রাঙামাটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং পর্যটন নগরী কাপ্তাই উপজেলা। এ উপজেলার উত্তরে কাউখালী এবং রাঙামাটি সদর উপজেলা, দক্ষিণে রাজস্থলী, পূর্বে বিলাইছড়ি এবং পশ্চিমে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা।
কাপ্তাই উপজেলা থেকে রাজস্থলী এবং বান্দরবান জেলাকে বিভক্ত করেছে দেশের সবচেয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী। এ উপজেলার সাথে রাজস্থলী এবং বান্দরবান জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ‘চন্দ্রঘোনা ফেরি’। মূলত কর্ণফুলী নদীতে ‘চন্দ্রঘোনা ফেরি’ দিয়ে অপর দুই অঞ্চলে যানবাহন পারাপার করা হয়। যে কারণে এ দুই অঞ্চলের সাথে কাপ্তাই এবং রাঙামাটি সদর উপজেলার সাথে যোগাযোগ করতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে।
বর্ষা মৌসুমে ফেরি পারাপার ভয়ানক রূপ নেয়। কর্ণফুলী খরস্রোতা নদীতে ঢল নামলে কাপ্তাই উপজেলার সাথে রাজস্থলী এবং বান্দরবান জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফেরিঘাটও জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে।
আবার শুষ্ক মৌসুমে কর্ণফুলী নদীর পানি শুকিয়ে গেলে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়। এ সময় ফেরি পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কর্তৃপক্ষ তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখে নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এজন্য সরকারকে গুণতে হয় বিপুল অর্থ খরচ।
কাপ্তাই-রাজস্থলী-বান্দরবান জেলায় কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। এসব অঞ্চলগুলোতে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, রয়েছে স্কুল-কলেজ। পাশাপাশি কর্ণফুলীর পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠেছে চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনার ইউনিয়নের বাণিজ্যিক নগরী ‘লিচু বাগান’। এ বাণিজ্যিক নগরীতে প্রতিমাসে কয়েকশো কোটি টাকা বাণিজ্য হয়। এখানে রয়েছে ব্যাংক-বিমা, বড়-বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া এ ইউনিয়নে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলা এবং চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবার অন্যতম বাতিঘর খ্যাত ‘চন্দ্রঘোনা খ্রিষ্টান মিশন হাসপাতাল’। এ হাসপাতালে বান্দরবান, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি , রাঙামাটি সদর, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলাসহ দূরদূরান্ত থেকে আসা প্রতিদিন কয়েকশো রোগী এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে।
কর্ণফুলী নদীতে একটি সেতুর অভাবে কয়েকদশক ধরে এ অঞ্চলগুলোতে বসবাসরতদের চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে। অতীতে অনেক সরকার ভোটের রাজনীতির জন্য তিন অঞ্চলকে সংযুক্ত করে ‘কর্ণফুলী সেতু’ নির্মাণ করার কথা বলে আসলেও এখনো সেতু নির্মাণ কার্যক্রম উদ্যোগ অদৃশ্য রয়েছে।
তিন অঞ্চলের বাসিন্দারা কয়েকদশক ধরে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে কর্ণফুলী নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার। তবে তাদের এ দাবি আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে।
কাপ্তাই উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো.কবির হোসেন বলেন, জন্মলগ্ন থেকে আমরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। একটি সেতুর অভাবে জরুরি প্রয়োজনে আমাদের রাজস্থলী উপজেলা এবং বান্দরবান জেলায় যেতে হয়। কিন্তু ফেরি নামক যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ। সরকারের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছিল একটি সেতু নির্মাণ করে দেবে। কিন্তু কোনো কার্যক্রম দেখছি না। এ আধুনিক যুগে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। সরকারের কাছে জোর দাবি থাকবে অচিরেই কর্ণফুলীর ওপর একটি সেতু করে দেওয়ার। তাহলে আমরা তিন অঞ্চলের মানুষেরা কয়েকদশকের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবো।
রাজস্থলী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজগর আলী বলেন, আমরা দশকের পর দশক ধরে সরকারের কাছে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। কোন সরকার আমাদের দাবি পূরণ করেনি। সভ্য, আধুনিক যুগে আমরা এখনো নরকে পড়ে আছি। এরপরও বলবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হলেও একটি সেতু নির্মাণ করে দেওয়া হোক।
চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান মিশন হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রবীর খিয়াং বলেন, আমাদের হাসপাতালটি পাহাড়ের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবার ‘বাতিঘর’। এ হাসপাতালে দুর্গম বিলাইছড়ি উপজেলা থেকে শুরু করে, রাজস্থলী উপজেলা, বান্দরবান জেলা এমনকি রাঙামাটি সদর হতে এখানে অসংখ্য রোগী আসে। সেতুর অভাবে অনেক রোগী যথা সময়ে আসতে না পেরে পথে মারা যায়। কর্ণফুলী নদীতে একটি সেতু নির্মিত হলে বান্দরবান, রাজস্থলী, কাপ্তাই এবং চন্দ্রঘোনার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে, রোগীরাও চিকিৎসা সেবা দ্রুত পাবে এবং কাউকে চিকিৎসার অভাবে মরতে হবে না।
রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সেতু নির্মাণের নকশা তৈরি করেছে। প্রকল্পটা সেখান থেকে গ্রহণ করা হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে সেতু নির্মাণ কাজ সেখান থেকে করা হবে বলে যোগ করেন সওজের এ প্রকৌশলী।
এএটি