ঢাকা, শনিবার, ২২ ভাদ্র ১৪৩২, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বসুন্ধরা শুভসংঘ

সারা দেশে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:০৩, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫
সারা দেশে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার

>> বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারের ধারণাটি মূলত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের মাথা থেকে এসেছে। তাঁরই প্রচেষ্টা ও আগ্রহে এবং সার্বিক দিকনির্দেশনায় সারা দেশে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার স্থাপন করা হচ্ছে।



সৈয়দপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে 
মননবাড়ি বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার

আজকের বাংলাদেশে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে পাঠাগারের সংখ্যা যেমন কম, তেমনি পাঠক তৈরির প্রয়াসও দুর্লভ। এমনই এক কঠিন সময়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ তৈরি করেছে ভিন্ন এক ধারা। একটি নীরব সামাজিক বিপ্লব হিসেবে সারা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চালু করা হচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নীলফামারীর সৈয়দপুরে ‘মননবাড়ি বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার’ উদ্বোধন করা হয়েছে।

গত ২২ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে উপজেলার এক নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত কামারপুকুর সরকারপাড়ায় এই পাঠাগারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ছোটদের জন্য গল্পের বই, শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য ও সহপাঠ্য বই আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য আত্মোন্নয়ন, ধর্ম, ইতিহাস ও সাহিত্যের অসাধারণ সংগ্রহ রয়েছে এখানে। এই পাঠাগারে বই পড়তে কারো টাকার দরকার নেই, চাই শুধু আগ্রহ ও সময়।

দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পাঠাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এম এম আলী রেজা রাজু, হাজারীহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. লুৎফর রহমান চৌধুরী, সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।

বসুন্ধরা শুভসংঘ সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের সিনিয়র শিক্ষক আলহাজ মো. নাছিম রেজা শাহ্র সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক ও শিশু স্বর্গ বিদ্যা নিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মো. শফিকুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বসুন্ধরা শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল খালেক ফারুক, কামারপুকুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. জাহেদুল ইসলাম প্রমুখ। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আশপাশের স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর পদচারণে মুখরিত ছিল পুরো পাঠাগার প্রাঙ্গণ।

সকাল থেকেই অনেকে এসে বই ঘেঁটেছে, পড়েছে।

নিয়মিত চারটি পত্রিকা রাখা হবে এই পাঠাগারে, এমনটি জানালেন আয়োজকরা। শুক্রবার হওয়ায় পাঠাগারের পাশের মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করা বসুন্ধরা গ্রুপের মানবিক কাজের ধারাবাহিকতার জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পাঠাগার ঘুরে দেখেন।

অনেকে বসে বই পত্রিকা পড়েন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, সবাই মিলে যদি একটি গ্রামীণ পাঠচর্চা আন্দোলন গড়ে তুলতে পারি, তবে শুধু নেতৃত্বের নয়, চিন্তা, মনন ও নৈতিকতার বাতিঘর হয়ে উঠবে এই পাঠাগার। আমাদের প্রজন্মকে বইয়ের সঙ্গে ভালোবাসা শেখাবে, আত্ম-আবিষ্কারে সাহায্য করবে এবং একটি মানবিক ও আলোকিত সমাজ গড়ে তুলবে। আমরা স্বপ্ন দেখি, একদিন এই পাঠাগার হবে স্কুল শিক্ষার্থীদের পাঠচর্চার আশ্রয়, তরুণদের আত্মনির্মাণের স্থান এবং প্রবীণদের স্মৃতিচারণার নিরিবিলি উঠান, যেখানে থাকবে সাহিত্যসন্ধ্যা, গবেষণা পাঠ, স্বেচ্ছাসেবী প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিভিত্তিক ডিজিটাল লার্নিং ব্যবস্থা।

বসুন্ধরা শুভসংঘের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম বলেন, ‘এই পাঠাগারটি আমার চোখে কেবল একটি পাঠাগার নয়, এটি একটি মূল্যবোধের কেন্দ্র, একটি সমাজ পরিবর্তনের সূত্র; যেখানে পাঠে শুরু হয় পরিচয়, চিন্তায় জন্ম নেয় নেতৃত্ব, আর আলাপে গড়ে ওঠে মানবিক সম্পর্ক। আমি বিশ্বাস করি, এই পাঠাগার আগামী দিনে বাংলাদেশের শত শত তরুণের চিন্তাকে প্রসারিত করবে। ’

আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মানুষের জীবন ও চরিত্র গঠনে এবং স্বপ্নপূরণে বই পড়া প্রয়োজন। বই ও পাঠাগার জ্ঞান অর্জনের একমাত্র মাধ্যম। স্বপ্নপূরণে শুধু ক্লাসের পাঠ্যবই নয়, সৃজনশীল ও মনীষীদের জীবনী নিয়ে লেখা ভালো বইগুলো মনোযোগসহকারে পড়তে হবে। উচ্চশিক্ষিত ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক পড়তে হবে, তবে জ্ঞান অর্জন তথা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে ক্লাসের বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বই নিয়মিত পড়া উচিত। ’ লুৎফর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এই পাঠাগারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত পল্লীর শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। শুধু পাঠাগার করলেই হবে না, পাঠক ধরে রাখতে হবে। বর্তমান সময়ে পাঠাগার ধরে রাখা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ। আর এখন আমরা সবাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আসক্ত। তার পরও এই পাঠাগার আমাদের শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে বই ও পত্রপত্রিকা পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে বলে আমি বড় আশাবাদী। ’ সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এম এম আলী রেজা রাজু বলেন, ‘এই পাঠাগার স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। এখন থেকে তারা পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বইও পড়ার সুযোগ পাবে। তারা যেমন এখানে বসে বই পড়বে, তেমনি এখান থেকে বই নিয়ে গিয়ে অবসরে বাড়িতে বসেও পড়তে পারবে। এলাকার সাধারণ মানুষ পাঠাগারে থাকা দৈনিক পত্রিকাগুলো পড়ে দেশ-বিদেশের দৈনন্দিন খবরগুলো জানার সুযোগ পাবে। বসুন্ধরা শুভসংঘের এমন অসাধারণ একটি উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি রইল আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ’

আব্দুল খালেক ফারুক বলেন, ‘বসুন্ধরা পাঠাগারের ধারণাটি মূলত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের মাথা থেকে এসেছে। তাঁরই প্রচেষ্টা ও আগ্রহে এবং সার্বিক দিকনির্দেশনায় সারা দেশে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার স্থাপন করা হচ্ছে। এটি একটি শুভ উদ্যোগ। আমি নিজেও ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমার এলাকায় একটি পাঠাগার পরিচালনা করছি। পাঠাগার ধরে রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর বর্তমান সময়ে পাঠক ধরে রাখা আরো দুরূহ ব্যাপার। তাই নিয়মিত তদারকিতে রাখতে হবে। পাঠকরা কোন কোন বই পছন্দ করেন, সেসব সংগ্রহে রাখতে হবে। পাঠক ধরে রাখতে প্রতি মাসে বইয়ের ওপর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ব্যবস্থা রাখতে হবে। এতে পাঠকসংখ্যা যেমন বাড়বে, আমাদের সমাজও আলোকিত হবে। ’

কাপাসিয়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার 
আলোকিত জাতি গড়ার এক নীরব বিপ্লব
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার চরখিরাটি গ্রামের বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারটি পাঠকপূর্ণ থাকে সব সময়

নীরবতায় ঢেকে থাকা গ্রামীণ জনপদে হঠাৎ করেই যেন আলোর ঝলকানি চোখে পড়ে। সেই আলোটি আসছে বসুন্ধরা শুভসংঘের পাঠাগার থেকে। একদিন গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের চরখিরাটি দিয়ে মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলাম। চোখে পড়ে যায় ছোট্ট একটি সাইনবোর্ড ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার’।

