ভারতে অনলাইন জুয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে দেশটির সংসদ। নতুন আইন অনুযায়ী, এ অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সরকারি হিসাবে দেখা গেছে, অনলাইন গেমিং কোম্পানিগুলো প্রতিবছর প্রায় ২.৩ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে ভারতের প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন (৪৫ কোটি) মানুষকে টার্গেট করে।
আইনের আওতায় পড়েছে জনপ্রিয় কার্ড গেম, পোকার ও ফ্যান্টাসি স্পোর্টস, যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটভিত্তিক অ্যাপগুলো। এ কারণে প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান স্পনসর নিয়েও।
ড্রিম ইলেভেন, ভারতের সবচেয়ে বড় ফ্যান্টাসি স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে তিন বছরের জন্য জাতীয় দলের স্পনসর হয়। এখন এই স্পনসরশিপ অনিশ্চয়তার মুখে। বিসিসিআই–এর (ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড) সচিব দেবজিত সাইকাশ জানিয়েছেন— ‘যদি এটি অনুমোদিত না হয়, আমরা কিছুই করব না। বিসিসিআই সবসময় কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি মেনে চলবে। ’
বৃহস্পতিবার রাতে সংসদের উভয় কক্ষে ‘প্রমোশন অ্যান্ড রেগুলেশন অব অনলাইন গেমিং বিল’ পাস হয়েছে। এতে এমন গেম অফার, প্রচার ও অর্থায়নকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
‘ড্রিম ইলেভেন’ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নতুন আইন পাস হওয়ার পর থেকে তারা ক্যাশ গেম ও কনটেস্ট বন্ধ করেছে, তবে ব্যবহারকারীদের ‘সতর্ক থাকতে’ বলেছে।
আইন কার্যকর হওয়ার আগে এটি ভারতের রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেতে হবে। তবে সরকার ইতোমধ্যেই বলেছে, এ পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হলো—‘আসক্তি, আর্থিক ধ্বংস এবং সামাজিক সংকট রোধ করা’।
ভারতের অনলাইন গেমিং শিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাজার। তবে নতুন আইন ই-স্পোর্টস ও শিক্ষা–সংক্রান্ত গেমকে এর বাইরে রেখেছে, যেগুলোকে ডিজিটাল অর্থনীতির অংশ হিসেবে উৎসাহিত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, এই আইন ‘ই-স্পোর্টস ও সামাজিক অনলাইন গেমকে উৎসাহ দেবে, একইসঙ্গে আমাদের সমাজকে অনলাইন অর্থ–ভিত্তিক গেমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করবে। ’
সরকার জানিয়েছে, ভারতের প্রায় এক–তৃতীয়াংশ জনগণ অনলাইন জুয়ায় অর্থ হারিয়েছে। কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতিই নয়, আসক্তি, ঋণগ্রস্ততা এবং আত্মহত্যার মতো ঘটনা বাড়তে থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতারণা, অর্থপাচার এবং সন্ত্রাসে অর্থায়নের সঙ্গেও এসব প্ল্যাটফর্মের যোগসাজশ পাওয়া গেছে।
প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, নতুন আইন ‘সামাজিক গেম” ও “অর্থ–ভিত্তিক গেমের’ মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট করেছে। সরকার বলছে, এতে গঠনমূলক ডিজিটাল বিনোদন যেমন ই-স্পোর্টস উৎসাহিত হবে, কিন্তু বাজি, জুয়া ও ফ্যান্টাসি মানি গেম বন্ধ হবে।
এমএইচএম