ঢাকা, সোমবার, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

আদিরূপে ফিরবে লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪২, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫
আদিরূপে ফিরবে লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি মেরামতের কাজ চলছে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে।

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী লাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে সংস্কারের কাজ শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।  ধসপ্রায় এই ভবনে সংস্কারের কাজ শেষ হলে পর্যটকরা বরিশালের ঐতিহ্যবাহী জমিদারবাড়িটি দেখতে আসবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

জানা গেছে, বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার লাকুটিয়ায় অবস্থিত জমিদারবাড়ির সংস্কারকাজ গত ৪ মে শুরু হয়েছে। জমিদারবাড়ির উচ্চতা আট দশমিক ২০ মিটার, দৈর্ঘ্য ২৫ দশমিক ৪০ মিটার ও প্রস্থ নয় দশমিক ২০ মিটার। দোতলা ভবনে মোট নয়টি কক্ষ। দোতলা ভবনটির চারপাশে পুনঃনির্মাণ করা হচ্ছে গোলাকার ইটের পিলার। একইসঙ্গে দো ও নিচতলার ছাদ মেরামতের কাজ চলছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ হোসেন হৃদয় বলেন, ছোটবেলা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখে আসছি লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। এত বছর পর এটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করি, সংস্কার হলে প্রচুর দর্শনার্থী এই অঞ্চলে আসবে। এতে জমিদারি ইতিহাসও সংরক্ষণ হবে।

বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টোডিয়ান আরিফুর রহমান জানান, প্রথম পর্যায়ে ৬০ লাখ ৬৫ হাজার নয়শ ৩৫ টাকা ব্যয়ে ভবনের ভিত্তি, ইটের গাঁথুনি ও ছাদে নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। প্রাচীন দরজা-জানালা, মেঝে এবং আলো-বাতাস চলাচলের কাঠামো আপাতত এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত নয়। এগুলো পরবর্তী ধাপে যুক্ত করা হতে পারে।

সংস্কৃতিজন সুশান্ত ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, লাকুটিয়া জমিদার বরিশালের একটি ঐতিহ্যবাহী জমিদার পরিবারই ছিল না, তারা এ অঞ্চলের সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য একটা অংশ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে তাদের আত্মীয়তার সূত্র ছিল এবং বিশ্বখ্যাত লেখক অরুন্ধতী রায়ও এই পরিবারের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ইতিহাসের জায়গা থেকে তিনশ বছরের পুরোনো লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি বরিশাল অঞ্চলে জনগণের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অন্যতম কেন্দ্র ছিল, যেখানে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান করে প্রশিক্ষণসহ ওই অঞ্চলে যুদ্ধের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।  

২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সফিউর রহমানকে এক চিঠিতে জমিদারবাড়ির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালতের সলিসিটার ও জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারী পঙ্কজ রায়ের কন্যা আলপনা রায়।

চিঠিতে তিনি ভবনটিকে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের জোর দাবি জানান। তার এই চিঠির ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বরিশাল জাদুঘরকে প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দেয়।
লেখক ও গবেষক আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, বরিশালের উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে লাকুটিয়া জমিদারদের অবদান ছিল, যে কারণে তাদের আধুনিক বরিশালের রূপকারও বলা হতো। বরিশাল মহানগরের প্রতিষ্ঠা, বিকাশ ও উন্নয়নের জন্য তাদের অবদান ছিল। তৎকালীন সময়ে মেইল স্টিমার সার্ভিসের একটি স্টেশন জমিদারদের কল্যাণে লাকুটিয়ার কাছাকাছি শায়েস্তাবাদেও ছিল। শিক্ষা বিস্তারেও তাদের এ অঞ্চলে অবদান ছিল।  

সার্বিকভাবে লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি সংরক্ষণের সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে বরিশালবাসী। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) গোডাউন ও ট্রাক্টর রাখার ঘর থাকায় ভবনটির নান্দনিকতা ব্যাহত হচ্ছে। তাই সেগুলো দ্রুত সেখান থেকে সরিয়ে লাকুটিয়া জমিদারবাড়ির আঙিনা ও চারপাশ ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা হলে সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে ফুটে উঠবে।

উল্লেখ্য, জমিদার রূপচন্দ্র রায় ছিলেন লাকুটিয়া জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নাতি রাজচন্দ্র রায়ের সময় জমিদারির পরিধি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তথ্যানুযায়ী ২১ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর জমিদার বাড়ির অবস্থান। যা ১৬ থেকে ১৭ শত খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি নির্মাণ করা হয়েছিল। জমিদার বাড়ির সামনে পাঁচটি ও পেছনে আটটি মঠ ছিল। ইট-পাথর ও সুড়কির বানানো জমিদারবাড়ির বেশিরভাগ স্থাপনাই আট ও দোচালার তৈরি।

এমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।