বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ৪৭৭ রানের বিশাল লক্ষ্য ভালোভাবেই তাড়া করছিল জিম্বাবুয়ে। এর জন্য অবশ্য বাজে ফিল্ডিং ও টাইগার অধিনায়কের রক্ষণাত্মক মেজাজও কিছুটা দায়ী।
হারারে টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান সংগ্রহ করেছে জিম্বাবুয়ে। জিততে হলে স্বাগতিকদের আরও ৩৩৭ রান করতে হবে, যা আপাত দৃষ্টিতে প্রায় অসম্ভব। কারণ লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা ভালো করলেও তারা শেষদিকে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে। দিনের শেষে ১৮ রানে ডিওন মেয়ার্স এবং ৭ রানে অপরাজিত ডোনাল্ড তিরিপানো।
নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে মিল্টন শুম্বার উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশি পেসার তাসকিন আহমেদের বলে বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলীর হাতে ক্যাচ তুলে নেন স্বাগতিকদের এই ওপেনার। এরপর টেইলর ও কাইতানো মিলে পরীক্ষায় ফেলে দেন বাংলাদেশের বোলারদের। বিশেষ করে টেইলর।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পথেই ছিলেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক। কিন্তু মিরাজের বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফিরলে শেষ হয় তার ৭৩ বলে ১৬ চারে সাজানো ৯২ রানের ঝড়ো ইনিংস। টেস্ট ম্যাচে ৭৫ এর বেশি রানের ইনিংসে কোনো ব্যাটসম্যানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট (১০৪.৮৪) এখন তার। এর আগে ২০০৯ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গল টেস্টে ১০৫.৯১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছিলেন সাবেক লঙ্কান ব্যাটসম্যান তিলকারত্নে দিলশান।
তবে অবাক করেছেন কাইতানো। মাত্র ৭ রান করলেও তিনি যে বল খেলেছেন ১০২টি! ব্যক্তিগত ১ রানে অবশ্য তার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন এবাদত হোসেন। তবে ততক্ষণে কাইতানো খেলে ফেলেছেন ৪৬ বল! প্রথম রান করতে তিনি বলে খেলেছেন ৩৯টি! টেইলরের সঙ্গে তার জুটি ৯৫ রানের, যার মধ্যে কাইতানোর অবদান মাত্র ২ রান! এমন অসম্ভব প্রতিরোধ অবশ্য ভেঙে যায় সাকিবের বলে তিনি লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লে।
এর আগে সাদমান ইসলামের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ও নাজমুল ইসলাম শান্তর দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিতে ভর করে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। ৪৭৬ রানের লিড নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ টেস্টে এর চেয়ে বেশি লক্ষ্য আগে কখনো দেয়নি।
মাত্র ১ বা ২ উইকেট হারিয়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে এত বিশাল লিড এর আগে মাত্র দুটি দল পেয়েছিল। প্রথমবার ২০০৬ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ৬৪৭ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করেছিল। এরপর ২০১৬ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইংল্যান্ড পেয়েছিল ৫৬৪ রানের লিড।
দিনের প্রথম সেশনে দলীয় ৮৮ রানে ওপেনার সাইফ হাসান (৪৩) বিদায় নেওয়ার পর থেকে হাল ধরেন সাদমান ও শান্ত। এর মধ্যে সাদমান নিজের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিতে খেলেন ১৮০ বল, চারের মার ৮টি।
সাদমানের পর সেঞ্চুরির দেখা পান শান্তও। ১০৮ বলে সেঞ্চুরি করার পর ১১৭ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন এই বাঁহাতি। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ক্রিকেটের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডে তামিম ইকবালের পরে জায়গা করে নিয়েছেন। শান্ত ৫টি চারের বিপরীতে মোট ৬টি হাঁকান। এর আগে তামিম ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭টি ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।
শান্ত ও সাদমান মিলে ১৯৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। ইনিংসের ৬৮তম ওভারের চতুর্থ বলে শুম্বার বলে শান্ত ছক্কা হাঁকানোর পর ইনিংস ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক।
এর আগে তৃতীয় দিন কোনো উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রানে শেষ করে বাংলাদেশ। যেখানে মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসানের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ প্রায় ১৯২ রানের লিড। আর প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৪৬৮ রান।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২১
এমএইচএম