চলতি বছর তিন দফার বন্যায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে ফেনীর কৃষিখাত। নষ্ট হয়েছে শতকোটি টাকার ধান, ফসল।
এ বছর তিন দফার বন্যায় ডুবে গিয়েছিল ফেনীর বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। কেউ হারিয়েছেন বীজ, বীজতলা, বালু জমা হয়ে কেউবা আবার হারিয়েছে জমির উর্বরতা। তবু হাল ছাড়েননি কৃষক। বুকের ভেতর জমে থাকা ক্ষত নিয়েই মাঠে নামিয়েছেন নতুন স্বপ্ন ‘আমান ধান’।
ফুলগাজী এলাকার কৃষক কবির আহম্মদ বলেন, গেল বছর আমন মৌসুমে ফলন একদমই ঘরে তোলা যায়নি বাজার থেকে কিনে খেতে হয়েছে। এ বছর ফলন নিয়ে কিছুটা আশাবাদী।
পরশুরামের চিথলিয়া এলাকার কৃষক সলিম উল্লাহ জানান, জমিতো খালি রাখতে পারবো না। বৃষ্টি কম থাকায় আমন আবাদে মাঠে নেমেছি। ফলন দেওয়ার মালিক আল্লাহ।
ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর এলাকার কৃষক আফসার উদ্দিন জানান, সরকার থেকে সার, বীজসহ ভর্তুকি পেলে কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে সহজ হতো।
কয়েক দফার বন্যার ক্ষতির মধ্যেও চলতি মৌসুমে আমন ধানের আবাদ হয়েছে ৩১ হাজার ১৭১ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৫৫ হেক্টর।
কৃষি বিভাগ বলছে, সপ্তাহ দুইয়ের মধ্যে বাকি জমিতেও আবাদের আওতায় আসবে। জেলার কৃষি অফিস বলছে, আবাদ বাড়াতে দেওয়া হয়েছে ভর্তুকি ও কৃষি সহায়তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর অতিরিক্ত পরিচালক (উদ্ভিদ সংরক্ষণ) মো. জগলুল হায়দার বলেন, ফেনীর মানুষের প্রধান ফলন আমন ধান। এটি ঠিকমতো না হলে মানুষের খোরাকিতে টান পড়ে। আবহাওয়া পরিস্থিতি ভালো থাকায় মানুষ এবার আমন ধান চাষে মাঠে নেমেছে। আশা করছি, লক্ষ্যমাত্রার বাইরে আরও এক হাজার জমিতে আমনের আবাদ হবে। তবে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষ দিক ও সেপ্টেম্বরে আবারও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ধান রোপণের পরপরই কৃষকরা নিচু জমির ধান আগেভাগে রক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চলতি বছর বাঁধভাঙা পানির তোড়ে জেলার অন্তত ২৯ হাজার কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমিতে আবাদ করা আউশ, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আদাক্ষেত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমিতে আবাদ করা আউশ, আমন বীজতলা, গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আদা ক্ষেত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবে, বন্যায় প্রায় ৩৮ কোটি সাত লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এতে অন্তত ১০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের সম্ভাবনা ছিল।
ফেনীর কৃষকদের কাছে মাঠের চারা শুধু ধানের নয় বরং স্বপ্নের। বন্যা-বাদলার দেশে প্রকৃতি যতই শত্রুতা করুক, বৈরী হোক। ভাটির এই জনপদের মানুষ জানে, কীভাবে প্রকৃতিকে জয় করতে হয়।
এসএইচডি/এএটি