ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৬ মে ২০২৫, ১৮ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর উচ্চ রক্তচাপের হার

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৯, মে ১৬, ২০২৫
পুরুষের চেয়ে বেশি নারীর উচ্চ রক্তচাপের হার ...

চট্টগ্রাম: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা এখন প্রায় প্রতি ঘরেই। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে, অল্প বয়সেই দেখা দিচ্ছে ডায়াবেটিস।

ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকছে না।  

চিকিৎসকদের ভাষায়, একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপ থাকে ১২০ মিলিমিটার পারদের কম ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিলিমিটার পারদের কম।

আর কারও সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি ১৪০ মিলিমিটার পারদ বা এর বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক যদি ৯০ মিলিমিটার পারদ বা এর বেশি হয় কিংবা সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক-দুটিই যদি এই মাত্রার ওপরে থাকে, সেটি উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়া রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে হবে নিম্ন রক্তচাপ।

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগ গত বছর ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী চট্টগ্রামের তিন শতাধিক তরুণের ওপর গবেষণা চালায়। পরে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে ওই গবেষণার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়, ৩১ বছর বয়সীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ বেশি। যাদের উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হয়েছে, তাদের কারোই আগে এ সমস্যা ছিল না। হাসপাতালে এসব রোগীর রক্তচাপ পাওয়া যায় ১৪০/৯০। এজন্য স্থূলতা, বংশানুক্রমিক সমস্যা ও ধূমপানকে দায়ী করেন গবেষকরা। পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, মানসিক চাপও যুক্ত হয়েছে।  

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, এশিয়ান উইমেন ইউনিভার্সিটিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলাগুলোতে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের হার বেশি।  

গবেষক দলের সদস্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের শিক্ষক ডা. মাসুদ রানা জানান, ২২টি হাসপাতালের প্রায় ২ হাজার রোগীর মধ্যে এ গবেষণা চালানো হয়। ৬৮ ভাগ রোগীর বংশগত উচ্চ রক্তচাপের ইতিহাস পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার নারীদের মধ্যে বেশি। আর দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ৫৫ শতাংশ রোগী। রোগীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ ডায়াবেটিস, ৩২ শতাংশ স্থূলতা ও ১৮ শতাংশ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিল।  

মানুষের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হওয়ার পেছনেও অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপকে দুষছেন চিকিৎসকরা। উচ্চ রক্তচাপ চোখের রেটিনার রক্তনালীগুলোর ক্ষতি করতে পারে। একসময় ভাবা হতো, পুরুষের তুলনায় নারীর উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কম। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, ২০২৫ সালে এসে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার ৮ শতাংশ বেড়েছে। আর একই বয়সী নারীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

কীভাবে বুঝবেন উচ্চ রক্তচাপ

মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, বুক ধড়ফড় করা, মাথা গরম হয়ে যাওয়া, ঘাড় ব্যথা করা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, অল্পতেই রেগে যাওয়া বা অস্থির হয়ে শরীর কাঁপতে থাকা, রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, মাঝে মাঝে কানে শব্দ হওয়া, অনেক সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা।

ঝুঁকি কমাতে করণীয়

অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে। খাদ্য গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন করা, তরকারিতে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে। মদ-ধূমপান পরিহার করা, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, মানসিক ও শারীরিক চাপ সামলাতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯৪ লাখ মানুষ মারা যায়। দেশে প্রতি ৫ জনে একজন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমীক্ষা বলছে, বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগী মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সী প্রতি ৫ জনে একজন উচ্চ রক্তচাপের রোগী।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মইনুল আজম চৌধুরী জানান, উচ্চ রক্তচাপের কারণে পুরো শরীর আক্রান্ত হতে পারে। প্রথমেই হতে পারে স্ট্রোক, যা থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। এরপর স্ট্রোক থেকে অন্ধত্ব, শরীরের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ অবশ হয়ে যেতে পারে। কিডনি বিকল হতে পারে। একইসাথে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মৃত্যুর আশংকা থাকে।

রোগীদের প্রশ্ন থাকে, একবার উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খাওয়া শুরু করলে কি সারাজীবন খেতে হবে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত হলে ওষুধ দিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ওষুধের মাত্রা কমানো বা বাড়ানোর বিষয়টা নিয়মিত চেকআপে চিকিৎসই ঠিক করে দেবেন। প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে একই মাত্রার ওষুধ খেতে হবে। কিছু অ্যান্টিহাইপারটেনসিভ ওষুধ আছে যেগুলো সকালে খেতে হয়। আর কিছু ওষুধ আছে যেগুলো ফার্স্ট ডোজ হাইপোটেনশন, সেগুলো সেবন করতে হয় রাতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০২৫
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।