ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ কার্তিক ১৪৩২, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

এত অভিযান, তবুও অস্বাস্থ্যকর হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৫৩, অক্টোবর ২১, ২০২৫
এত অভিযান, তবুও অস্বাস্থ্যকর হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম: জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত রেস্তোরাঁ-হোটেলে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রতিবার অভিযানে মিলছে অনিয়ম, অস্বাস্থ্যকর ও নানা কারসাজির তথ্য।

যার কারণে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। করা হচ্ছে সর্তকতা।
তবে এত অভিযানের পরেও বেশিরভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁ এখনও ‘যে লাউ সেই কদু’।  

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে যেসব কাজ ‘ভোক্তা-অধিকারবিরোধী কাজ’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে সেগুলো হলো সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত আদায়, বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকা, নোংরা পরিবেশে মানহীন ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও পরিবেশন, পণ্যে ভেজাল, ওজনে কম দেওয়া, বেশি দাম নেওয়া, ত্রুটিপূর্ণ পণ্য, ক্রেতার সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ ও মজুতদারি। ভোক্তার প্রায় সব অভিযানে এসব নিয়ম ভঙ্গ ও অনিয়মের প্রমাণ মিলছে। সর্তকতার পাশাপাশি মোটা অংকের জরিমানাও করা হচ্ছে। এত অভিযান আর জরিমানা এরপরেও থামছে না অনিয়ম।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের মহানগর অফিস সেপ্টেম্বরেই ৪০টি এবং জেলা অফিস ২৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে। যেগুলোর বেশিরভাগই হোটেল-রেস্তোরাঁ। এসব অভিযানে বহু রেস্তেরাঁ-হোটেলকে জরিমানা-সতর্ক করা হয়। মহানগরের তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতে মামলাও করা হয়। পাশাপাশি সংস্থাটি সচেতনতা বাড়াতে খাদ্য কর্মীদের নিয়ে দুটি কর্মশালা, ৬টি উঠান বৈঠক, ১টি স্কুল প্রোগ্রাম ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ২৭০টি দেয়ালিকা টাঙায়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও নগর ও জেলায় ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। এর মধ্যে জেলা কার্যালয় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০২টি অভিযান পরিচালনা করে ২৭৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে। আর সর্বশেষ জুলাই ও আগস্ট মাসে ৫৯টি অভিযান চালিয়ে ৭১টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধেকই হলো হোটেল-রেস্তোরাঁ। আর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কার্যালয় এই ১৪ মাসে ৬২৮টি অভিযান চালিয়ে ৬৮৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ৭৭ লাখ ৫০০ টাকা জরিমানা করে। এই সময়ে ৫৭টি সচেতনতামূলক সভা ও গণশুনানিও করে প্রতিষ্ঠান দুটি।

খাবারে গোলাপ-কেওড়া জল: 

চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ রেস্তোরাঁ থেকে হোটেল-সবখানেই এখন খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে গোলাপজল ও কেওড়া জল। এই মাসে নগরের চারটি রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চারটিতেই খাবারে গোলাপজল ও কেওড়া জলের অস্তিত্ব পেয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাবারে গোলাপজল ও কেওড়া জল ব্যবহার করায় জিইসি মোড়ের কাচ্চি ডাইন রেস্তোরাঁকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকার হান্ডি ও ধাবা নামের দুটি রেস্তোরাঁকেও একই অপরাধে আড়াইলাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার। সর্বশেষ গত রোববার নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ওরশ বিরিয়ানি ও মেজ্জান নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে একই কারণে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

গোলাপ-কেওড়া জলের পুরোটাই রাসায়নিক:

গোলাপজল-কেওড়া জল কোনোভাবেই খাবারে ব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের নিরাপদ খাদ্য অফিসার মোহাম্মদ ফারহান ইসলাম।  

তিনি বলেন, খাবারের মধ্যে যদি ফুড এডিটিভস (খাদ্য সংযোজন) যুক্ত করতে হয় তাহলে সেটি হতে হবে অনুমোদিত।  কিন্তু গোলাপজল-কেওড়া জল কোনোভাবেই খাবারের জিনিস নয়, এটি ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এটা খাবারে ব্যবহার করছেন গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে। মানুষও সেসব খেয়ে মনে করছেন-‘আহ কি সুগন্ধি, বাবুর্চিটা দারুণ রান্না করেন’। কিন্তু তারা যদি জানতো এটার ক্ষতিকর দিক-তাহলে মুখেও নিতেন না। এটা পুরোটাই বিভিন্ন রাসায়নিকের মিশেল। আর এটার গায়েও তাই লেখা থাকে।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমাদের নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জরিমানার পাশাপাশি সর্তকও করা হয়। এমনও প্রতিষ্ঠান আছে যাদের কয়েকবাজার সর্তক করা হয়েছে। এরপরেও জরিমানা করা হয়েছে। ভোক্তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের অভিযান পরিচালিত হয়। এরমধ্যে বেশি অভিযোগ হোটেল রেস্তোরাঁর। তবে, ইদানীং বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র ক্রয়ে মূল্যের হেরফের নিয়ে অভিযোগ বেশি পড়ছে।

কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ভোক্তারা টাকা দিয়ে খাবার খান। কিন্তু রেস্তোরাঁ মালিকেরা তাদের খাওয়াচ্ছেন গোলাপজল-কেওড়া জল নামের রাসায়নিক। এভাবে বিষ খাইয়ে ভোক্তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছেন তাঁরা। এটি শুধু খাদ্য নিরাপত্তা আইন লঙ্ঘন নয়, মানবাধিকার লঙ্ঘনও।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন নওশাদ বলেন, আমাদের ভুলত্রুটি থাকলে অবশ্যই জরিমানা করবে। কিন্তু আমরা রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরাও তো দেশের রাজস্ব খাতে অবদান রাখছি। অনেকসময় যেটা নয় সেটিও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়। এতে অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।

বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।