অনেকটুকু সামনে এগিয়ে গিয়েও কৌতূহল আমাকে স্থির থাকতে দেয়নি, ফিরে এলাম পাঠাগারের সামনে। সত্যি বলতে, এই ফিরে আসাটাই আমার চিন্তার জগতে এক নতুন দুয়ার খুলে দিল। পাঠাগারের দায়িত্বে থাকা কিছু মানুষের আন্তরিকতা ছুঁয়ে গেল হৃদয়। এমনভাবে গুছিয়ে সৌম্য ভাষায় পাঠাগার ও বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলছিলেন তাঁরা, মনে হয় এই পথের পাশে জ্ঞান আর মানবিকতার দীপ্ত আলো লুকিয়ে ছিল, যা আজ আবিষ্কার করলাম।
এমন একটি পাঠাগার সাহিত্যানুরাগী ও পাঠাভ্যাস গড়ে তোলা মানুষের জন্য শুধু আশীর্বাদই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক আলোকস্তম্ভ। বই পড়া মানেই জ্ঞান আহরণ, আত্মানুসন্ধান ও উন্নত মানসিকতার চর্চা। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই পাঠাগার শুধু বই পড়ার একটি স্থান নয়, বরং একটি আলোকিত সমাজ গড়ার প্রতিজ্ঞা, আলোকিত জাতি গড়ার এক নীরব বিপ্লব। তাই আমি দেরি না করে পাঠাগারের সদস্য ফরম পূরণ করলাম।

এই মহান উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কারণ তাঁরা শুধু একটি পাঠাগার তৈরি করেননি, গড়ে তুলছেন আলোকিত ভবিষ্যৎ। পাঠাগারে প্রবেশের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা আমার মনোজগতে এমনভাবে প্রোথিত হলো, যেন বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া কোনো আত্মিক ঠিকানার খোঁজ পেলাম। মনে হচ্ছিল এ শুধু পাঠাগার নয়, একটি আন্দোলনের সূচনা, যেখানে লুকায়িত আছে জ্ঞান, মানবিকতা ও নেতৃত্ব গঠনের গভীর আকাঙ্ক্ষা। এমন শান্ত, প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা পাঠাগার হয়তো বাহ্যিকভাবে খুব ছোট, কিন্তু এর অভ্যন্তরীণ শক্তি একেবারে মৌলিক ও সময়ান্তরকারী।

প্রতিটি বই যেন উচ্চারণ করে একেকটি বার্তা ‘পড়ো, জানো, বদলে যাও, বদলে দাও’। এই পাঠাগার শুধু সাহিত্য বা শিক্ষার চর্চা নয়, বরং এখানে তৈরি হচ্ছেন মননশীল পাঠক, যাঁরা ভবিষ্যৎ সমাজের জন্য হয়ে উঠবেন আলোকিত নেতা, চিন্তক এবং মানবিক মানুষ, যাঁরা পাঠাগারকে দেখেন নতুন সমাজ বিনির্মাণের উপকরণ হিসেবে। এই পাঠাগারের মাধ্যমে আমরা যদি গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব করিয়ে দিতে পারি, তাহলে একদিন তারা কেবল চাকরির পেছনে দৌড়াবে না, বরং নেতৃত্ব দেবে, সমাজ বদলাবে, জাতি গড়বে। একজন শিক্ষক হিসেবে দেখেছি, অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী শুধু সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে হারিয়ে যায়। এই পাঠাগার সেই দিকনির্দেশনার স্থান হতে পারে, যেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেরাই নিজেকে খুঁজে পাবে বইয়ের পাতায়।

বই হবে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার। পাঠাগার হবে একটি জাতির চেতনার সূতিকাগার। বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার আমাদের প্রত্যেককে আহ্বান জানায়, আসুন আমরা সবাই মিলিত হই আলোকিত জাতি গড়ার পথে।

পটুয়াখালী মহিলা কলেজে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার
অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ
অবসর সময়ে পাঠাগারে বই পড়ে সময় কাটান শিক্ষার্থীরা

জ্ঞানের আলোতে আলোকিত সমাজ গড়তে পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজে গড়ে উঠেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার। ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৩টা বাজলেই বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারে ভিড় জমে শিক্ষার্থীদের। বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে থাকে পাঠকরা। দিন দিন পাঠাগারে বাড়ছে পাঠকসংখ্যা, অন্যদিকে বাড়ছে বইয়ের চাহিদাও।

শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনে পাঠাগারটি ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের। পটুয়াখালী সরকারি মহিলা কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মারজিয়া ঋতু বলেন, ‘বিকেলটা আমাদের মোবাইলে ভিডিও বা রিলস দেখে সময় নষ্ট হতো। এখন প্রতিদিন বিকেলে পাঠাগারে বসি। বই পড়লে নিজেকে যেমন শাণিত করা যায় আবার অন্তরচক্ষু খুলে যায়।

