নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে জুলাই বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পতনে ঢাকার রাজপথে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার যুবক কামরুল মিয়া। তার চোখে-মুখে ছিল বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন।
ছেলে হারানোর শোকে অনেকটাই কাতর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের গৌর নগর গ্রামের কৃষক নান্নু মিয়া। তাতেও তার দুঃখ নেই। কারণ ছেলে কামরুলের টগবগে রক্ত অবদান রেখেছে নতুন বাংলাদেশের সূর্যোদয়ে।
পরিবার জানায়, কামরুল স্থানীয় একটি মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ২০১৬ সালে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় চলে যান। ভাই-বোনদের মধ্যে কামরুল ছিল ৩য়। সেখানে তিনি বোর্ড ফানির্চারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম দফায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। কিন্তু তাতেও তাকে দমানো যায়নি। কিছুটা সুস্থ হয়ে আবারো আহতাবস্থায় ১৯ জুলাই রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিকেলে মীরপুর ১০ নম্বরে পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। মৃত্যুর তিনদিন পর ঢাকা থেকে তার লাশ ফিরিয়ে আনে পরিবারের সদস্যরা। পরে নামাজে জানাজা শেষে গ্রামেই সমাহিত করা হয়।
নিহত কামরুলের বাবা নান্নু মিয়া বলেন, স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। মারা যাওয়ার চারদিন আগে সর্বশেষ ফোনে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল ‘আপনি চিন্তা করবেন না। আমি ছুটি নিয়ে বাড়িতে চলে আসব। ’ এরপর তার মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যাওয়ায় আর যোগাযোগ করা যায়নি।
এর মধ্যে দেশে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। আমার ছেলে ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যোগ দিয়ে প্রথম দিনই গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। এর তিনদিন পর আবার যায় আন্দোলনে ওই সময় একাধিক গুলি লাগে তার শরীরে। পরে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়। তখন তার মালিক ফোনে বিষয়টি জানান। মারা যাওয়ার তিনদিন পর তার লাশ ঢাকা থেকে খুঁজে বের এনে আনি। তার লাশটি দেখে চেনার কোনো উপায় ছিল না। সারা শরীরে ছিল গুলির চিহ্ন। আমার ছেলে শহীদ হয়েছে এতেও দুঃখ নেই আমার। তবে মৃত্যুর আগে দেশের মাটিতে পতিত আওয়ামী সরকারের বিচার দেখে যেতে চাই।
আরএ