ছেলের ছবির দিকে তাকিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেন তিনি। কথা বলেন, আবার চুপচাপ বসে থাকেন।
আগে মাসে মাসে টাহা পাডাইতো। ফোন দিয়া কইতো, মা, তুমি কী খাইসো? এহন আর কেউ জিগায় না, আমি বাইচ্চা আসি নাকি মরসি! কথাগুলো বলতে বলতে কাঁদছিলেন বরগুনার শহীদ ঠেলাগাড়ি শ্রমিক মো. মিজানুর রহমানের মা মোসা. শাহিনুর বেগম। গত বছরের ২০ জুলাই ঢাকায় আন্দোলন চলাকালীন পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান তার প্রিয় সন্তান।
ছেলের শোকে আজো চোখ ভেজে এই বৃদ্ধার। নাতিরা যখন জিজ্ঞেস করে, আমাদের আব্বু কই? তখনও বুক কেঁপে ওঠে তার। তিনি বলেন, এহম যদি মোরে কেউ ৫০ লাখ টাহাও দেয়, মুই তো মোর মিজানরে আর পামু না।
বরগুনা সদর উপজেলার ৮ নম্বর ইউনিয়নের কালিরতবক গ্রামের সন্তান মিজানুর রহমান। বছর আটেক আগে জীবিকার তাগিদে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। বাবার সঙ্গে মিলেই শুরু করেন ঠেলাগাড়ি চালানোর কাজ। দিনে যা আয় হতো, তাতেই চলতো তার ছোট সংসার।
কিন্তু গত বছরের ২০ জুলাই বিকেলে সেই চলার পথ থেমে যায়। সকালবেলা কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফেরা হয়নি তার। ঢাকার মানিকনগর বিশ্বরোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মিজান।
আজো সেই শোকের ভার বইছেন স্ত্রী জাকিয়া আক্তার শিরিন। দুই সন্তানকে নিয়ে দেবরের ঘরে থাকছেন। নিজের ঘর বলতে কিছু নেই। শিরিন বলেন, সরকার দিয়া যে সহযোগিতা পাই, হ্যাতে মোগো দিন কোনোমতে কাডে। কিন্তু ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা কই? শ্বশুর-শাশুড়ি না থাকলে মোগো মাথা গোঁজার জায়গাও থাকবে না।
তিনি চান, সরকার যেন তাদের একটি স্থায়ী ঘর দেয়। পাশাপাশি একটা ছোট কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেয় যেন সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়া যায়। শিরিন বলেন, স্বামীরে হারাইসি, কিন্তু পোলাপারগো যেন কিছু হারাইতে না হয়।
মিজানুরের বাবা মো. দুলাল আজো মনের জোরে সংসার চালান। তিনি জানান, ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছে সরকার। সেখান থেকে মাসে কিছু টাকা পান, যা দিয়ে নাতি-নাতনিদের লেখাপড়ায় খরচ হয়। কিন্তু তিনি না থাকলে তাদের কী হবে?
তার প্রত্যাশা, শহীদ পরিবারগুলোর একজন সদস্যের জন্য যেন যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির ব্যবস্থা হয়। তার পর যদি তার পরিবারের কেউ বেকার থাকে, তাহলে সেই শহীদের আত্মত্যাগ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
শুধু সরকারি সহায়তা নয়, ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের বিচারও চান শাহিনুর বেগম। আমার পোলারে যারা মারছে, মুই তাগো বিচার চাই। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়, সেই আশাই করেন শাহিনুর।
এমজে