ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার লক্ষ্য সংসদ ভবন: নাহিদ ইসলাম

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:১৯, জুলাই ১৬, ২০২৫
৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার লক্ষ্য সংসদ ভবন: নাহিদ ইসলাম বরিশালে বক্তব্য দিচ্ছেন নাহিদ ইসলাম

বরিশাল: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার আমাদের লক্ষ্য সংসদ ভবন।

তিনি বলেন, প্রিয় বরিশালবাসী, আপনাদের ডাইরেক্ট অ্যাকশন, এনসিপির ডাইরেক্ট অ্যাকশন চলমান রাখতে হবে।

ইনশাআল্লাহ জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজপথে নেমেছে, কোনো হুমকি-ধামকি, বাধা-বিপত্তি দিয়ে এ গণজোয়ার থামানো যাবে না। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং তরুণদের পক্ষে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। এ জোয়ার রুখবে, কারও সাধ্য নাই। প্রিয় সংগ্রামী বন্ধুরা, প্রিয় বরিশালবাসী, প্রিয় বরিশালের ছাত্র-তরুণ, প্রিয় বরিশালের নারী সমাজ, আপনাদের শুধু সাহস নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আমরা বলেছি, স্পষ্টভাবে, গত ৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সংসদ ভবন। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয় অর্জন করবো, বরিশালবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ বিজয় অর্জন করবো।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) রাতে নগরের ফজলুল হক অ্যাভিনিউতে বিচার সংস্কার ও দেশ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে বরিশাল জুলাই পথসভায় এসব কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

এসময় তিনি আরও বলেন, শেরে বাংলা ফজলুল হককে আমরা মনে প্রাণে ধারণ করি। তিনি ছিলেন সেই নেতা, যিনি বাংলার কৃষক-প্রজাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, জমিদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে পুরো উপমহাদেশের মুসলমানদের সমস্যার সমাধানও দেখিয়েছিলেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ- আমরা সেই শেরে বাংলা ফজলুল হকের উত্তরসূরি। শেরে বাংলা ফজলুল হক কৃষক-প্রজাকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। কৃষক-প্রজার জমির অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন। কৃষক-প্রজার মর্যাদা এবং অধিকারের জমিদারি ব্যবস্থার বিলোপ ঘোষণা করেছিলেন। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টি, আমরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নাগরিকের অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ঘোষণা করেছি।

বরিশালে রয়েছেন আরেকজন মহান নেতা যোগেন মণ্ডল, যিনি দলিত তফসিলি সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন। যিনি দেখিয়েছিলেন, দলিত-মুসলমান ঐক্য কীভাবে উপমহাদেশের রাজনীতি পরিবর্তন করতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান সমসাময়িক, উপমহাদেশের বর্তমান সমসাময়িক রাজনীতিতে শেরে বাংলা এবং যোগেন মণ্ডলের রাজনীতি অনুসরণীয়। বরিশালের রাজনীতি অনুসরণীয়, তাই আজকে আমরা এসেছি বরিশালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বার্তা নিয়ে, যোগ করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, আমরা জানি এ গণঅভ্যুত্থানে বরিশাল অসীম সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছিল। ১৬ জুলাই যখন আবু সাঈদ মারা যায়, ১৬ জুলাই বরিশালের বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেছিল। আমরা এ বরিশালে দেখেছিলাম, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট বাহিনী কীভাবে শাড়ি-লুঙ্গি পরে গ্রাম থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

নাহিদ বলেন, আমরা গণঅভ্যুত্থানের পরে বলেছিলাম, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে, নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে, আমরা দেখছি নিজেদের মধ্যে অন্তর্কোন্দল, খুনি-খুনি করছে, সবার হাতেই রক্ত লেগে রয়েছে। আমরা সহিংসতামুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখতে চেয়েছিলাম, চাঁদামুক্ত অর্থনীতি দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বরিশালবাসী, গণঅভ্যুত্থানের শক্তি, তরুণ প্রজন্মের শক্তি এখনও ঘুমিয়ে যায়নি, রাজপথে এসেছে। বাংলাদেশকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, বৈষম্যমুক্ত করেই আমরা ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম, বাংলাদেশের মানুষের জন্য ইনসাফের ন্যূনতম উন্নয়ন করতে হবে। বরিশালের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, বরিশালের মানুষ নদীভাঙনে, জলবায়ু দুর্যোগে বিপর্যস্ত। বরিশালের এসব সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে। যেই বরিশালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, যোগেন মণ্ডলের মতো নেতারা জন্ম নিয়েছিলেন, সেই বরিশালবাসী আজ নানা অবহেলা, নানা বৈষম্যে জর্জরিত। জাতীয় নাগরিক পার্টি আজ আপনাদের কাছে এসেছে নতুন দিনের বার্তা নিয়ে, নতুন রাজনীতির বার্তা নিয়ে। শেরে বাংলা ফজলুল হক এবং যোগেন মণ্ডলের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটাবে জাতীয় নাগরিক পার্টি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, বরিশালবাসীকে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা কোনো দলের সহিংসতাই মেনে নেব না। নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে এ নতুন বাংলাদেশে, গণঅভ্যুত্থানের পরে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না। খুনি ফ্যাসিস্ট বাহিনীর মার্কাকে নির্বাচন কমিশন এখনও প্রতীক হিসেবে রেখে দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের মনোভাব কিন্তু ভালো নয়, বাংলাদেশের জনগণকে এভাবে বোকা বানানো যাবে না।

এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহও এসময় বক্তব্য দেন।

উপস্থিত ছিলেন এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

এর আগে রাত ৮টার দিকে ভোলা থেকে সড়কপথে বরিশালে আসেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। নগরের অমৃত লাল দে কলেজের সামনের হাসপাতাল রোডে তাদের অভ্যর্থনা জানান বরিশালের নেতাকর্মীরা। সেখান থেকে পদযাত্রা শুরু করে সদর রোড হয়ে সভাস্থলে আসেন নাহিদ ইসলামসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এমএস/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।