গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর হামলার ঘটনায় করা মামলার আসামিদের ধরতে নদীপথে টহল জোরদার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নৌবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট সাজ্জাদ ও কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার হারুন-অর-রশীদ এ তথ্য জানান।
তারা বলেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) গোপালগঞ্জে এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও আসামিদের ধরতে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। দুষ্কৃতকারীরা যাতে নদীপথে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্য গোপালগঞ্জ জেলার নদীপথে বিশেষ টহল দেওয়া হচ্ছে।
এ টহলে কোস্টগার্ডের দুটি বোট ও নৌবাহিনীর একটি বোট অংশ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যৌথবাহিনীর সদস্যরা দিনরাত টহল চালিয়ে যাচ্ছে। সন্দেহভাজন নৌযানগুলোতে তল্লাশি, যাত্রীদের পরিচয় যাচাই ও সন্দেহজনক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
এ ঘটনায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বুধবার গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতা চালান ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এমনকি গোপালগঞ্জ কারাগারেও হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাইলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান দলটির ক্যাডাররা। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ শহর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বুধবার রাত ৮টা থেকে কারফিউ বহাল রয়েছে।
এনসিপির পূর্বঘোষিত পদযাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন ছিল গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে। এ নিয়ে সেখানে সার্বিক প্রস্তুতির পাশাপাশি সমাবেশ মঞ্চ তৈরি করা হয়। কিন্তু আগের দিন রাত থেকেই আওয়ামী লীগের লোকদের এনসিপির কর্মসূচি পণ্ড করতে অনলাইন-অফলাইনে সংগঠিত হতে দেখা যায়।
এর মধ্যে সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে টহলরত পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয় নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের সমর্থকেরা।
এরপর সদর উপজেলার কংশুর এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। দুপুরে গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশের মঞ্চ ভাঙচুর করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
এ উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে এনসিপির নেতা-কর্মীরা সেখানে যায় এবং সমাবেশ করেন। কিন্তু সমাবেশ শেষে বেরিয়ে যাওয়ার পথে শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা আবার এনসিপির গাড়িবহরে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোকেরা। তখন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এসময় অনেক সাংবাদিকও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মাঠে নামে সেনাবাহিনী।
পরে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রহরায় বের হয় এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর। মাদারীপুরের নির্ধারিত সমাবেশ স্থগিত করে নেতারা চলে যান খুলনায়।
এ ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের। এতে আহত হন পুলিশ-সাংবাদিকসহ অর্ধশতাধিক মানুষ।
এদিকে এ ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা রিপোর্টার্স ফোরামের অফিসে হামলা চালান আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের লোকেরা। এতে যমুনা টিভির সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মোজাম্মেল হোসেন মুন্না ও ডিবিসি টেলিভিশনের রিপোর্টার সুব্রত সাহা বাপিসহ অনেক সাংবাদিক আহত হন।
তাদেরসহ এ ঘটনায় আহত অনেককে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।
জুলাই মাসজুড়ে জেলায় জেলায় পদযাত্রা করছে কেন্দ্রীয় এনসিপি। এরই অংশ হিসেবে আজ তারা গোপালগঞ্জে লং মার্চ ও সমাবেশ করেন।
এসআই