ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে: তন্বি

ফাহিম হোসেন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০১, আগস্ট ২৬, ২০২৫
ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে: তন্বি সানজিদা আহমেদ তন্বি। এআই মাধ্যমে তৈরি ছবি

২০২৪ সালের ১৫ জুলাই ছাত্রদলের হামলায় রক্তাক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সানজিদা আহমেদ তন্বি। রক্তস্নাত ভয়ে কুঁচকে যাওয়া তার সেই ছবি সেদিন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ছাত্রলীগের নির্যাতনের একটি প্রতীকী আইকনে পরিণত হয়।

এবার ২০২৫ সালের কা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তন্বি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ‘গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক’ পদে। নির্বাচনে আসার কারণ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাখাত নিয়ে নিজের ভিশন সম্পর্কে তন্বি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানিউজের ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ফাহিম হোসেন।

বাংলানিউজ: জুলাইয়ে আপনার একটি ছবি সারাদেশের মানুষকে রাজপথে নামতে সাহস যুগিয়েছিল। আন্দোলনের মাঠ থেকে কেন নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্বের জায়গায় আসার সিদ্ধান্ত নিলেন?

তন্বি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার জায়গা আগে ছিল না। ডাকসু নির্বাচনের কারণে সেই সুযোগ আবার তৈরি হচ্ছে। এটিকে কাজে লাগানোর ইচ্ছা থেকেই নির্বাচনে এসেছি। গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদ বেছে নেওয়ার কারণ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমি শুরু থেকেই পড়াশোনা কেন্দ্রিক মানুষ। বিভাগের পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা কাজে যুক্ত আছি।

তিনি জানান, তার অনার্সের গবেষণাকর্মটি প্রকাশনার পথে রয়েছে। মাস্টার্স গবেষণা এনএসটি ফেলোশিপ পেয়েছে। এছাড়াও ইউনেস্কো ও মাউশির ‘হেলথ প্রমোটিং স্কুল’, ইউনেস্কো ও ইউজিসির ‘সোশ্যাল ইমোশনাল ওয়েলবিইং ফর ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস’ এবং বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেন্টার ফর সাইকোলজিক্যাল হেলথ’-এর বিভিন্ন প্রকল্পেও তিনি যুক্ত আছেন।

তন্বির ভাষায়, এতগুলো জায়গায় কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, শিক্ষার্থীরা গবেষণায় কী কী সমস্যায় পড়ে। তাই ভেবেছি, যদি এ পদে আসি, তাহলে অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করতে পারব।

বাংলানিউজ: বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকার্যক্রম নিয়ে আপনার ভিশন কী? একবছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে কোথায় দেখতে চান?

তন্বি: বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। এক বছরে গবেষণাখাতে অনেক পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে পরিবর্তনের শুরুটা করে দিয়ে যেতে চাই। পরে যারা এই দায়িত্বে আসবেন, তারা যেন এই কাজগুলো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলি— সেই জায়গায় পৌঁছানোর প্রক্রিয়াটা যেন আমি শুরু করতে পারি।

সানজিদা আহমেদ তন্বি।  ছবি: সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায়ই বলি, গবেষণার ফান্ড নেই। ফান্ড নেই তা সত্যি, তবে যেটুকু আছে সেটিও নিয়মের জটিলতায় খরচ হয় না। আমার মূল লক্ষ্য থাকবে ফান্ড যথাযথভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা। পাশাপাশি গবেষণা সেন্টারগুলোর নেতৃত্ব, বাজেট ও কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনা। ”

তন্বির মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ট্রেনিং পেলেও চাকরির বাজারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত থাকে না। ফলে গবেষণাকে ব্যবহার করে তারা শিক্ষার্থীদের কীভাবে চাকরির বাজারে একজন শক্ত ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিয়ে যাবেন, সেটি নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।

বাংলানিউজ: জুলাই অভ্যুত্থানে আপনার ভূমিকার প্রতি সম্মান জানিয়ে এবারের নির্বাচনে অন্তত ৬টি প্যানেল ‘গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক’ পদে কোনো প্রার্থী না দিয়ে আপনাকে সমর্থন জানিয়েছে। এটিকে কীভাবে দেখছেন?

তন্বি: অনেকগুলো প্যানেল আমাকে ছাড় দিয়েছে, এটি সত্য। তবে এটি তাদের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। তারা আমাকে যোগ্য মনে করেছে এবং সম্মান জানিয়ে পদটি ছেড়েছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। তবে অন্যান্য প্যানেল থেকে এবং স্বতন্ত্র থেকে প্রার্থী আছে। তারা সবাই যোগ্য এবং তাদের সঙ্গে যোগ্যতার লড়াই লড়েই আমি নির্বাচনে জিততে চাই।

বাংলানিউজ: প্রতিবছর গবেষণায় বাজেটের অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খবরের শিরোনাম হয়েছে। এই সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়, আপনার কোনো ভাবনা আছে?

তন্বি: অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য বরাদ্দ থাকে ৩৮ শতাংশের মতো। এমনকি আমাদের দক্ষিণ এশিয়াতেও এটা ৬ শতাংশের আশেপাশে থাকে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা ২ শতাংশের আশেপাশে থাকে প্রতিবার। আমি চাইলেই এই বাজেট পুরোটা বাড়াতে পারব না। তবে আমার লক্ষ্য হচ্ছে এটিকে ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। এছাড়া আমাদের অ্যালামনাইদের মাধ্যমে একটা ফান্ড তৈরি করতে চাই। যেসব ফান্ড ইতোমধ্যে আছে, সেগুলো সক্রিয় করতে চাই। এছাড়া ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমি কোলাবোরেশন বাড়ানোর কাজ করব।

এফএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।