বইয়ের মধ্যে ডুবে থেকে কখন যে সময় কেটে যায় নিজেও জানি না। ’ দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল বলে, ‘এর আগে পাঠাগারে বসে বই পড়া হয়নি। পাঠাগারে বসে বই পড়ার অন্য রকম অনুভূতি। একসঙ্গে অনেক মানুষ বসে আছি, অথচ সবাই আপন ভুবনে ব্যস্ত।

মাথার মধ্যে অনেক চিন্তা ঘুরপাক খেলেও বাইরে থেকে শান্ত-স্নিগ্ধ। পাঠাগার আমাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সেতুবন্ধ তৈরি করে। মানুষের জ্ঞানতৃষ্ণা মেটায়, গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধানে সহায়তা করে। একই সঙ্গে সমাজে সংহতি ও মুক্তচিন্তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ’ জেরিন, মারুফা, এলমাসহ অনেকেই বলেন, বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার থাকায় আমরা সহজেই যেকোনো বই হাতের কাছে পাই।

অনেক দুর্লভ বইও এই পাঠাগারে রয়েছে, যা আমাদের আরো উৎকর্ষ করবে। আশা করি, বসুন্ধরা শুভসংঘ এভাবেই সুন্দর আগামীর জন্য কাজ করে যাবে।

পাঠক সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে
মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যক্ষ, সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ

বই ও পাঠাগার একে অপরের পরিপূরক। জ্ঞান আহরণের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বই। বই পড়ে যেমন জ্ঞান অর্জন করা যায়, তেমনি একজন সমৃদ্ধ মানুষ হওয়া যায়। এই বইকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় একটি পাঠাগার।

বসুন্ধরা শুভসংঘের পাঠাগার স্থাপন একটি অনেক বড় উদ্যোগ। ছোট পরিসরে শুরু করা হলেও এটি অনেক গুরুত্ব বহন করে। কারণ শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে একটি পাঠাগার অনেক বেশি ভূমিকা রাখে। বসুন্ধরা শুভসংঘের পাঠাগারগুলো যেমন পাঠক তৈরি করবে, তেমনি জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

এই পাঠাগারে সব বয়সী মানুষ জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও এখানে এসে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়ার সুযোগ পাবে। এতে তারা নিজেকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করতে পারবে। ভালো মানুষ হতে হলে এবং নিজেকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে বড় বড় মনীষী তথা কীর্তিমান ব্যক্তির জীবনী ও কবি-সাহিত্যিকদের বই পড়তে হবে।

দেশের শিল্প গ্রুপগুলোর মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ একেবারে ব্যতিক্রম। কারণ আগে থেকে তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দেশের শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান রাখছে। তারা যেমন দেশের অসচ্ছল মেধাবী বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করছে, তেমনি বিভিন্ন জায়গায় পাঠক তৈরিতে পাঠাগার স্থাপন করছে। বসুন্ধরা শুভসংঘের পাঠাগারগুলো সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশে বিপুলসংখ্যক পাঠক সৃষ্টি করা যেতে পারে। আর আমি উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে এ ধরনের পাঠাগার স্থাপনের জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। সেই সঙ্গে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।

শিক্ষিত জাতি গঠনের উদ্যোগ
এম এম আলী রেজা রাজু, উপজেলা প্রকৌশলী, সৈয়দপুর, নীলফামারী

বর্তমান সময়ে প্রায় প্রতিটি পরিবারের ছেলেমেয়ে সুযোগ পেলেই মোবাইল নিয়ে বসে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করে। ছোট ছেলেমেয়েরা চুম্বকের মতো মোবাইলে আকৃষ্ট হয়, বিশেষ করে মা-বাবার হাতে মোবাইল দেখলেই তারাও মোবাইল ব্যবহারের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়। আর মা-বাবার হাতে বই দেখলে কিংবা মা-বাবাকে বই ও পত্রপত্রিকা পড়তে দেখলে তারাও বই ও পত্রিকাগুলো নাড়াচাড়া করবে।

