ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

সময় এখন টাইগারদের

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
সময় এখন টাইগারদের বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ৫ ক্রিকেটার যথাক্রমে তাসকিন, সাকিব, মাশরাফি, মুশফিক ও তামিম

ঢাকা: গত বছরের কথা নয়। এইতো মাস খানেক আগেই হাওরে অকাল প্লাবনে ভেসে গেল ধানের জমি। আর জৈষ্ঠ্যের মাঝামাঝি সময়ে 'মোরা'র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হলো উপকূল।

প্রাকৃতিক দানবের সঙ্গে লড়াই করতে করতে ক্লান্তি কি একটু ছুঁয়েছিল! না তার সময়ও পায়নি বঙ্গবাসী। বরং দেশ থেকে সুদূরে পশ্চিমে মহারানির দেশে জয়ের রথের স্বপ্ন দেখালো ব্যাট বল হাতে তামিম আর সাকিবরা।

সবুজ মাঠের ওপর দাঁপিয়ে বেড়ানো এগারোজনের দলটিকে 'টাইগার' বলেই সম্বোধন করে ক্রিকেট পাগল জাতি। বাঘা বাঘা দলের সঙ্গে লড়াই করে টাইগাররাও নিজেদের জাত চিনিয়ে দিলো। সারা দুনিয়াকে যেন মাশরাফিবাহিনী বুঝিয়ে দিতে চায়, 'এখন সময় টাইগারদের। '

বিলেত বাঙ্গালির কাছে সবসময়ই রোমাঞ্চময়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তেই নিজেদের বিলেতি দীক্ষায় দীক্ষিতও করে নিয়েছিল বাঙ্গালি। জাহাজে চেপে রবীন্দ্রনাথের বিলেত যাত্রার গল্প পড়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি আমরা। কত স্বপ্নই না এঁকেছিলো বাঙ্গালি যুবকেরা। সেখানকার সভ্য সমাজ আর মহারানির প্রতি আনুগত্যের কথা কতই না শুনেছি। এশিয়ার এই অঞ্চল থেকে ব্রিটিশরা চলে গেলে আর রানির প্রতি আনুগত্য দেখায়নি বাঙ্গালি। তবে সেই বিলেতে রানির প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে ছাড়িয়ে টাইগাররা নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ চারে।

গত শুক্রবার কার্ডিফে এক মহাকাব্যিক খেলা দেশবাসীকে উপহার দিলো টাইগাররা।

শুক্রবার কিউইদের বিরুদ্ধে অতিমানবীয় জয়ের পরও স্বপ্নটা বাঁধা অতিক্রম করতে পারছিলো না।

বার্মিংহামের মাঠে শনিবার কি ঘটে তার জন্য সময় গুণতে হয়েছে গোটা একদিন। বঙ্গোপসাগরের দেশকে হতাশ করেনি মরগান আর স্টোকসরা। ইতিহাসে এ দিনটা বিরল হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। রাজ্য দখল আর নীল চাষিদের ওপর নির্যাতনের অপরাধকে পাশ কাটিয়ে সিরাজের খুনিদের হয়তো প্রথমবারের মতো জয় কামনা করলো বঙ্গবাসী। কারণ উড আর স্টোকসরা অজি বধ করতে পারলেই সেমিফাইনালের টিকেট মিলবে রুবেল-তাসকিনদের।  

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বৃটিশ দুর্গের কাছে এসে আছড়ে পড়লো অজিরা। খেলা শুরুর আগে অজি অধিনায়ক স্মিথ শুধালেন, 'বাঁচা মরার ম্যাচে জেতাটাই আমাদের স্বভাব। ' তবে এই আসরে কিন্তু আর সেই লড়াকু অজিদের পাওয়া গেলো না। বরং খুড়িয়ে খুড়িয়ে বিদায় নিতে হলো বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর থেকে।

ধারাবাহিক পারফরমেন্সের বিবেচনায় এই আসরে সবচেয়ে ফিট টিম এখন পর্যন্ত ইংল্যান্ড। আর সকলকেই পরাজয়ের স্বাদ পেতে হয়েছে। তবে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ কিন্তু নিজেদের প্রথম খেলায় নাইটদের বিরুদ্ধে আরেকটু শক্ত অবস্থান নিতে পেরেছিল অন্তত অস্ট্রেলিয়ার তুলনায়। যদিও শেষ পর্যন্ত ৩০৫ রানের বিশাল পাহাড় সহজেই টপকে যায় নাইটরা।

