নীলফামারীর ডিমলায় অনুমোদনহীনভাবে গড়ে উঠেছে অসংখ্য মিনি পেট্রোল পাম্প। উপজেলা সদরসহ আশপাশের ইউনিয়নজুড়ে এ পর্যন্ত অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি মিনি পাম্প চিহ্নিত হয়েছে— যেগুলোর নেই সরকারি অনুমোদন, অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা কিংবা পরিবেশগত ছাড়পত্র।
প্রতিদিন এসব মিনি পাম্পে ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি হচ্ছে আধুনিক ডিসপেনসার মেশিনের মাধ্যমে। অথচ, এসব কার্যক্রম পুরোপুরি অবৈধ ও জননিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি ডিমলা সদর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারসংলগ্ন টিএনটি সড়কে অবস্থিত ‘মেসার্স বক্কর অ্যান্ড সন্স’ নামক একটি মিনি পাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে দগ্ধ হন শ্রাবণ কুমার রায় (১৮) নামের এক তরুণ। আগুনে পুড়ে যায় আশপাশের দোকান, একটি মোটরসাইকেল শোরুমসহ অন্যান্য স্থাপনা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের শব্দে পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ মিনি পাম্প স্থাপিত হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে— আবাসিক ভবনের নিচে, জনবহুল বাজার এলাকায়, স্কুলের পাশে কিংবা সড়কের পাশে টিনশেড ঘর বা মুদি দোকানে। এসব স্থানে নেই অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালুর বস্তা বা নিরাপদ দূরত্বের কোনো ন্যূনতম ব্যবস্থা। খোলা জায়গায় রাখা হয় বিশাল তেলের ড্রাম, যেখানে যেকোনো সময় একটি সিগারেটের আগুন কিংবা বৈদ্যুতিক স্পার্ক ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব পাম্পে বিক্রি হওয়া তেলের মান অত্যন্ত নিম্ন। অনেক সময় তেল তলানি মিশ্রিত ও ভেজাল থাকে, ফলে যানবাহনের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অনেক পাম্পে পরিমাপেও কম দেওয়া হয়। এতে সাধারণ ভোক্তারা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশও পড়ছে হুমকির মুখে। বাতাসে ছড়াচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া, যা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় অনুমোদিত ফিলিং স্টেশন রয়েছে মাত্র চারটি— উপজেলা সদরে দুটি এবং খালিশা চাপানি ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নে একটি করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পুরো উপজেলাজুড়ে ৬০-৭০টির বেশি অবৈধ মিনি পাম্প চালু রয়েছে।
প্রশাসন মাঝে মাঝে কিছু মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্থায়ী প্রভাব ফেলে। চিহ্নিত করার পরও কিছুদিনের মধ্যেই অধিকাংশ পাম্প আবার চালু হয়ে যায়। প্রশাসনের এই নীরবতা ও গাফিলতির সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
ডিমলা ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, এসব মিনি পাম্পে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, বালুর বস্তা বা নিরাপদ দূরত্বের কোনো ব্যবস্থাই নেই। আগুন লাগলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
পরিবেশ অধিদপ্তর, নীলফামারীর সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, আমাদের দপ্তর থেকে কোনো মিনি পাম্প স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। দ্রুত এসব পাম্প পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরানুজ্জামান বলেন, অবৈধ মিনি পাম্পগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হবে। জননিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। এসব অবৈধ পাম্প জনস্বাস্থ্য, নিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য এক মারাত্মক হুমকি।
এমজে