ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ক্রিকেট নিয়ে বাবার পথেই হাঁটতে চাই

মফিজুল সাদিক ও সাজ্জাদ খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
ক্রিকেট নিয়ে বাবার পথেই হাঁটতে চাই ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: এক বছর বিরতি দিয়ে আবারও শুরু হতে যাচ্ছে বালোদেশের পেশাদার টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিপিএল। তৃতীয় আসরে যোগ হয়েছে নতুন দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

এবারের আসরে একমাত্র নারী চেয়ারম্যান নাফিসা কামাল। তিনি নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা লিজেন্ড লিমিটেড থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি হয়েছেন তৃতীয় আসরে। প্রথম দুটি আসরে সিলেট রয়্যালসের চেয়ারম্যানও ছিলেন নাফিসা।

পরিকল্পনা মন্ত্রী, আইসিসি ও বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে হয়ে গর্ববোধ করেন নাফিসা কামাল। বাবার হাত ধরেই ক্রিকেটের সঙ্গে তার সখ্যতা বলেও জানান তিনি। নাফিসা যখন খুব ছোট তখনই বাবার সঙ্গে মাঠে যেতেন আবাহনীর খেলা দেখতে। বাবা আবাহনীর কমকর্তা হওয়ায় আবাহনীর ম্যাচে মাঠে নিয়ে যেতেন তার সন্তানদের। সেই সময়ে ক্রিকেটের সঙ্গে নাফিসার তৈরি হওয়া ভালোবাসার বন্ধন আজও বিচ্ছিন্ন হয়নি। সময়ের সঙ্গে বরং ক্রিকেটের সঙ্গে নাফিসা কামালের ভালোবাসার বন্ধন আরও গভীর হয়েছে।

মুস্তফা কামাল ক্রিকেটপ্রেমী একথা সবারই জানা। কাছে থেকে একবার তার ক্রিকেট প্রেমের নমুনা দেখার সুযোগ হয়েছিল। এ বছরের ৭ জুলাই বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচ এক সঙ্গে বসে দেখেছিলাম। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরে যায়। হেরে যাওয়া ম্যাচ শেষে আশাবাদী মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ভালো খেলে হেরে গেছে! ওয়ানডে সিরিজে ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে। ’

ক্রিকেটপ্রেমী মানুষটির কথা সত্যি হয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় করে টাইগাররা।
 
ক্রিকেট নিয়ে কখনও হতাশ হননি মুস্তফা কামাল। বাবার মতোই যেন একই পথে হাঁটছেন নাফিসা কামাল। নাফিসার অফিসে ঢুকেই সেই চিত্র দেখা গেল। পুরো অফিসের ভেতর ক্রিকেটীয় আবহাওয়া। বিপিএলের গত দুই আসরে সিলেট রয়্যালসের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন নাফিসা কামাল। এবার নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা লিজেন্ড লিমিটেড থেকে দল নিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স নামে।

দলের নামকরণের পেছনেও রয়েছে তার ক্রিকেটপ্রেমী বাবার গল্প। নাফিসা বলেন, আমি কুমিল্লার মেয়ে, দাদা বাড়ি কুমিল্লায়। আমার বাবা বড় হয়েছেন ওখানে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েছেন তিনি। তার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে কলেজে। ওটার সঙ্গে মিলিয়ে আমরা দলের নাম রেখেছি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ক্রিকেটের মাধ্যমে কুমিল্লাকে সারা পৃথীবির বুকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। বিপিএল-এ আমাদের স্লোগান জয়ের জন্য শিক্ষা। কুমিল্লায় কিছু এতিমখানা আছে, এর মাধ্যমে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কিছু করতে চাই।    
 
সাবেক আইসিসি সভাপতির মেয়ে হয়ে গর্ববোধ করেন নাফিসা কামাল। পরিবারের একজন হয়ে বাবার খ্যাতি ও সম্মান ধরে রাখতে চান জানিয়ে নাফিসা বলেন, আমার বাবা যখন বোর্ড সভাপতি বিপিএলটা তখন শুরু হয়। বাবার হাতেই বিপিএল যাত্রা। বিপিএল-এ আমাদের থাকতেই হবে। বিপিএল থেকে দূরে থাকা সম্ভব না। আর ক্রিকেট থেকেও দূরে থাকা সম্ভব না। বিপিএল না থাকলেও কোনো না কোনোভাবে ক্রিকেটে সম্পৃক্ত থাকতাম, থাকবো ইনশাল্লাহ। এ দেশের ক্রিকেটে আমার বাবার যে অবদান তার মেয়ে হিসেবে বাবার সম্মান ধরে রাখার চেষ্টা করবো।
 
তিনি আরও বলেন, ক্রিকেটের সঙ্গে পুরো পরিবারের অকৃত্রিম ভালোবাসা জড়িত। ক্রিকেট কামাল পরিবারের বিশেষ একটা অংশ জুড়ে আছে। ক্রিকেট আমাদের কাছে সন্তানের মতো। আমার বাবা উঠতে বসতে খেতে সব সময়ই ক্রিকেট নিয়ে ভাবেন। আমরা ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে বড় হয়েছি। আমরা যেভাবেই পারি বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকাব। ক্রিকেটকে অনেক দূরে এগিয়ে নিয়ে যেতে কাজ করব। বাংলাদেশের খেলার মুহ‍ূর্তে বাবা তখন হয়তো ফ্লাই করছেন, বিমানের ভেতর থেকেও ১০ মিনিট পর পর ফোন দিতেন। কত ওভার হলো, তামিমের রান কতো..।
 
