এভাবেই গল্পটি শুরু বলা করেন দেশের টানা চারবারের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বার্গার কিং বাংলাদেশ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের নিজের প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে সফল হওয়ার কথা জানালেন তিনি।
ছেলে হয়ে জন্মাননি বটে। তবে নিজেকে থামিয়ে রাখেননি। ছোটবেলা থেকে গতিমানবী হওয়ার স্বপ্ন গোছানো শুরু। সেই প্রাথমিক স্কুলে পড়ার সময় থেকে সারাদিন দৌড়ে বেড়াতেন। কাউকে সামনে এগিয়ে যেতে দিতেন না। সেটা এখনও অক্ষুন্ন। কাড়ি-কাড়ি পুরস্কার জিতেছেন সেই ছোট্ট বয়সেই। তবে এ কারণে স্যান্ডেল টিকতো না শিরিনের। পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় বাবাকে ভয়ে স্যান্ডেল কিনে দেয়ার কথা বলতে পারতেন না শিরিন।
শিরিন খেলোয়াড় হোক সেটা চাইতেন না শিরিনের বাবা। তাই তাকে জড়িয়ে শুয়ে পড়তেন বিকেলে। যেতে দিতেন না কোথাও। কিন্তু শিরিনও কম যান না। অপেক্ষা করতেন বাবা ঘুমিয়ে পড়া পর্যন্ত। বাবা ঘুমিয়ে পড়লেই ভোঁ দৌড়। চলে যেতেন খেলতে। মাঝে মাঝে জানালা পথে পালাতেন আপুর সাহায্য নিয়ে।
শিরিন বলেন, ‘পরে বড় বোন জামা বা খেলার ট্রাউজার ছুঁড়ে দিতেন। আমি খেলতে যেতাম। খেলার সঙ্গী ওই ছেলেরাই। ’
একদিন সেই বাবা শিরিনকে নিয়ে বিকেএসপিতে যান। সেখানে গিয়ে পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হন। তখন বাবাই চমকে দিয়ে বললেন, আমি ছোট হলে এখনই খেলা শুরু করতাম।
অজো পাড়াগাঁ থেকে বিকেএসপিতে এসে দেশের দ্রুততম মানবী হওয়ার শুরুটা এভাবেই হয়েছিল শিরিন আক্তারের।
বিকেএসপির প্রতিভা অন্বেষণ দিয়ে উঠে আসা শিরিন পরে কোচ আব্দুলাহ হেল কাফির কাছে দীক্ষা নেন।
তখন বয়স ১৪ বছর। ২০০৭ সাল। ৪০০ মিটারে দ্রুততম জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ন হয়ে হৈ-চৈ ফেলে দিলেন। এরপর কেবল এগিয়ে যাওয়া। জাতীয়তে দ্রুততম কিশোরী-বালিকা-মানবী হওয়ার একমাত্র বাংলাদেশি খেতাবটা শিরিনের দখলে। দ্রুততম মানবী হয়েছেন চারবার।
শিরিন নারী দিবসে তার উঠে আসার, এগিয়ে যাওয়ার কথাগুলো বলেন। আগামীর অ্যাথলেটদের বললেন- ‘এগিয়ে যাও। পরিশ্রম করো। লেগে থাকো। কেউ দমাতে পারবে না। ’
রক্ষণশীল পরিবার বাধা পেরিয়ে সফল হওয়ার গল্পটি শিরিন শোনালেন বুধবার (৮ মার্চ) বার্গার কিং রেস্টুরেন্টে। নারী দিবস উপলক্ষে ছিলো এই আয়োজন। এ সময় তাকে সম্মাননাসূচক ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ৮ই মার্চ, ২০১৭
জেএইচ/এমএমএস