ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অথচ সাকিব ‘তখন’ জুয়াড়ির প্রস্তাবের কথা জানিয়েছিলেন!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
অথচ সাকিব ‘তখন’ জুয়াড়ির প্রস্তাবের কথা জানিয়েছিলেন! সাকিব আল হাসান/ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন দুর্যোগের ঘনঘটা। শুরুটা করেছিলেন সাকিব আল হাসান নিজেই। ক্রিকেটারদের স্বার্থ রক্ষায় ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। অনেক জল ঘোলা হওয়ার পর ক্রিকেটারদের দাবি মেনে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু প্রথমে একটি টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর নিয়ে সাকিবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা শোনা যায়। 

কিন্তু একদিন পর এর চেয়েও অনেক বড় অভিযোগে বিদ্ধ করা হলো বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘পোস্টার বয়’ সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে স্পট ফিক্সিংয়ের অফার পাওয়ার তথ্য লুকানোর অভিযোগ উঠেছে।

এই অভিযোগে আইসিসি’র তরফ থেকে তার বিরুদ্ধে ১৮ মাসের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। যদিও এর শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর ও সর্বনিম্ন ৬ মাস।

সাকিবের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির সম্ভাবনা তার ভারত সফর অনিশ্চিত করে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছেন দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটভক্ত। তার কিছু হলে কঠিন আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন অনেকে। কিন্তু অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এই তথ্য সাকিব গোপন করলেন কেন? আর গোপন করলেও এতদিন পরে তথ্য ফাঁস করল কে এবং কেন? যে বা যারা তথ্য প্রকাশ করলেন তারা আগে কেন জানালেন না? এসব প্রশ্নের উত্তর হয়ত পাওয়া যাবে শিগগিরই।

কিন্তু একটা কথা হয়ত অনেকের মনেই নেই যে, এর আগেও সাকিব এমন অফার পেয়েছিলেন এবং সেবার সাকিব জুয়াড়ির প্রস্তাব পাওয়ার কথা প্রকাশও করেছিলেন। এটা ২০১০ সালের ঘটনা। তৎকালীন বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছিলেন। ঘটনাটি ঘটে ২০০৮ সালের মার্চে। সাকিব তখনও অধিনায়ক হননি। ওই সময় ঢাকায় আইরিশদের বিপক্ষে এক ওয়ানডে সিরিজের ম্যাচে বাজে পারফর্ম করার বদলে সাকিবকে ‘স্পন্সরশিপ’র অফার দিয়েছিল এক অচেনা জুয়াড়ি।

২০১০ সালে ক্রিকইনফোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশটফিক্সিংয়ের অফার পেয়ে আইসিসি’র অ্যান্টি-করাপশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইউনিট’র গাইডলাইন অনুযায়ী সাকিব বিষয়টি বিসিবি এবং আকসু’র কাছে রিপোর্ট করেছিলেন। এরপর আর ওই জুয়াড়ির কাছ থেকে কোনো ফোন পাননি সাকিব। বাংলাদেশও আইরিশদের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয়। লর্ডসে ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট ম্যাচের আগে সংবাদমাধ্যমকে ওই ঘটনার কথা জানান।

ওই সময় সাকিব বলেন, ‘এটা প্রায় আড়াই বছর আগের কথা, ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমি তার (জুয়াড়ি) সঙ্গে বেশি কথা বলিনি কারণ আমাদের টিম মিটিং ছিল। তাই আমি তাকে বলে দিলাম ‘পরে কথা হবে’ এবং সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টা আমি বোর্ড এবং আইসিসিকে জানাই। তারা ব্যবস্থা নেওয়ার পর আর কোনো ফোন পাইনি। ’

জুয়াড়ির প্রস্তাব নিয়ে সাকিব বলেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিস্তারিত কথা হয়নি এবং আমি যা করেছি তা হলো, আমি (কর্তৃপক্ষকে) বিষয়টি জানিয়েছি। সে (জুয়াড়ি) আসলে ম্যাচ ফিক্সিং করার ব্যাপারে সরাসরি বলেনি, সে শুধু বলেছিল আমার স্পন্সর হতে চায়। আমি (দলের) অন্য কারো সঙ্গে কথা বলতে পারিনি, কিন্তু এটা বলতে পারি যে, আমার মাথায় বিষয়টি স্থায়ী হয়নি। আমি যা অনুভব করছিলাম তা হলো, আমি টাকা নিয়ে ভাবি না। আমি আমার দেশের হয়ে খেলতে চাই, কারণ এটাই আমাকে গর্বের উপলক্ষ এনে দেয় এবং আমি আমার দেশের জন্য ভালো খেলে যাব। আমার পরিবারের কথা বললে, জীবন কাটানোর মতো যথেষ্ট সামর্থ্য আমাদের আছে। তাই আমি টাকা নিয়ে চিন্তা করি না। আমি যদি আগামী ১০ বছর ভালো খেলি, তাহলে টাকা আসবে এবং এটা নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে না। ’

সেই সাকিব এবার ফিক্সিংয়ের তথ্য গোপন করবেন, বেশ অবাক করার মতো বিষয়ই বটে। অনেক ভক্তের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কথাটা ঠিক এসময় কেন প্রকাশিত হলো? অনেকে ক্ষোভ ঝাড়ছেন আইসিসি এবং বিসিবির বিরুদ্ধে। কেউ আবার দোষ দেখছেন সাকিবের। আর কেউ ভাবছেন, তাহলে কি বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট ডাকায় ‘বলির পাঠা’ হতে হচ্ছে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারকে?

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।