খাগড়াছড়ি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো সুস্থ হতে পারেননি সেই সময়ের আহত শিক্ষার্থীরা। চিকিৎসার ব্যয় বহনের সামর্থ্য না থাকায় আজও অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গত বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সারাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঢেউ লাগে পার্বত্য খাগড়াছড়িতেও। খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথম স্থানীয়ভাবে আন্দোলন শুরু করেন। মিছিল, সমাবেশের মধ্য দিয়ে দাবির প্রতি সংহতি জানান তারা। কয়েক দফা মিছিল ও সমাবেশ হয়।
আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ৪ আগস্ট সকালে শহরের শাপলা চত্বর এলাকায় অবস্থান নিতে গেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালান বলে অভিযোগ ওঠে।
উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, ওই ঘটনায় অন্তত ১০-১৫ জন আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজন-আবুল হাসনাত, মো. শাকিল শামস ও মো. মারুফ হোসেন এখনো পুরোপুরি সুস্থ হননি।
আহত শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত জানান, ৪ আগস্ট হামলায় আমি পায়ে আঘাত পাই। এখনো স্ট্রেচার বা সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে পারি না। স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছি না। চিকিৎসা চলছে, কিন্তু যা সহযোগিতা পেয়েছি তা যথেষ্ট নয়।
আহত আরেক শিক্ষার্থী মো. মারুফ হোসেন বলেন, আমার মাথায় সাতটি সেলাই লাগে, হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়। ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে প্রায় তিন মাস ভর্তি ছিলাম। সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাইনি। শুধু ‘জুলাই ফাউন্ডেশন’ থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছিলাম, যা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না।
মো. শাকিল শামস বলেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় মুখে গুরুতর আঘাত পাই। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলাম। সরকারিভাবে এক লাখ টাকা পেয়েছি, কিন্তু জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে আবেদন করেও কোনো সহযোগিতা পাইনি।
ছাত্র প্রতিনিধি মো. জাহিদ হোসেন বলেন, জুলাই থেকে আবার জুলাই ঘুরে এলেও আমরা যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য আন্দোলন করেছি, তা আজ ব্যর্থতার মুখে। এক বছরের মাথায়ও এত রক্তের কোনো বিচার হয়নি। অনেকেই এখনো চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছে। জনগণ ছাত্রদের ওপর আস্থা হারাতে বসেছে। কেউ কেউ বলছে, আগের অবস্থাই ভালো ছিল। গণ-আন্দোলনের পর এমন মন্তব্য দুঃখজনক। আমরা চাই, সরকার আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করুক এবং একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুক।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, আহতদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ১৬ জন এমআইএসভুক্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে বর্তমানে ৮ জন গেজেটভুক্ত হয়েছেন, বাকি ৮ জনের গেজেটভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে।
তাদের সকল সরকারি সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বলেও জানান ইফতেখারুল ইসলাম।
এডি/এসআইএস