শেরপুরের শ্রীবরদীতে খোশেদা বেগম (৭০) নামে এক নারীকে জীবন্ত কবর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে এক স্বামী মো. খলিলুর রহমানের (৮০) বিরুদ্ধে। প্রায় ছয় বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত " (paralyzed) হয়ে শয্যাশায়ী স্ত্রী বিছানায় মলত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে এমন কাজ করেছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনায় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
শুক্রবার (০৮ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের খোশালপুর কানিপাড়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ভিডিওতে দেখা যায়, খোশালপুর মধ্যপাড়ার মো. খলিলুর রহমান তার স্ত্রী খোশেদা বেগমকে ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে উঠানে নিয়ে আসছেন। এর আগেই ঘরের সামনে উঠানের একটি অংশে কোদাল দিয়ে সামান্য পরিমাণ গর্ত করে রেখেছেন। পরে সেই গর্তের ভেতর তাকে রেখে কোদাল দিয়ে মাটিচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে অসুস্থ ওই বৃদ্ধা আত্মরক্ষায় চিৎকার করছেন। এতে তার স্বামী ক্ষিপ্ত হয়ে সজোরে মুখে উপর্যুপরি চড় মারছেন।
অন্যদিকে তার পাশে একাধিক মানুষ থাকলেও কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসছে না। এছাড়াও নিখুঁতভাবে একজন ভিডিও করছেন তিনিও রক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছেন না। তবে ভিডিওটি তাদের নাতি মো. খোকন (১৯) ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। পরে এই ভিডিও রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ছয় বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী রয়েছেন খোশেদা বেগম। একটা সময় অনেক সেবা ও চিকিৎসা করেও খোরশেদা বেগম সুস্থ হননি। বর্তমানে আর স্বামী তার সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না। দীর্ঘদিন যন্ত্রণা সইতে না পেরে অতিষ্ঠ হয়ে যান বৃদ্ধ স্বামী। স্ত্রীর চিকিৎসা, ওষুধ এবং সেবা করতে করতে স্বামী খলিলুর রহমান অসহ্য হয়ে গেছেন। আসলে দীর্ঘ সময় পারিবারিক যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে রাগে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা স্থানীয়দের।
স্থানীয় রহিম মিয়া বলেন, খলিল কাকা আসলে খারাপ লোক না। সবার সঙ্গে হাসিখুশি চলেন। তবে তার স্ত্রীর অসুস্থতার পর থেকে মন খারাপ থাকে। তিনি আজ এমন কাণ্ড কেন ঘটালেন বুঝতে পারছি না।
প্রতিবেশী সুজন বলেন, তিনি তেমন ঝামেলায় জড়ান না, তবে গরিব মানুষ। আজই স্ত্রীর জন্য একটি চেয়ার কমোড কিনে এনেছেন। স্ত্রী চোখেও ভালো দেখেন না। একটু কথা না শোনায় আজ এ ঘটনা ঘটে। তার নাতি ভিডিওটি ফেসবুকে পোস্ট করায় বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার জাহিদ বলেন, ভিডিও চিত্র দেখার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে সামাজিকভাবে সমাধান হয়েছে বলে শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনার ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, আমি ভিডিওটি দেখেছি। বিষয়টি সত্যিই মর্মান্তিক। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরএ