ঢাকা, বুধবার, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

জুরাছড়িতে হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পর ৩ আসামির যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৯, আগস্ট ৬, ২০২৫
জুরাছড়িতে হত্যাকাণ্ডের ১৮ বছর পর ৩ আসামির যাবজ্জীবন রাঙামাটির মানচিত্র

রাঙামাটিতে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় পর কিনা মোহন চাকমা নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

বুধবার (৬ আগস্ট) রাঙামাটির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আহসান তারেক দণ্ডবিধি ৩৬৪/৩০২/৩৪ ধারায় এই আদেশ দেন।

একইসঙ্গে আসামিদের যাবজ্জীবন দণ্ডের পাশাপাশি আরও ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- সুবল চন্দ্র চাকমা ওরফে সুকৃতি/বুইজ্জা চাকমা, হৃদয় কুমার চাকমা ও বুদ্ধমনি চাকমা।
এই মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আরও ৮ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

গত ২০০৬ সালের পহেলা ডিসেম্বর রাঙামাটির জুরাছড়িতে কিনা মোহন চাকমা নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হাত বিচ্ছিন্ন করে ও নির্যাতন করে হত্যা করেছিল আসামিরা।

রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদিন রায়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে সি-ডাব্লিউ মূলে আসামি বুদ্ধমনি চাকমার উপস্থিতি থাকলেও দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিদের মধ্যে সুবল ও হৃদয় কুমার চাকমা পলাতক রয়েছে।

চাঞ্চল্যকর কিনা মোহন চাকমা হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সময় রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট প্রতীম রায় পাম্পু উপস্থিত থাকলেও বাদি-বিবাদীপক্ষের আত্মীয়স্বজন কেউ উপস্থিতি দেখা না গেলেও বিবাদীপক্ষের উকিল অ্যাডভোকেট উষাময় খীসা আদালতে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিগত ২০০৬ সালের ১ পহেলা ডিসেম্বর তারিখে নিজের জাতীয় সশস্ত্র জেএসএস সন্ত্রাসীরা জুরাছড়ি থেকে রাঙামাটি আসার সময় জনপ্রিয় পাহাড়ি নেতা কিনা মোহন চাকমাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণ করার পর নির্জনস্থানে নিয়ে কিনা মোহন চাকমাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে গায়ের চামড়া তুলে ফেলা হয় এবং তার মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করে ক্ষতবিক্ষত ও দুই হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়।

তাকে এমন নির্মম ও নৃশংসভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। কথিত আছে গাছের সঙ্গে তাকে পেরেকও মারা হয়। কিনা মোহন চাকমাকে এমনভাবে হত্যা করার পর পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ জেএসএসের প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করে এমনকি এই হত্যার পরে পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম কেঁপে উঠে।

এই ঘটনার পরদিন কিনা মোহনের ছেলে প্রিয় কুমার চাকমা বাদী হয়ে জুরাছড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পহেলা ডিসেম্বরে দায়ের করা এই হত্যা মামলায় উপরোল্লেখিত তিনজনসহ অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।
পরবর্তীতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই গোবিন্দ শুক্ল দাশ গত ১ জুন, ২০০৭ সালে সর্বমোট ১১ জনকে আসামি করে আদালতে এই মামলার চার্জশিট দাখিল করেন।

পাহাড়ি-বাঙালি উভয় সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় কিনা মোহন চাকমাকে নির্মম ও নির্দয়ভাবে হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ৫ মাস ৮দিন পর প্রায় ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন রাঙামাটির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আহসান তারিক।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রাঙামাটিতে বেশ কয়েকটি অস্ত্র, হত্যা ও মাদকের মামলার রায় ঘোষণা করেছেন বিচারক মো. আহসান তারিক।

চলতি বছরের ৪ জুন রাঙামাটিতে যোগদানের পর মাত্র দুই মাস সময়ে চাঞ্চল্যকর ২০২১ ও ২৩ সালের অস্ত্র মামলায় ১৫ বছর ও ৭ বছর সাজা, মাদক মামলার পাঁচ বছর রায়সহ সর্বশেষ কিনা মোহন চাকমা হত্যা মামলার রায় দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এই বিচারক।

এই ধরনের উদ্যোগে রাঙামাটিতে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা অস্ত্র-বিস্ফোরক, অপহরণসহ হত্যা মামলার মতো মামলাগুলোসহ মামলার জট খুব দ্রুত সময়েই কমে আসবে বলেও ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।