আমারে যদি বাবা বলে ডাক দিত। এতেই আমি খুশি হতাম। টাকা দিয়ে কি করব? সব টাকার তার। টাকার বিনিময়ে আমার ছেলেটা ফিরাই দিক। তা তো দিচ্ছে না। তার বিচার কি জন্যে হচ্ছে না। যারা গুলি করিছে তাগের বিচার হচ্ছে না। যারা গুলি করিনি তাগের যে মামলায় প্যাচাইছে তারা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। যে তোমার দিন এখন আইছে। যখন আমাগের দিন আসপি তখন তোমাদের আমরা বাড়িতে থাকতে দিব না। যারা গুলি করিছে তারা বুক উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। সরকারের উচিত সঠিক তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা।
সন্তান হারানো শোকে ভ্যান চালানোর ক্ষমতা হারিয়েছেন ইউনুস আলী। সহায়তার টাকা পেয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁইকুটু ঠিক করতেই হারিয়েছেন সব পুঁজি। ছেলে হারানো বাবার স্বপ্ন ছিল ছেলে লেখাপড়া শেষ করে সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে। সেই স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই রয়েছে গেছে। এক বছর পেরিয়ে গেলে এখনও বিচার শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই বাবা।
আরএ