ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ কার্তিক ১৪৩২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিলুপ্তির পাঁচ মাস পরও হয়নি বিএনপির নতুন কমিটি, তৃণমূলে ক্ষোভ

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:০০, অক্টোবর ২৩, ২০২৫
বিলুপ্তির পাঁচ মাস পরও হয়নি বিএনপির নতুন কমিটি, তৃণমূলে ক্ষোভ ...

চট্টগ্রাম: আট উপজেলা, ছয় পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয় ২০২৫ সালের ২২ মে, দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায়। বিলুপ্তির পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি গঠন করা হয়নি।

এতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

কমিটি না হওয়ায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

উপজেলা ও পৌরসভায় অভিভাবকশূন্য থাকায় সময়মতো কার্যকর সিদ্ধান্তও নেওয়া যাচ্ছে না। নেতা-কর্মীরা বলছেন, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি দ্রুত না হলে নেতৃত্ব সংকটের প্রভাব পড়তে পারে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।

দলীয় নেতা-কর্মীরা আরও জানিয়েছেন, কমিটি ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের পক্ষে কাজ করতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। কমিটি ছাড়া কেউ কারও আনুগত্যে কাজ করবে না, নির্বাচনী সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তাই নির্বাচন সামনে রেখে কমিটি গঠন জরুরি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২২ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় জেলার আওতাধীন সব মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও গতিশীলতা ফেরানোর অংশ হিসেবে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর থেকে এসব ইউনিট কমিটি ছাড়াই চলছে দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যক্রম। তিন দফায় আগ্রহী নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করে জেলা বিএনপি। তাতে মোট ১ হাজার ৮৯৭টি আবেদন জমা পড়ে। গত আগস্টের শেষের দিকে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১ হাজার ৮৯৭টি আবেদনকারীর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করে জানায়, তালিকাভুক্ত কারও বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ, সংগঠনবিরোধী কার্যকলাপ বা গুরুতর অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানানোর সুযোগ দেওয়া হবে।

তালিকা প্রকাশের পর প্রায় দেড় শতাধিক অভিযোগ জমা পড়ে জেলা বিএনপির কাছে। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে জেলার আওতাধীন ৮ উপজেলা, ৬ পৌরসভা ও ১ সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করবে জেলা কমিটি।  

এদিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আওতাধীন উপজেলা, পৌরসভা ও সাংগঠনিক ইউনিটের প্রস্তাবিত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আহ্বায়ক কমিটি সীমিত আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর ঘোষিত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হবে। নতুন কমিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি গঠন করবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের কথা বলে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল, কিন্তু পাঁচ মাস পার হলেও কোনো কমিটি হয়নি। দলীয় পরিচয় ছাড়া সাংগঠনিক কাজে গতি আসে না। গত সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অনেকে এখনো পদের আশায় রয়েছেন।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, প্রথম পর্যায়ে সীমিত আকারে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে। পরবর্তী সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা হবে। পরে সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি গঠন করা হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিস মিয়া বলেন, গত ২০ অক্টোবর আমাদের বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের প্রধান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে কমিটি দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কমিটি দিচ্ছেন না। অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে আলোচনা করবেন। তাঁর সম্মতি নিয়েই কমিটি গঠন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, নতুন কমিটিতে দলের ত্যাগী, নির্যাতিত ও যোগ্য নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। আমরা উপজেলা ও পৌরসভার প্রস্তাবিত কমিটি জমা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বর্তমানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন ঘোষণা নিয়ে কাজ করছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদের তিনশ আসনের মনোনয়ন ঘোষণা করা হবে। তাই চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটি অক্টোবর মাসে হচ্ছে না।  

এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।