নিজের শৈশবের নায়ক নোভাক জোকোভিচকে হারিয়ে মায়ামি ওপেনের শিরোপা জিতলেন ১৯ বছর বয়সী চেক টেনিস তারকা ইয়াকুব মেনসিক।
রোববার রাতের ফাইনালে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে তিনি ৭-৬ (৭-৪), ৭-৬ (৭-৪) সেটে হারান সার্বিয়ান কিংবদন্তিকে।
২৪টি গ্র্যান্ড স্লামজয়ী জোকোভিচের জন্য এটি ছিল ১০০তম এটিপি শিরোপা জয়ের সুযোগ। কিন্তু মেনসিক তাকে আরও অপেক্ষায় রাখলেন। মজার বিষয় হলো, ২০০৬ সালে যখন জোকোভিচ তার প্রথম শিরোপা জিতেছিলেন, তখন মেনসিকের বয়স ছিল মাত্র ১০ মাস!
মেনসিক এখন মায়ামি ওপেনের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন, কেবল কার্লোস আলকারাজ ও রাফায়েল নাদালের পরেই তার নাম। মাস্টার্স ১০০০ সিরিজের ইতিহাসেও তিনি নবম সর্বকনিষ্ঠ শিরোপাজয়ী।
জোকোভিচই অনুপ্রেরণা
মেনসিকের টেনিস ক্যারিয়ারে জোকোভিচের বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০২২ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর যখন তিনি জুনিয়র খেলোয়াড় ছিলেন, তখন জোকোভিচ তাকে অনুশীলনে আমন্ত্রণ জানান। তাই শিরোপা জয়ের পর আবেগঘন ভাষায় মেনসিক বলেন, "জোকোভিচই আমার এখানে থাকার মূল কারণ। "
তিনি তার ফিজিওথেরাপিস্টকেও ধন্যবাদ জানান, যিনি তাকে এমন এক চোট থেকে ফিরিয়ে আনেন, যার কারণে তিনি প্রথম রাউন্ড থেকেই নাম প্রত্যাহারের কথা ভাবছিলেন।
"প্রথম ম্যাচের মাত্র এক ঘণ্টা আগে আমি নাম প্রত্যাহারের কাগজ হাতে নিয়েছিলাম," বলেন মেনসিক।
"আমি শুধু সৌভাগ্যবান ছিলাম যে, রেফারি তখন লাঞ্চে ছিলেন! আমি চিকিৎসা নিয়ে খেলতে পারি। আমার ফিজিও একপ্রকার 'অলৌকিক' কাজ করেছেন, আর তার কারণেই আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে আছি। "
কঠিন ম্যাচ, দুর্দান্ত জয়
ফাইনালের দিন বৃষ্টির কারণে ম্যাচ শুরু হতে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি দেরি হয়। তবে শুরু থেকেই মেনসিক ছন্দ খুঁজে পান, যেখানে জোকোভিচ কিছুটা ধীর ছিলেন।
প্রথম সেটে দ্রুত ৪-১ গেমে এগিয়ে যান মেনসিক। অন্যদিকে, জোকোভিচ শুরুতে বেশ সংগ্রাম করেন—দুইবার পড়ে যান, চোখে ফোলাভাবের কারণে আই ড্রপ ব্যবহার করেন, এমনকি হাতের গ্রিপ ভালো করতে সাওডাস্ট ব্যবহার করেন।
এরপর তিনি ধীরে ধীরে ছন্দ ফিরে পান এবং সেটটি টাইব্রেকারে নিয়ে যান। তবে সেখানেও শুরুতেই পিছিয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত সেটটি মেনসিক জিতে নেন।
দ্বিতীয় সেটেও মেনসিক দারুণভাবে খেলেন। তিনি একবারও ব্রেক পয়েন্টের মুখোমুখি হননি। অন্যদিকে, গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে জোকোভিচ বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
শেষ পর্যন্ত ম্যাচ আবারও টাইব্রেকারে গড়ায়, যেখানে মেনসিক শুরু থেকেই জোকোভিচকে চাপে রাখেন। তিনটি ম্যাচ পয়েন্ট তৈরি করেন তিনি। প্রথমটি বাঁচালেও দ্বিতীয়টিতে মেনসিক দুর্দান্ত এক সার্ভ দিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেন।
নতুন উচ্চতায় মেনসিক, অপেক্ষায় জোকোভিচ
এই জয়ের ফলে মেনসিক তার ক্যারিয়ারের সেরা র্যাংকিং—বিশ্বের ২৪ নম্বরে উঠে আসবেন।
অন্যদিকে, ২০২৩ সালের পর এটিপি ট্যুরে শিরোপার অপেক্ষা বাড়ল জোকোভিচের জন্য। তবে তার সার্ভের উন্নতি চোখে পড়েছে, যা নতুন কোচ অ্যান্ডি মারের সঙ্গে কাজ করার ফল।
ম্যাচ শেষে জোকোভিচ হাসিমুখে মেনসিককে অভিনন্দন জানান এবং মজার ছলে বলেন, "এটা স্বীকার করতে কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু তুমি আজ সত্যিই ভালো খেলেছ। তবে আশা করি, আগামীবার অন্তত আমাকে একবার জিততে দেবে!"
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৫
এমএইচএম