ঢাকা, শনিবার, ২২ ভাদ্র ১৪৩২, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

জুমিয়াদের ফসলে ইঁদুরের হানা!

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৬, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫
জুমিয়াদের ফসলে ইঁদুরের হানা! জুমের ধান গাছের গোড়া কেটে দিচ্ছে ইঁদুর, শুকনো গাছের গোছা দেখাচ্ছেন এক কৃষক

রাঙামাটি: পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জনগণের অর্ধেক খাদ্যের যোগান আসে জুম ফসল থেকে। পাহাড়ের পাদদেশে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে জুমের জায়গা নির্ধারণ করার পর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে নির্ধারিত জায়গার জঙ্গল পরিষ্কার করে জুম চাষের উপযোগী করে তোলা হয়।

 

তারপর কেটে ফেলা আগাছা-জঙ্গল-ডালপালা রোদে শুকানো হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে তাতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর বৃষ্টির শুরুতে মে মাস থেকে সেখানে ধান, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, চিন্নাল, পাহাড়ি শিম, হলুদসহ প্রায় ১৫ ধরনের ফসলের বীজ বপন করা হয়। বীজ থেকে উৎপাদিত এসব ফসল পর্যায়ক্রমে উত্তোলন করা হয়।  

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জুমের ধান ঘরে তুলে থাকেন জুমিয়ারা।  

উৎপাদিত এসব ফসল বিক্রি করে জুমিয়ারা যেমন তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন, তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের বছরের অর্ধেক খাবারের যোগান দিয়ে থাকেন। তাই প্রতিবার জুম ফসলকে ঘিরে জুমিয়ারা নিজেদের স্বপ্ন বুনে থাকেন।  

জেলার দুর্গম উপজেলা বাঘাইছড়ির পর্যটন নগরী সাজেকের কয়েক হাজার জুমিয়াদের কপালে এবার চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাদের কঠোর পরিশ্রমের জুম ফসলে এবার ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। যে কারণে জুমিয়া পরিবারগুলোর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাজেক ইউনিয়নের দুর্গম শিয়ালদাই মৌজার ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। এসব জনগোষ্ঠী শুধুমাত্র জুম চাষের ওপর নির্ভশীল। গত আগস্ট মাসের শেষের দিকে জুমের ধান পাকতে শুরু করে। প্রতিদিন রাতের বেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর ক্ষেতে গিয়ে ধান খেয়ে নষ্ট করে ফেলছে।  

সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা বলেন, সাজেকের পাঁচটি গ্রামের জুম ধানের ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ২৩২ পরিবারের জুম ধান নষ্ট হয়েছে। এ ধান তারা ঘরে তুলতে পারছেন না। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিয়ালদাই, লুইপাড়ায় ৫৮টি পরিবার, হাচ্চ্যাপাড়ায় ৭০, জামপাড়ায় ১৬, অরুণপাড়ায় ৪০ ও লুংতিয়ানপাড়ায় ৪৮টি পরিবার।  

এছাড়া সাজেক ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জুম ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।  

শিয়ালদাই মৌজার হেডম্যান (মৌজা প্রধান) জৈইপুই থাং ত্রিপুরা বলেন, তুইচুই, ব্যাটলিংকসহ কয়েকটি স্থানে আগস্ট মাসের শেষের দিকে জুমের ধান পাকা শুরু হলে ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর ক্ষেতে গিয়ে ধান নষ্ট করে ফেলে। এছাড়া কোনো কোনো এলাকায় ধানে ফুল এসেছে, কোনো কোনো জুম ক্ষেতে ধানে শীষ এসেছে। ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর ধান গাছের গোড়া কেটে নষ্ট করে দিচ্ছে।  

এর আগে ২০২২ সালে সাজেক ইউনিয়নে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দিয়েছিল। ওই সময়ে পাঁচ হাজারের বেশি জুমিয়া পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বলে জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার (০২ সেপ্টম্বর) রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বাঘাইছড়ি উপজেলায় সফরে গেলে স্থানীয়রা জুম ধান ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রবের ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে জানান। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবেন বলে জানান।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এ মৌসুমে রাঙামাটিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে সাত হাজার টন চাল। শুধু বাঘাইছড়ি উপজেলায় এক হাজার ৫৪৭টি পাহাড়ে জুমের ধান আবাদ করা হয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক দশমিক ৭৮ টন চাল।  

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। তবে তথ্য পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।  

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।