ঢাকা, সোমবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

খেলা

আলা আল-দালি: এক পায়ে গাজার যন্ত্রণা বহন করে বিশ্বমঞ্চের পথে

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫৯, আগস্ট ৪, ২০২৫
আলা আল-দালি: এক পায়ে গাজার যন্ত্রণা বহন করে বিশ্বমঞ্চের পথে ফিলিস্তিনি প্যারা-সাইক্লিস্ট আলা আল-দালি/সংগৃহীত ছবি

এক পায়ে ভর করে, যন্ত্রণা আর যুদ্ধের ধুলোপড়া পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বমঞ্চে নিজের জাতিকে তুলে ধরার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি প্যারা-সাইক্লিস্ট আলা আল-দালি। গাজা থেকে উঠে আসা এই ২৮ বছর বয়সী তরুণ এবার অংশ নিতে যাচ্ছেন এই আগস্টে বেলজিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য প্যারা-সাইক্লিং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে, যেখানে তিনি হবেন প্রথম কোনো ফিলিস্তিনি প্রতিযোগী।

তবে বিশ্বজয়ের এই পথটা মোটেই সহজ ছিল না। ২০১৮ সালে ‘গ্রেট মার্চ অব রিটার্ন’ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে আহত হন আলা। তার পায়ে গুলি লাগে এবং পরে এক পা কেটে ফেলতে হয়। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় এশিয়ান গেমসে খেলার স্বপ্নটাও।

ওই ঘটনা স্মরণ করে আলা বলেন, ‘আমি যেন জীবনটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার ভেতরের আলোটা নিভে গিয়েছিল। ’

কিন্তু থেমে যাননি তিনি। এক পায়ে সাইকেল চালানোর কৌশল শেখা শুরু করেন। ২০২০ সালে গড়ে তোলেন ‘গাজা সানবার্ডস’, একটি প্যারা-সাইক্লিং দল যারা ক্রীড়া ছাড়াও গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের খাবার, ত্রাণ ও সহায়তা পৌঁছে দেয়। এই দল এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ লাখ মার্কিন ডলারের ত্রাণ বিতরণ করেছে।

যুদ্ধের ছায়ায় অনুশীলন

যদিও বেলজিয়ামে বসবাসরত আলা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন, মন পড়ে থাকে গাজাতেই—যেখানে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান আজও মৃত্যুর মুখোমুখি। তার ভাষায়, ‘আমার সন্তানরা না খেয়ে আছে। আমি শুধু স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকি। কিছুই করতে পারি না। ’

ইসরায়েলি আগ্রাসনে ইতোমধ্যেই গাজায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৪৬ হাজারের বেশি আহত, এমনটাই জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

এক পায়ে রক্তে ভেজা সাহসের গল্প

‘গাজা সানবার্ডস’-এর আরেক সদস্য ও আলার চাচাতো ভাই আহমেদ আল-দালি—যিনি ২০১৪ সালে পা হারান—সম্প্রতি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হন। নিজের তিন কন্যা ও সদ্যোজাত পুত্র রেখে গেছেন তিনি। মৃত্যু ঘটে সেই সময়, যখন তিনি এক হামলায় আহতদের সাহায্য করতে ছুটে যান, আর দ্বিতীয় হামলায় নিজেই প্রাণ হারান।

চাচাতো ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার কথা বলতে গিয়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন আলা, ‘এক পা নিয়েও সে জীবন রক্ষা করতে ছুটে গিয়েছিল। সে ছিল আশাবাদী, প্রাণবন্ত আর আমাদের হাসাতো। তার মতো সাহসী মানুষের স্মৃতি আমি তুলে ধরব বিশ্বমঞ্চে। ’

প্রত্যয়ী আলা আরও বলেন, ‘আমরা দেখাতে চাই যে, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জীবনের প্রতিবন্ধকতা নয়। আমরা চলি, আমরা লড়ি, আমরা বাঁচি। ’

আসন্ন আগস্টে, মোহাম্মদ আসফুর-এর সঙ্গে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবেন আলা। তাদের সাইকেল শুধু প্রতিযোগিতার যন্ত্র নয়—এটি এখন তাদের অস্তিত্বের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।