ঢাকা: ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা। ক্রিকেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এই ‘ভদ্রতার স্পিরিট’ নিয়েই চলেন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলা শুরুর আগে বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে জটিলতায় পড়ে সিলেট সুপার স্টারস। খেলায় চারজন বিদেশি খেলোয়াড় রাখা বাধ্যতামূলক হলেও দু’জনের স্বদেশি বোর্ডের অনাপত্তি পত্র না থাকায় মাঠে নামতে পারছিল না তারা। দীর্ঘ সময় ধরে ‘নাটকে’র পর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ সিলেট দু’জন বিদেশি খেলোয়াড়কে নিয়েই মাঠে নামতে সুযোগ পায়। এরইমধ্যে অনাপত্তি পত্র না পাওয়া খেলোয়াড়রা যোগাযোগ করে তাদের নিজেদের বোর্ড থেকে অনাপত্তি পত্র যোগাড় করে এবং এবার তাদেরও মাঠে নামানোর ‘আবদার’ করে বসে সিলেট। ‘নাটকীয়তা’র কারণে খেলা প্রায় ঘণ্টাখানেক বিলম্বিত হয়ে শুরু হওয়ার কথা চলতে থাকলে এরমধ্যে সিলেট নতুন করে ‘আবদার’ করে বসায় নিজের যৌক্তিক অবস্থান থেকেই আপত্তি তোলেন চিটাগং ভাইকিংস অধিনায়ক তামিম।
কিন্তু তার এই আপত্তি মানতে না পেরে ক্ষেপে যান সিলেট সুপার স্টারসের স্বত্বাধিকারি আজিজুল ইসলাম। তিনি তামিমকে তো গালিগালাজ করলেনই, তার মা-বাবাকেও গালমন্দ করতে ছাড়লেন না। ওই ফ্র্যাঞ্জাইজিকর্তার এই আচরণে জাতীয় দলের ড্যাশিং ওপেনার দারুণ মনোক্ষুণ্ন হন। এক পর্যায়ে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ড্রেসিং রুমে পর্যন্ত চলে যান।
আসলে কেবল তামিমই নন, এ ‘অভদ্রজনোচিত আচরণ’ মানতে পারছেন না ক্রিকেটাঙ্গনের বর্তমান-সাবেকদের কেউই। সাবেকরা বলছেন, এ আচরণ কেবল অভদ্রজনোচিতই নয়, অপমানজনকও। আর এটা কেবল তামিমের জন্য নয়, পুরো ক্রিকেটাঙ্গনের জন্যই অপমানজনক। সাবেকদের অনেকে এই কাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে আলাপ করলে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত পাল বাংলানিউজকে বলেন, এ আচরণ সত্যিই অনভিপ্রেত। এটি আমাদের ক্রিকেট তো বটেই, গোটা ক্রিকেট বিশ্বের জন্যই লজ্জার।
তিনি বলেন, যেহেতু তামিম ইকবাল চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়ক, সেহেতু মাঠে খেলা চলাকালে বা খেলার আগে কোনো কিছু তার দলের স্বার্থের বাইরে গেলে বা অন্যায় কিছু ঘটলে তিনি প্রতিবাদ করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশে অনেক ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ হয়, সেখানকার কোনো ফ্র্যাঞ্জাইজিকর্তা কখনো এ ধরনের বাজে আচরণ করেননি। সিলেটের মালিক পক্ষের লোকের এমন আচরণ দুঃখজনক।
এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন আর কখনোই না ঘটে, সেজন্য বিসিবিকে সজাগ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই সংগঠক বলেন, বিসিবির উচিত এ ধরনের ঘটনা শক্ত হাতে দমন করা।
বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে সিলেট সুপার স্টারসের মালিক আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবিও করেন দেবব্রত পাল।
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক, ম্যানেজার ও বিসিবির বর্তমান টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য শফিকুল হক হীরা বলেন, তামিম আমাদের সহ-অধিনায়ক (টেস্ট দলের)। ওর দাম আলাদা। আর ওরই সঙ্গে সিলেটের মালিকের এমন আচরণ সত্যিই অপমানজনক। ওই দিন কথা দিয়ে তিনি (আজিজুল ইসলাম) তামিমকে যেভাবে আক্রমণ করেছেন, তারপরও তামিম তাকে স্যার বলে সম্বোধন করছিল। তার মনে রাখা উচিত ছিল যে, তামিম শুধু চিটাগংয়ের অধিনায়কই নয়, বাংলাদেশ দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ও বটে। ওনার নিজেকে সংযত করা উচিত ছিল। আর ওই সময় সিলেট সুপার স্টারস মাঠে বিদেশি খেলোয়াড় নামানো নিয়ে যে অযৌক্তিক ঘটনা ঘটাচ্ছিলো, সেখানে ওর প্রতিবাদ করাটা মোটেও অযৌক্তিক ছিল না। তিনি সিলেট দল চালান ভাল কথা, কিন্তু তামিমকে শাসন করার কে? তামিমকে শাসন করার কোনো অধিকারই তার নেই।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে সাবেক এই টাইগার অধিনায়ক বলেন, তদন্তটা সুষ্ঠুভাবে হওয়া উচিত। তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি বলে কোনোভাবেই যেন পার পেতে না পারেন, বিসিবিকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিসিবির সাবেক পরিচালক খন্দকার জামিল উদ্দিন বলেন, সাংবাদিক সম্মেলনে এসে তামিম যে অভিযোগ করেছে, তা যদি সত্যি হয়, সেটা আমাদের জন্য হতাশাজনক। তামিম আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের ক্রিকেট আজ যে উচ্চতায় পৌঁছেছে তা ওদের হাত ধরেই। লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে ওরাই আমাদের দেশকে সম্মান এনে দিয়েছে। তামিমের সঙ্গে এমন আচরণ ক্রিকেটের জন্য অপমান এবং লজ্জাজনক। আমি আশা করবো, অতি শিগগির বিসিবি ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
এ অপ্রীতিকর ঘটনা কেবল একজন খেলোয়াড়েরই নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বল ভাবমূর্তির জন্যও লজ্জাজনক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটে যাওয়ায় বিসিবিকে এসব বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন এ সংগঠক-বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এইচএল/এইচএ/
** তামিম ইস্যুতে ‘কঠিন’ তদন্ত করবে বিসিবি