কক্সবাজার: শাবনূর আক্তারের স্বামী মোহাম্মদ রফিক একজন পরিবহন শ্রমিক। প্রায় ছয় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়।
কারণ জন্মের দুই বছরের মাথায় জানা যায়, একমাত্র মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতি মাসেই মরিয়মকে দিতে হয় রক্ত। এতে সংসারে অর্থের টানাটানি শুরু হয় এবং পরিবহন শ্রমিক স্বামী রফিকের একার পক্ষে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকায় মেয়েকে চিকিৎসা করানো বেশ কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থায় শাবনূর আক্তার দিনমজুরির কাজ নেন। কিন্তু এতেও অর্থাভাব লেগেই থাকে। এবার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত মরিয়মের মা শাবনূর আক্তার খুঁজে পেয়েছেন জীবনের দিশা। কেননা বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে তিন মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ শেষে তাকে একটি সেলাই মেশিনসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া অ্যাকাডেমির হলরুমে নিজের সংসারের করুণ বর্ণনা দিচ্ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঘোনার পাড়ার পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী শাবনূর আক্তার। বর্তমানে তিনি আবার অন্তঃসত্ত্বা বলেও জানান।
শাবনূর আক্তারের মতো আরেক নারীর দেখা মিলল সেই জব্বারিয়া একাডেমিতে। তার নাম আঁখি মণি (২৫)। তিনি বর্তমানে খাবার হোটেলে শ্রমিকের কাজ করছেন।
আঁখি মণি জানালেন, সাড়ে ছয় বছর আগে তার বিয়ে হয় কক্সবাজারের নয়া পাড়ার গাড়িচালক আমানুল হকের সঙ্গে। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় তাকে অন্তঃসত্ত্বা রেখে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান স্বামী। এতে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে আঁখি মণির সংসারে। উপায় না পেয়ে পেটের দায়ে খাবার হোটেলে শ্রমিকের কাজ নেন। পরে তিনি জন্ম দেন কন্যা সন্তান সুমাইয়া জান্নাতকে। বর্তমানে সুমাইয়ার বয়স ছয় বছর। প্রতিদিন খাবার হোটেলে শ্রমিকের কাজ করার সময় সঙ্গে থাকে সুমাইয়াও।
বসুন্ধরা শুভসংঘের পক্ষ থেকে সেই প্রতীক্ষিত সেলাই মেশিন পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আঁখি মণি। তিনি বলেন, দিনের বেলায় হোটেলে শ্রমিকের কাজ করবো। বাকি সময় বাড়িতে বসেই সেলাই মেশিনে পোশাক তৈরি করে যে টাকা আয় হবে, তা দিয়ে মেয়ের নাকের চিকিৎসা করাবো এবং তাকে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব। যাতে সে পড়ালেখা শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।
সারাদেশের মতো রোববার বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে কক্সবাজার সদর এলাকার দরিদ্র, স্বামীহারা, স্বামী পরিত্যক্তা, দরিদ্র শিক্ষার্থীসহ ২০ জন উপকারভোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে সেলাই মেশিন ও প্রয়োজনীয় উপকরণ। তার আগে তাদের তিন মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। উপকারভোগী এসব নারীর প্রত্যেকের জীবনেই রয়েছে একেকটি মর্মস্পর্শী গল্প। আর সেসব নারীকেই খুঁজে খুঁজে বিনামূল্যে প্রশিক্ষণসহ দেওয়া হলো বসুন্ধরা গ্রুপের এ সহায়তা। এ সময় তারা বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
বসুন্ধরা শুভসংঘ কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ মো. ছৈয়দ করিম। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল হুদা চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম, বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্সের সম্পাদক নজরুল ইসলাম, বসুন্ধরা শুভসংঘের কক্সবাজার শাখার প্রধান উপদেষ্টা ও কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তোফায়েল আহমদ, বসুন্ধরা শুভসংঘের উপদেষ্টা ও সাংবাদিক দীপক শর্মা দিপু, সাধারণ সম্পাদক আরাফাত সাইফুল আদর, সদস্য খাইরুল হাসান মনি।
উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন, ডেইলি সানের জেলা প্রতিনিধি নেছার আহমদ, কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি ছোটন কান্তি নাথসহ অনেকে।
প্রধান অতিথি এবং বিশেষ অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বসুন্ধরা গ্রুপের এ মহৎ কাজকে সাধুবাদ জানিয়ে আগামীতেও এমন মানবিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান জানান, বসুন্ধরা গ্রুপ সারাদেশে মানবিক কাজের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। শুভ কাজে সবার পাশে- এ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের আয়োজনে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন সারাদেশের মতো কক্সবাজারের হতদরিদ্র নারীদের খুঁজে বের করে স্বাবলম্বী করার প্রয়াস হিসেবে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন বিতরণ করছে। এবার কক্সবাজার সদরে ২০ জন, টেকনাফের ৩০ জন এবং উখিয়া উপজেলার ১০ জনসহ সর্বমোট ৬০ নারীকে সেলাই মেশিন দেওয়া হলো।
এসআই