ঢাকা, সোমবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

তিস্তায় পানি কমলেও, বেড়েছে ভাঙন আর দুর্ভোগ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০৬, আগস্ট ৪, ২০২৫
তিস্তায় পানি কমলেও, বেড়েছে ভাঙন আর দুর্ভোগ  তিস্তা নদীর পাড়

পানি কমে যাওয়ায় লালমনিরহাটের তিস্তা পাড়ের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও বেড়েছে ভাঙন ও দুর্ভোগ। পানিবন্দি থেকে মুক্তি পেলেও ঘরবাড়ি সংস্কার নিয়ে ব্যস্ত তিস্তাপাড়ের মানুষগুলো।

 

সোমবার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  

এর আগে রোববার দিনভর তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়।  

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। রোববার দিনভর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ ছিল বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে। ফলে তিস্তা নদীর বাম তীরের জেলা লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল কয়েক হাজার পরিবার। ভেঙে গেছে চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। ডুবে যায় চাষিদের আমন ধানের ক্ষেত। বন্যার স্রোতে ভেসে যায় চাষিদের পুকুরের মাছ ও জাগ দেওয়া পাট। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।  

বন্যার্ত এলাকায় টিউবওয়েল ও টয়লেট ডুবে যাওয়ায় সব থেকে বড বিপাকে পড়েন নারীরা। পুরুষরা শৌচ কাজ বাহিরে সেড়ে নিতে পারলেও নারীরা পড়েন বিপদে। বন্যার সময় গবাদি পশুপাখি আর বৃদ্ধ শিশু ও প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পড়তে হয় চরম বিপদে। বন্যা দুর্গত এলাকায় সাপসহ বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের উপদ্রুব বেড়েছে।

বন্যা শুরুর একদিন পরে উজানের ঢল কমে যাওয়ায় তিস্তার পানি প্রবাহ কমে যায়। সোমবার তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে লালমনিরহাটের তিস্তাপাড়ে। পানিবন্দি থেকে মুক্তি মেলে বন্যা দুর্গতদের। বাড়ি ঘরে পানি ওঠায় ঘরবাড়ির বেড়া নষ্ট হয়েছে, কাদা আর ময়লা আবর্জনা প্রবেশ করেছে এসব বাড়ি ঘরে। পানি নেমে যাওয়ায় ঘর বাড়ি মেরামত নিয়ে ব্যস্ত বন্যার্তরা।  

এদিকে পানি কমে যাওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে তিস্তাপাড়ের বিভিন্ন এলাকা। কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভোটমারী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের পাঠানো ৫শ জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে স্থানীয়রা। তবে গেল দুই দিনে ওই এলাকার ৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে শত শত বাড়ি, মসজিদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অসংখ্য স্থাপনা।  

স্থানীয়রা জানান, দক্ষিণ ভোটমারী এলাকায় তিস্তার মূলস্রোত ধারায় চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে শত একর জমির ওপর সোলার প্যানেল স্থাপন করে বিদ্যুৎ বিক্রি করছে ইন্ট্রাকো কোম্পানি। সেই সোলার প্যানেল নির্মাণের সময় নদীর মূলস্রোত ধরায় চারদিকে বাঁধ দেওয়ায় তিস্তা নদীর পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে পড়ে। যার কারণে তিস্তা নদী ওই এলাকায় গতিপথ পরিবর্তন করে লোকালয় প্রবেশ করছে। এ কারণে তীব্র ভাঙনের মুখে পড়েছে এলাকাটি।  

স্থানীয় আক্কাস আলী বলেন, ইন্ট্রাকো সোলার প্যানেল নির্মাণের সময় বেড়িবাঁধ দেওয়ার কথা থাকলে তা দেওয়া হয়নি। কোম্পানি তাদের সম্পদ রক্ষার ব্যবস্থা করলেও জনগণের জানমাল রক্ষার কোনো ব্যবস্থা করেনি। বরং তারা নদীর মূলস্রোত বন্ধ করে লোকালয়ের দিকে নদীর গতিপথ সড়িয়ে দিয়েছে। জনগণের বুকের ওপর ছুড়ি চালিয়ে ব্যবসা করছে কোম্পানি।  

একই গ্রামের সমির উদ্দিন বলেন, মূল নদীর ওপর কোম্পানি করায় নদী এখন আমাদের বাড়ি ঘর ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে স্রোতে। নদীকে তো তার পানি যাওয়ার পথ করে দিতে হবে। কোম্পানি পানি যাওয়ার পথ বন্ধ করে সোলার প্যানেল বসিয়েছে। ফসল সম্পদ হারাচ্ছি জনগণ, ব্যবসা করছে কোম্পানি। দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।  

ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, ইউএনওকে অনুরোধ করে ৫শ জিও ব্যাগ পেয়েছি। সেই জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে ভাঙন এলাকায় ফেলা হয়েছে। এটার কারণে কিছু রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। দ্রুত আরও জিও ব্যাগ দরকার। নয় তো পুরো এলাকা বিলীন হয়ে যাবে।  

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে নদীর পানি প্রবাহ পথ কমে যাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়ছে। আমরা ভাঙন রোধে সাধ্যমত চেষ্টা করছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। তারা জিও ব্যাগসহ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। তবে রাতে আবারও বাড়ার আভাস রয়েছে। সেক্ষেত্রে মঙ্গলবারও বন্যা হতে পারে। নদীতে পানি কমলে পাড়ে ভাঙন দেখা দিতে পারে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধে কাজ হিসেবে ১০ হাজার জিও ব্যাগ বরাদ্দ পেয়েছি। আরও প্রয়োজন রয়েছে। তার জন্য বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। নদীপাড়ের অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।