মননবাড়ি বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারে বিভিন্ন রকমের বই এবং চারটি পত্রিকা আছে। একই পরিবারের মা-বাবা ও তাঁদের সন্তানসহ এই পাঠাগারে আসার সুযোগ আছে। মা-বাবা পত্রিকা বা যেকোনো বই পড়তে পারেন, আর সন্তানকে তার বয়স অনুযায়ী পছন্দের বইগুলো দিতে পারেন। মা-বাবা ব্যস্ত থাকলে দাদা-দাদি কিংবা নানা-নানির সঙ্গেও পাঠাগারে আসতে পারে।

অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, সপ্তাহে অন্তত দুই দিন অবসর সময়ে আপনার সন্তানকে পাঠাগারে নিয়মিত নিয়ে আসার অভ্যাস গড়ুন। এতে আপনার সন্তান সমাজে বিরাজমান সব বদ-অভ্যাস থেকে দূরে থেকে শিক্ষার আলোতে আলোকিত হবে। জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ করে উদ্ভাবনী ভাবনা নিয়ে সমাজে নতুনত্ব আনবে। পাঠক, বই এবং গ্রন্থাগারিকদের মধ্যে সব সময় একটা মেলবন্ধন বা স্বতঃস্ফূর্ততা বিরাজ রেখে এই পাঠাগারের কার্যপরিধি আরো সমুন্নত হবে।

যেমন পাঠক, তেমন বই সরবরাহ, অশিক্ষিত ব্যক্তিকে শিক্ষিতকরণের ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট সময়ান্তর সৃজনশীল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলে পাঠক বাড়বে। আশা করি, সৈয়দপুর শহরের পাশে কামারপুকুর ইউনিয়নে অবস্থিত মননবাড়ি বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারের এই মহান উদ্যোগটি প্রতিটি গ্রামে বিকশিত হবে এবং এ দেশের প্রতিটি পরিবার ও প্রতিটি নাগরিক এর সুবিধা পাবে।

মোবাইল থেকে বেরিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা
সালফিয়া আক্তার, শিক্ষার্থী, সৈয়দপুর, নীলফামারী

সৈয়দপুর একটি ছোট্ট উপজেলা। উপজেলার আশপাশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য তরুণ মেধাবী, যাদের লেখাপড়ার পাশাপাশি অবসর সময় কাটে মোবাইল গেম, আড্ডা কিংবা অহেতুক ঘুরেফিরে। এর মূল কারণ হলো, আমাদের এলাকায় সময় কাটানোর জন্য ইতিবাচক পরিবেশ ও সুযোগের অভাব রয়েছে। সম্প্রতি সৈয়দপুর উপজেলার কিসামত কামারপুকুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে মননবাড়ি বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার উদ্বোধন করা হয়েছে।

আশ্চর্যজনকভাবে এর পর থেকে দৃশ্যপট বদলাতে শুরু করেছে। এলাকার তরুণরা এখন মোবাইল গেম ও নেশা থেকে দূরে সরে এসে বইয়ের পাতায় খুঁজে নিচ্ছে জ্ঞানের আলো। অবসরে পাঠাগারে এসে তারা বই পড়ে সময় কাটাচ্ছে, শিখছে নতুন নতুন বিষয়, আর ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ ঘটছে।

একটি পাঠাগার একটি বাতিঘর
লামিয়া আক্তার, শিক্ষার্থী, সানফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ, সৈয়দপুর

পাঠাগার হলো জ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্র, যা মেধা, মনন ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষকে বই পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করে এবং তরুণ প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে উদ্বুদ্ধ করে। বইয়ের মাধ্যমে মানুষ চিন্তার জগতে প্রবেশ করে, নতুন দিগন্তের সন্ধান পায়। আমাদের এলাকায় চালু হওয়া বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার অন্য রকম একটি আবহ তৈরি করেছে।

এটি শুধু বইয়ের সংগ্রহশালা নয়, বরং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্য অপরিহার্য, তেমনি মানসিক পুষ্টির জন্য অপরিহার্য হলো বই। আর পাঠাগার হলো সেই বইয়ের আধার। তাই পাঠাগার কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, এটি মানবসভ্যতার অমূল্য সম্পদ।

প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি শহরে এমন পাঠাগার গড়ে তোলা গেলে তা জাতির জন্য হবে আলোকবর্তিকা, একটি বাতিঘর, যা মানুষকে পথ দেখাবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বসুন্ধরা শুভসংঘ এর সর্বশেষ