ঢাকা: ক্রিকেট বিশ্বকে চেনানোর মঞ্চ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। যুব বিশ্বকাপের একাদশতম আসর শুরু হতে বাকি আর মাত্র এক সপ্তাহ।
যুব বিশ্বকাপে অংশ নিতে বেশিরভাগ দলই পৌঁছে গেছে ঢাকায়। বেজে উঠছে বিশ্বকাপের বাদ্যও। টিম হোটেল লা মেরিডিয়ান এখন বিভিন্ন দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের পদচারণায় মুখর। ভারত, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, কানাডা দল উঠেছে রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে। রাতেই পৌঁছাবে পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ফিজি ও নেপাল দল। স্বাগতিক বাংলাদেশ, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে দল রয়েছে চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকায় টিম হোটেলে ১৬ দলের মধ্যে পাঁচটি দলের (শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আফগানিস্তান, কানাডা, স্কটল্যান্ড) অধিনায়কের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনও হয়ে গেল। নিজ দলের অধিনায়করা তুলে ধরলেন বিশ্বকাপে তাদের লক্ষ্যের কথা।
যুব বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনবার শিরোপা জিতেছে ভারত। ২০১২ সালে তৃতীয় শিরোপাটি ভারতকে এনে দেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। সেই অনুপ্রেরণায় ২০১৬ বিশ্বকাপে ভারত দলের অধিনায়ক ইশান কিশান স্বপ্ন দেখছেন তিনিই এবার উঁচিয়ে ধরবেন বিশ্বকাপের ট্রফি। পেছনের আসরগুলোতে সাফল্য আর কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের উৎসাহে ভালো কিছুই করে দেখাতে চান ইশান।
তিনি বলেন, ভারত তিনবার অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেতে। এবারও সবাই চাইবে আমরা যেন তেমন কিছুই করি। আমাদের দলের কোচ কিংবদন্তি ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড়। তার উপস্থিতি আমাদের দলকে নিশ্চয়ই আরো চাঙ্গা করবে। আর আমাদের লেট অর্ডারেও ভালো কয়েকজন ব্যাটিং অলরাউন্ডার রয়েছে। আমাদের স্পিনাররাও বেশ ভালো।
বিজয়-হাজারে ট্রফিতে ভারতের ওয়ানডে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে খেলেছেন কিশান। ভারতের সফল একজন অধিনায়কের কাছ থেকে নাকি অনেক পরামর্শও পেয়েছেন। পরামর্শগুলো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না করলেও সেগুলো যে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে এ যুবাকে, তার স্পষ্ট ছাপ কিশানের চোখেমুখে।
যুব বিশ্বকাপের শিরোপা এখনও জেতেনি শ্রীলঙ্কা। ২০০০ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের কাছে হার মানলে স্বপ্নভঙ্গ হয় লঙ্কানদের। সেই আক্ষেপ ঘোঁচানোর দায়িত্ব নিতে চান অধিনায়ক চারিথ আশালঙ্কা। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে মাত্র একটি মাত্র ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা তার। তবে স্কুল ক্রিকেটে ব্যাট-বলে সেরা পারফরম্যান্স দেখিয়ে এ মঞ্চে আসেন তিনি। যুবাদের আসরে চ্যাম্পিয়ন হওয়াই লক্ষ্য তার। অধিনায়কত্ব, ব্যাটিং ও ব্যক্তিত্বে সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারাকে অনুসরণ করেন বলে জানান আশালঙ্কা।
অল্পদিনে ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে উঠে এসেছে আফগানিস্তান। সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান জাতীয় দল রয়েছে ফর্মের তুঙ্গে। জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারিয়ে চমক দেখিয়েছে দেশটি। এবার তাদের যুবারাও চাইছেন অমনই কোনো চমক দেখাতে। তবে সুপার লিগের কোয়ার্টারে উঠতে হলে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে তাদের। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো শক্তিশালী দল রয়েছে একই গ্রুপে। অপর দলটি হলো কানাডা।
কঠিন গ্রুপে পড়লেও আশাবাদী আফগানিস্তান দলের অধিনায়ক ইহসানউল্লাহ জানাত। কোয়োর্টার ফাইনালে উঠাই ইহসানউল্লাহর লক্ষ্য। তার আরেকটি পরিচয় হলো আফগানিস্তান জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক আসগর স্তানিকজাইয়ের ছোট ভাই তিনি।
কানাডার অধিনায়ক আবরাস খান মানছেন কঠিন গ্রুপে পড়ে গেছেন তারা। গ্রুপপর্বে তাদের লড়তে হবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পথ বেশ কঠিন হলেও সেটিই লক্ষ্য বলে জানালেন আবরাস, আমরা লক্ষ্য স্থির করেছি যে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাব। সেটি জানি কঠিন হবে। তবে স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই।
কানাডা জাতীয় দলের ক্রিকেটার নিখিল দত্ত বিপিএলে খেলে গেছেন। সেটিও বললেন আবরাস, ‘জাতীয় দলের ক্রিকেটার নিখিল দত্ত এখানে খেলে গেছেন। ভবিষ্যতে আরও ক্রিকেটার বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন লিগে খেললে সেটা আমাদের জন্য ভালো হবে। ’
স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক নেইল ফ্ল্যাক জানান, ভবিষ্যতের বিশ্বমঞ্চে উঠে আসার সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হলো যুব বিশ্বকাপ। আমাদের দলের সবচেয়ে ভালো দিক হলো সব জায়গাতেই আমাদের শক্তি রয়েছে। এমন নয় যে কেবল ব্যাটিং-বোলিয়ে আমরা ভালো। ফিল্ডিংয়েও ছেলেরা দুর্দান্ত। আমাদের দলের কয়েকজনের কাউন্টিতে খেলার অভিজ্ঞতাও রয়েছে। জাতীয় দলে বেরিংটনের মতো তারকা ক্রিকেটার রয়েছে- যার কিনা টি-টোয়েন্টিতেও শতরানের রেকর্ড আছে। অনুসরণ করার মতো ক্রিকেটার আমাদের দেশেই রয়েছেন।
মোট ১৬টি দল চার গ্রুপে লড়াই করবে এবারের আসরে। ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের সঙ্গে আইসিসির অ্যাসোসিয়েট ও অ্যাফিলিয়েট সদস্য দেশ সাতটি। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া বাংলাদেশের গ্রুপে বাকি দুই দল হচ্ছে স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া। প্রতিটি গ্রুপ থেকে শীর্ষ দুই দল সুপার লিগে অংশ নেবে। আর নিচের দুই দল অংশ নেবে প্লেট চ্যাম্পিয়নশিপে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ২০ জানুয়ারি ২০১৬
এসকে/এমআর