যশোর: যশোর উপশহর সাত নম্বর সেক্টরের শিশুপার্ককে ‘ঈদগাহ’ দাবি করে জেলা পরিষদ থেকে টাকা বরাদ্দ নিয়ে চলা কাজ এলাকাবাসীর বাধার মুখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফেরত চাওয়া হয়েছে বরাদ্দের টাকা।
বিষয়টি নিয়ে আরো কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন যশোর জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শাহীন।
অন্যদিকে, পার্কটি যে কর্তৃপক্ষের অধীন সেই উপশহর হাউজিং স্টেট কর্তৃপক্ষের দাবি, জেলা পরিষদ তাদের জায়গায় অর্থ বরাদ্দের আগে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। হাউজিং স্টেট কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে কিছু জানতেও চাওয়া হয়নি।
শিশুপার্কের মধ্যে ইট বিছানোর ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, এই পার্কটি দখল হয়ে গেলে শিশুরা আর কোথাও খেলাধুলা করতে পারবেনা। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আশপাশের প্রায় দশ হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপশহরের ই-ব্লক জামে মসজিদের দক্ষিণপাশে সাত নম্বর সেক্টরে বিশাল একটি মাঠ রয়েছে। এর পশ্চিম মাথায় ঈদগাহের জন্য স্থাপিত আছে মিম্বার বা মেহরাব। মিম্বারের সামনের বেশ কিছু জমিনে ইট বিছানো। সামান্য দূরে মাঠের মধ্যে কিছু বালি জড়ো করা।
স্থানীয়রা জানান, স্থানটি একটি শিশুপার্ক। উপশহর হাউজিং স্টেটের ৬৩ সালের নকশায় এর উল্লেখও রয়েছে। এখানে শিশুরা সকাল-বিকেল খেলাধুলা করে। বিয়ে, জানাজাসহ অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতেও এটি ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি বছরে দুটি ঈদের নামাজও এই পার্কে অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যবসায়ী রকিব মোস্তফা রকু বলেন, এই শিশু পার্কটি উপশহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া ও শেখহাটি গ্রামের প্রায় দশ হাজার মানুষ ব্যবহার করে। শিশুরা এখানে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টনসহ নানা খেলাধুলা করে।
স্বাস্থ্য সচেতন অনেক বয়স্ক নারী-পুরুষ এই পার্কে হাঁটাহাটি করেন, বিকেলের দিকে বসে গল্প করেন। প্রতি বছর এখানে দুটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সেজন্য মিম্বারও স্থাপন করা হয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ই-ব্লক জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটি শিশুপার্কের কথা চেপে যেয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জেলা পরিষদ থেকে ঈদগাহ সংস্কারের নামে কিছু বরাদ্দও নিয়ে এসেছেন। যার প্রথমাংশ দিয়ে পার্কটির মাঠে ইট বিছানোর কাজ শুরু করা হয়েছে।
এলাকাবাসী বলেন, এই পার্কে ইট বিছানো হলে তা আর শিশুদের খেলার উপযোগী থাকবে না। তারা বলেন, কোনো ইট বিছানো যাবে না। প্রয়োজন পর্যাপ্ত মাটি ফেলে পার্কটিকে উঁচু করা। পার্কের চারপাশে ইটের চিকন রাস্তাও করা যেতে পারে হাঁটাচলা করার জন্য। এতে পার্কটি যেমন রক্ষা পাবে, ঈদের জামাত আয়োজনেও সমস্যা হবে না।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে ই-ব্লক জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রেজাউল ইসলাম এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে থাকা স্থানীয় একজন অধিবাসীকে দেখিয়ে ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলেন, ‘উনি বেশি জানেন, উনার কাছে শোনেন, আমি কিছু জানিনা’।
যশোর উপশহর হাউজিং স্টেটের প্রকৌশলী ইমদাদুল ইসলাম তুহিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থানটি শিশুপার্ক হিসেবেই স্টেটের ম্যাপে উল্লেখ আছে। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে সেখানে একটি ঈদগাহ করা হয়েছে। এটা কিভাবে হলো জানিনা। ’
জেলা পরিষদের বরাদ্দের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’আমরা এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে জেনেছি। জেলা পরিষদের উচিত ছিল অফিসিয়ালি আমাদের জানানো। তারা আমাদের কিছুই জানায়নি। এ নিয়ে ফাইল চালাচালি হওয়ার কথা, তাও হয়নি। কীভাবে জেলা পরিষদ এই বরাদ্দ দিল তা বুঝি না’।
যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস এম শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার নলেজে ছিল না। আগের সিইও সাহেবের আমলের ঘটনা। টাকাটা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে ঈদগাহ দেখিয়ে’।
তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। বলেছি টাকা ফেরত দিতে হবে। এরপরও আরো কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’।
এসএইচ