টুর্নামেন্টের শুরুটাতো টাইগারদের ভাল হয়নি। প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতীয় বাহিনীর কাছে বিধ্বস্ত হয়ে শুরু করা টুর্নামেন্টের শুরুতেই ইংল্যান্ড যেনো পাত্তাই দিলো না তামিমের সেঞ্চুরিতে সাজানো ৩০৫ রানের স্কোরকে। পরের ম্যাচে ওভালে শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বৃষ্টিই হয়তো বাঁচিয়ে দিয়েছিল। সবই যখন এ রকম হতাশার, তখন পাঠক মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, সময় কিভাবে হবে টাইগারদের?

নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ঐতিহাসিক জয়ে সেই উত্তর দিয়ে গেছেন, সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেকরা। প্রথম দুই ম্যাচে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিসহ বড় রান জয় এনে দিতে না পারলেও বুঝিয়ে দিয়েছে তামিম শতভাগ দিতে প্রস্তুত। আর নিউজিল্যান্ড ম্যাচে সাকিব-রিয়াদের সেঞ্চুরিতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের স্বস্তির বার্তাটাই দিলো। ৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে গেলেও কার্ডিফকে কিভাবে নিজেদের করে নিতে হয়, তা ব্ল্যাক ক্যাপদের হাঁড়ে হাঁড়ে বুঝিয়ে দিয়েছে ২ শতাধিক রানের ইস্পাত দৃঢ় এক পার্টনারশিপ। নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার নিজের গায়ে নিয়ে নেন কার্ডিফের সব আলো।

ব্যাটিংয়ে মুশফিকও আছেন দারুণ ফর্মে। তাই সেমিফাইনালে দুনিয়ার যে কোন বোলিং লাইন আপ তামিম- সাকিবদের সামনে যে বর্শা নিক্ষেপ করতে পারবে না, সেটাতো ধরেই রেখেছে ক্রিকেট পাগল ভক্তরা। শনিবার রাতে বার্মিংহামে ক্যাঙ্গারুর সমাধি হলে, ঢাকার রাস্তায় পথ চলতে চলতে শোনা যায় একজন আরেকজনকে বলছেন, এখন ফাইনালের প্রতিপক্ষ কে হয়? সেটাই দেখার বিষয়! হুমম, এতোটাই কনফিডেন্ট টাইগার ভক্তরা। কারণ, শেষ ম্যাচে যে জ্বলে উঠেছে বোলিং লাইনআপও।

রুবেল যে বরাবরই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক সেটা তার বডি ল্যাংঙ্গুয়েজই বলে দিচ্ছে। তাসকিন উইকেট পাচ্ছে নিয়মিত। মাশরাফি আর মুস্তাফিজ এবার খুব বেশি সুবিধা করতে পারেনি এখনো। তবে সেমিফাইনালে মুস্তাফিজ জ্বলে উঠলে যে কাপ নিয়ে আসতে বাংলাদেশের বেগ পেতে হবে না, সেটা টাইগার সমর্থক মানেই অজানা নয়। আর শেষ ম্যাচে মোসাদ্দেক একাই তো ধসিয়ে দিয়েছিল উড়তে থাকা কিউইদের ব্যাটিং লাইন আপ।

এটা অনুমান করাই যায় যে অন্য গ্রুপে ক্রিকেটের চার পরাশক্তি এখন বাংলাদেশ আতঙ্কে ভুগছে। বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলকে যে মোকাবেলা করতে হবে টাইগারদের। আর  রাইজিং টাইগাররা যে কতটা হিংস্র হতে পারে খেলার মাঠে তা ভারত-পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলংকা, সবারই জানা। বাঘের নখের আচড়ে সিরিজ খোয়া থেকে শুরু করে হোয়াইটওয়াশের তিক্ত স্বাদও তাদের আছে। নিজেদের দিনে টাইগারবাহিনী যে কতটা ক্ষিপ্ত তা টের পেয়েছে কার্ডিফ। আরো দুটো দিনকে তো নিজেদের করে নিতেই পারেন মাশরাফি বাহিনী। ইংল্যান্ডের এই শীতল সময়টাকে করে তুলবে নিজেদের। রচিত হবে এক শিরোপা জয়ের উপাখ্যান। সবাই বলবে, সময় এখন টাইগারদের।

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৭
এমএন/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।