বিপিএলের মাধ্যমেই শুধু ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন না নাফিসা। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বছরজুড়ে ক্রিকেটে অবদান রাখতে চান তিনি।

‘যখন আমি সিলেট রয়্যালসের প্রতিনিধিত্ব করেছি তখন ‍আমার সঙ্গে আরও ৪-৫ জন পার্টনার ছিল। ওখানে আমার ভূমিকা সীমিত ছিল। এবার কুমিল্লা থেকে কাজ করছি। সারা বছরই কোনো না কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে হবে আমাদের। অনেক চিন্তা আছে। আমরা কিছু চ্যারিটি কাজ করছি। সিএসআর (কর্পোরেট সোস্যাল রেসপন্সিব্লিটিস) আছে আমাদের। কুমিল্লায় কিছু এতিমখানা আছে। ফ্র্যাঞ্চাইজি ও কোম্পানির অধীনে হচ্ছে সেটা। ওখানকার ছেলে-মেয়েদের মাঝে শিক্ষা পৌঁছে দিতে, উৎসাহ দিতে সেখানে ক্রিকেটার নিয়ে যাব আমরা। ’- যোগ করেন নাফিসা কামাল।
 
কুমিল্লা থেকে ক্রিকেটার বের করে আনতে কাজ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ওখান থেকে নামকরা খেলোয়াড় আসছে না। আমরা চাই খুলনা, রাজশাহীর মতো কুমিল্লা থেকে খেলোয়াড় বের হোক। কুমিল্লা স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিকমানের করতে চেষ্টা করব। কুমিল্লায় ছোট পরিসরে একটা একাডেমি করেছি। প্ল্যাটফর্মটা দাঁড়িয়েছে। বিপিএলের মাধ্যমে ওটাকে আমরা বড় করবো।
 
বিপিএল-এ এবার একমাত্র নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক নাফিসা কামাল। এটিকে পজিটিভ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, নারী হিসেবে আমি এটাকে পজিটিভ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। সবার কাছ থেকেই আমি রেসপন্স পাচ্ছি। আমি তো বড় হয়েছি ক্রিকেটের সঙ্গে। আজকে ক্রিকেটের সঙ্গে যারা আছে অফিশিয়াল থেকে শুরু করে খেলোয়াড়রা- অধিকাংশই ছোটবেলা থেকে আমাকে দেখে আসছেন। আমি খুব উপভোগ করি ব্যাপারটা। এটা আমার কাছে পরিবারের মতো। কেউ মামা-চাচা, খেলোয়াড়দের সঙ্গে আপু, ভাই- এমন পারিবারিক সম্পর্ক। এজন্য হয় তো নারী হিসেবে যে নেগেটিভ চ্যালেঞ্জ আসতে পারতো সেটা আসেনি। ভবিষ্যতে আমি নারীদের ক্রিকেটের সঙ্গে কাজ করতে চাই। নারী দল ক্রিকেটে খুব ভালো করছে।
 
নারী ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল জানিয়ে নাফিসা কামাল বলেন, ইচ্ছে ছিল ক্রিকেট খেলবো, তবে নানা কারণে সেটা হয়নি। বর্তমান সময়ে হলে ক্রিকেট খেলতাম। তবে নারীদের ক্রিকেট নিয়েও আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে। ভালো ভালো নারী ক্রিকেটার তৈরিতে বিসিবির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে।
 
নাফিসা কামাল মনে করেন বিপিএল-এর এবারের আসরে রোল প্লে করবে বাংলাদেশের তরুণ ক্রিকেটাররা। সাম্প্রতিক সময়ে মাঠে তরুণ ক্রিকেটারদের শারীরিক ভাষায় মুগ্ধ নাফিসা কামাল। তিনি বলেন, নতুন খেলোয়াড়দের ওপরে আমাদের ফোকাস আছে। ওদের শারীরিক ভাষা খুব ভালো। ওরাই কিন্ত মূল লক্ষ্য আমাদের। বিসিবির ফোকাসও কিন্ত তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি বেশি। ‘এ’ ও ‘বি’ ক্যাটাগরিতে আমরা সম্পূর্ণ নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে চিন্তা করছি। ওরাই বিপিএলের গেম চেঞ্জার হবে। ওরা আরও শক্তিশালী হবে যখন অভিজ্ঞ বিদেশি খেলোয়াড়দের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে পারবে।
 
১৬ কোটি মানুষের ক্রিকেট স্বপ্ন প্রসঙ্গে নাফিসা কামাল বলেন, বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক দূর এগিয়েছে। আমরাতো বিশ্বকাপের দ্বারপ্রান্তে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেভাবে আমরা হেরে গেছি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। তবে আমার বিশ্বাস আমাদের জেনারেশনেই বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয় করবে।

কাকে কুমিল্লার অধিনায়ক হিসেবে চান? -এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাশরাফি অথবা সাকিব আমার প্রথম পছন্দ। দলের জন্য সৌম্য, সাব্বির ও মুস্তাফিজ আমার অনেক পছন্দ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৫
এমআইএস/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।