শেরপুর: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, এনসিপি শুধু আসনের রাজনীতির জন্য কারো সঙ্গে জোট করবে না। যদি কেউ পরিবর্তনের কমিটমেন্ট দিতে পারে এবং কাজে সেটি প্রমাণ করার মতো হয়, তাহলে এনসিপি সময়ের প্রয়োজনে দেশের স্বার্থে ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্সের দিকে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আবার যদি দেখি এসব শুধু কথার ফুলঝুড়ি, সেক্ষেত্রে এনসিপি একক নির্বাচনের দিকে যাবে। তবে ইলেক্টারাল অ্যালায়েন্স হলেও এনসিপি অন্য কোনো প্রতীকে নয়, কেবল শাপলা প্রতীকেই নির্বাচন করবে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শেরপুর শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে জেলা ও উপজেলা এনসিপি নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
শাপলা প্রতীক না পেলে নির্বাচন করবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচন-সংবিধান বিশেষজ্ঞসহ যতজনের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের সবাই বলেছেন শাপলা প্রতীক পেতে আইনগত কোনো বাধা নেই। যেহেতু আইনগত কোনো বাধা নেই, আমরা বিশ্বাস করি নির্বাচন কমিশনের মতো একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এ স্বেচ্ছাচারী আচরণ একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে করবে না। আমরা অবশ্যই শাপলা প্রতীক পাবো এবং শাপলা প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।
পিআর পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই, নিম্নকক্ষে পিআর চাই না, যেটি ঐকমত্য কমিশনে বারবার বলেছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে উচ্চকক্ষে পিআরের মাধ্যমে আমরা দেখি এটি কতটুকু বাস্তবায়নযোগ্য বা ফলপ্রসূ হচ্ছে এবং এটা দিয়ে বাংলাদেশ উপকৃত হচ্ছে কিনা। পরবর্তীতে দেশের মানুষের চাওয়া-পাওয়াই ঠিক করবে রাজনৈতিক দলগুলো নিম্নকক্ষে পিআর চাইবে কিনা।
সারজিস বলেন, উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের বিষয়টি গড়পড়তা সব উপদেষ্টার জন্য না, কিছু কিছু। সেফ এক্সিট বলতে এমন না যে, তারা দেশ থেকে পালিয়ে যাবেন। বরং এটা বুঝানো হয়েছে যে, কোনোভাবে নির্বাচনটা তারা দিয়ে যেতে পারলেই যেন দায় শেষ এমন কথা। আমরা তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, নির্বাচন দিলেই দায় শেষ হবে না। দায়টা এত ছোট না। হাজারও মানুষের জীবনের দায় আছে, লক্ষ মানুষের রক্তের দায় আছে। আমরা তাদের কাছে অভ্যুত্থানের সরকারের মতো বোল্ড একটা ভূমিকা চাই।
সারজিস আলম বলেন, আমাদের নিজেদের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে সাংগঠনিক ভিত্তিকে মজবুত করা। আগামীর রাজনীতির লড়াইয়ের জন্য, গণতান্ত্রিক পথ উত্তরণের জন্য, ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখার জন্য কিংবা নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি, প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই সাংগঠনিক কাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় সমন্বয় সভা করছে।
তিনি বলেন, আগে বিএনপি কখনও এককভাবে সরকার গঠন করেনি, আবার জামায়াতও কখনও বড় পরিসরে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি। সে জায়গা থেকে আগামী নির্বাচনে কারা সরকার গঠন করবে সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর ভূমিকায় থাকবে এনসিপি। এজন্য আমরা সাংগঠনিক ভিত্তিটাকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সারাদেশে সমন্বয় সভা করছি। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশের সব ওয়ার্ডে এনসিপির কমিটি থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কোথাও কনফার্ম করিনি বিএনপির সঙ্গে জোট করছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে এসব আলোচনা চলছে। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে যারা সংস্কার, বিচারিক প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখা, ভারতের আধিপত্যসহ যেকোন আধিপত্যবাদ রোধসহ বাংলাদেশের পরিবর্তনের জন্য কাজ করবে এবং যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রাধান্য মিলবে তাদের সঙ্গে আমরা ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্সে যেতে পারি।
শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. লিখন মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে এনসিপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকিন আলমসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের এনসিপি নেতারা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতারা ও জুলাইযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
জেএইচ