ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

খেলা

শৈশবে কোরবানির গরুর পেছনে ছুটতেন মোসাদ্দেক!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮
শৈশবে কোরবানির গরুর পেছনে ছুটতেন মোসাদ্দেক! মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ছবি: অনিক খান/বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: ঈদ উদযাপনের গল্প বলতে গিয়ে শৈশবের স্বর্ণালি দিনগুলোতেই যেন ফিরে গেলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ওই সময় তার বাবা ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার চাকরিজীবী আবুল কাশেম জীবিত ছিলেন। হাট-বাজার, কেনাকাটা সবখানেই বাবার সঙ্গী হতেন মোসাদ্দেক। 

ঈদের দিন সকালে বাবার হাত ধরে যেতেন ঈদগাহে। বাবার অনুপস্থিতিতে জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে এখন তিনিই পরিবারের ‘কর্তা’।

 

বাবার মতোই দুই ভাইকে সঙ্গে নিয়ে ঈদের নামাজ আদায় শেষে পশু কোরবানি করা, পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে মাংস বণ্টন করা আর সন্ধ্যার পর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করা হয়। এসবের মধ্যে দিয়েই ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা উদযাপন করেন সৈকত ডাকনামের এই ‘বিস্ময়কর’ অলরাউন্ডার।  

বুধবার (২২ আগস্ট) রাতে শহরের কাঁচিঝুলি গোলাপজান রোডের নিজ বাসায় বসে আলাপ হচ্ছিল মোসাদ্দেকের সঙ্গে।  

দেশের শততম টেস্টে অর্ধ শতক হারিয়ে দুর্দান্ত রেকর্ডের জন্ম দেওয়া এই ক্রিকেটারের মনে এখনও জ্বলজ্বল করে আছে শৈশবের কোরবানির ঈদের স্মৃতি।  

নিজের পূর্ণ মনোবল, একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সংগ্রামমুখর জীবনের পথ মাড়িয়ে এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম ‘বিজ্ঞাপন’ হতে চলেছেন মোসাদ্দেক।  

শৈশবের স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ছোটবেলার ঈদ ছিল অনেক আনন্দের। মনে পড়ে, এলাকায় ওই সময় কোনো গরু কেনা হলে পেছন পেছন ছুটতাম। কোরবানির দিন আমার টার্গেট থাকতো গরুর মাথায় ধরা।

বাবার সঙ্গে কতবার হাটে গিয়েছি। সেই সময় অনেকক্ষণ হাটে গিয়ে গরুর দরদাম করতে দেখতাম বাবাকে। বাবাকে বলতাম এইটা না ওই গরুটা নাও। এখন সবকিছু নিজেকেই করতে হয়। আর এখনকার প্রজন্ম আগের মতো দরদামে নেই। এই স্মৃতিগুলোই আমার হৃদয়ে এখনও দাগ কেটে আছে-যোগ করেন টাইগারদের অন্যতম এই আস্থার প্রতীক।  

আলাপচারিতায় জানা গেল, এইবার একটু আগেভাগেই ঈদের ছুটিতে নিজের ভিটা ময়মনসিংহ শহরে এসেছেন মোসাদ্দেক। ঢাকায় ফিরবেন আগামী ২৬ আগস্ট। পরদিন ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হবে এশিয়া কাপের প্র্যাকটিস।  

তরুণ এই ক্রিকেটার জানান, শহরের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে ঈদের প্রথম জামাতে নামাজ আদায়ের পর মায়ের হাতে তৈরি করা সুস্বাদু পায়েসে রসনাতৃপ্ত করেন। এছাড়া নুডলসও তার প্রিয়।  

‘গরু কোরবানি করতে চাইলেও হুজুর ভয় দেখিয়েছেন, যদি শেষ পর্যন্ত না পারি। পশুর কষ্ট হবে তার এই কথা শুনে নিজের হাতে গরু কোরবানি করা হয়নি’ বলতে বলতে হেসে ওঠেন মোসাদ্দেক।  

তার ভাষ্যে-দুই ভাইকে নিয়ে মাংস ভাগাভাগি করেছি। পাড়া-প্রতিবেশি ও আত্মী-স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়েছি। এটাই অনেক আনন্দের।  

শৈশবেই বাবাকে হারানো মোসাদ্দেক জানেন ক্রিকেটের ২২ গজের মতো জীবনটাও অনেক কঠিন। বাবার মৃত্যুর পর মা হোসনে আরা বেগমের (৪২) ছায়ায় বেড়ে উঠেছেন।  

নিজের মতো ছোট দুই ভাই মোসাব্বির হোসেন সান ও মোসাদ্দেক হোসেন মুনও ক্রিকেটার। তারা দু’জন ঢাকা ও ময়মনসিংহের প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন।  

মা হোসনে আরা বেগমের মতো এই দুই ভাইও মনে করেন, তার ভাই সৈকতই একদিন দেশসেরা ক্রিকেটার হবেন।  

এ নিয়ে মোসাদ্দেকের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সামনে এখন টার্গেট এশিয়া কাপে ভালো খেলার। বরাবরের মতো এবারও দেশের জন্য নিজের সর্বোচ্চটুকু উপহার দেওয়ার।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।